১৪ আগস্ট, ২০১৪

তাহারেই পড়ে মনে - চিন্ময়ের ইতিকথা

আজ বসন্ত! হা কবির মত আমার মনেও আজ কোন আনন্দ নেই। আছে শুধু শূন্যতার হাহাকার অার একটা অস্পৃহ্য বুকচেরা নিশ্চুপ অার্তনাদ। ফিরে দেখি আগের বসন্ত। তন্ময় হয়ে যাই। ভাবতে থাকি। ভাবতেই ভালো লাগে। যেন এক কল্পনার আল্পনায় নিজের প্রতিটি নক্সা জলরং দিয়ে এঁকে দেওয়া। পুরনো দিনের ফ্ল্যাশব্যাক করতে ভালোই লাগে ।মনে পড়ে সেই দিনগুলো........ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি অামি । আমি অমিও। দেবাশীষ রায় অমিও। আমার পড়তে খুব ভাল লাগে।না না... পড়ার বই মানে পাঠ্যবই নয়। গল্পের। পড়তে হেব্ভি লাগে। আমি প্রতিদিন বাসার তিনতালার ছাদে উঠে বসে বসে গল্পের বই পড়ি। একটা অন্যরকম ভালো লাগে। তখন বসন্ত ছিলো। একদিন দেখি পাশের ছাদে একটা ছেলে ডাম্বেল মারছে। দুটো ছাদের দূরত্ব ছিল এক হাত। চোরাচোরা চেহারায় তাকে পিছন দিক থেকে দেখতে লাগলাম।হঠাৎ করেই সে আমার দিকে ঘুরল। আমি
তাড়াতাড়িই বইয়ের দিকে নজর দিলাম। আরও পাঁচ মিনিট পর সে
দৃষ্টি আকর্ষনের একটা কাশি দিল। আমি মুখ তুলে তাকালাম। দেখলাম
লৌহকঠিন এক চেহারা তবে চোখে নমনীয়তা আছে।
সে বললঃ আমি রাজেশ। রাজেশ চন্দ্র,পাল।তুমি?
আমিঃ আমার নাম শিমুল। তবে সার্টিফিকেটে আছে দেওয়া দেবাশীষ রায় অমিও। তা কি করেন?
রাজেশঃ এইতো ছোটখাট একটা চাকরি। তুমি?
আমিঃ স্টুডেন্ট।
এভাবেই পরিচয় তাদের। তা ভাবতেই কেমন লাগে! তারপর, তারপর তো আরও ভালোলাগা। প্রতিদিন সে একই সময়ে গেঞ্জি খুলে প্যাকটিস করত আর আমি রাক্ষসেরর মত তাকে গিলতাম। মন বলত এটা ঠিক না। আর আবেগ বলত এটাই ঠিক! আর যখন ঠিক এই টানাপোড়ন সম্পর্কের মাঝে ঠিক একদিন মা বলল ঃ যাতো একটু মরিচ ভাঙিয়ে আন! আমি অগ্যতা মার প্রতি মনে মনে যথেষ্ট বিরক্তি ও কপালে
বিরক্তিরর ভাঁজ নিয়ে রাস্তায় বেরুলাম।তখন দেখি রাজেশ দা।ডাকলাম।
বললাম ঃ মরিচ মহলের ভাঙ্গানো মেশিনটার কাছে একটু লিফট দিবে? রাজেশ বলল" চল" আমার তো ভালই লাগছে চিন্তা করছে। কিন্তু হোন্ডায় বসার পর বুঝছি সমস্যা টা আসলে ব্যাগের। তাই ঠিকমতো বসতে পারছি না। কিন্তু কি করা! বসে ভালোই লাগছিল। একটা অন্যরকম ভালোলাগা। তারপর সে আমায় বললঃ
তুমি ভাঙাও আমি এদিকেই আছি। তারপর ভাঙানো শেষ হলে আমি াবার তার বাইকে বসলাম। একদলছুট ইচ্ছেরা মনে ঘুরছে। আর তারপর আমি যথাসম্ভব শান্ত রইলাম।এভাবে তার সাথে কিছুটা সময় কাটত কেন জানিনা ভাল লাগত। তার সাথে আরও সুন্দর লাগত তার মায়াময় চোখ।
১৪ ই ফ্রেব্রুয়ারি। সকাল থেকে কেমন একটা গুমোট ভাব। আজ সবাই ঘুরতে বেররুবে। তাই আমিও বেরুলাম। বেরিয়েই দেখি রাজেশ দা। তার হাতে েকগুচ্ছ লাল গোলাপ। তাকে অরন্যের দেবদূতের মত লাগছিল। সে বলল ঃ চল তোমায় নিয়ে আজ ঘুরি।অনেক দূর যাই। আমিও মন্ত্রমুগ্ধেরর মত তার পিছনে বসে থাকলাম। চারদিকে অসংখ্য গাছপালা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। প্রায় সাত কিমি যাওয়ার পর তার মোটটর সাইকেল নষ্ট হয়ে গেল। আর কি করা পাশে অরন্য।আর অরন্যের পাশ ধরে হাটছি। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ডাক! শিমুল!
দেখি সে একতোড়া ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে সে আমার কাছে আসল। বললঃ এই ফুলগুলো তোমার জন্য। আমি নির্বাকের মত ফুলগুলো নিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। বসন্ত বাতাসটা এই মুর্হুর্তে মনকে বেশ আন্দোলিত করেছে। কিছু বলবে ভেবেছিলাম কিন্তু না বলেনি। সে হয়তো জানে না যে আমি এটাকে কিভাবে নিব কেউ বলেনি তবে বুঝতে পেররেছিল। একটা বাস দিয়ে এসে পড়লাম আর মোটর সাইকেল ট্রাকে করে পাঠিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যা! সারাদিনের কথা মনে করছি। হোন্ডায় আলতো হাতের ছোঁয়া কোমড়ে, ফুল নেওয়া, বসে থাকা পাশাপাশি সারাটা সময়। নির্বাক ভাবে।
আমি ভাবলাম বিকেলে তাকে কিছু বলব। সেদিন বিকেলে ছাদে বসে থাকি! সে আসেনি! তারপর আরও দুদিন অপেক্ষার পর তাদের বাসসায় গিয়ে শুনলামঃ সে কানাডা থেকে কিছুদিন বেড়াতে এসেছিল। নিরীহ ও প্রচন্ড লাজুক। সে ১৫ তারিখেই চলে গেছে। আমি আর কিছছু বলিনি। প্রতিদিন ছাদে বসে থাকি এক উদাসী চিত্তে। প্রতিক্ষায় থাকি কবে আসবে। আর প্রত্যেক দিন শেষে একটা কথাই মনে পড়ে
" তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনমতে।"

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?