ঘটনা ১.
- অনেকদিন তো চ্যাট করলাম, কথাও হলো ফোনে। আসো একদিন দেখা করি।
- আমাকে দেখে তোমার ভালো লাগবে না সুজন।
- অনিক, আমি ভালোবেসেছি তোমার মনকে। তোমার চেহারাকে নয়। তুমি দেখতে যেমনই হও না কেন তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।
- সবাই তাই বলে প্রথমে।
- আমি কি সবার মতো? তাই মনে হয় তোমার?
- আসলে আমার খুব ভয় হয়।
- বাদ দাও তো! দেখা কবে করবে বলো।
- বলো কবে করতে চাও?
- শুক্রবার বিকেলে?
- আচ্ছা।
ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়, কিন্তু অনিক এমনই এক ন্যাড়া যে বারবার বেল তলায় গিয়েও তার শিক্ষা হয় না। জানে, তার কম উচ্চতা আর কালো গায়ের রঙের কারনে কেউই তাকে পছন্দ করে না তারপরও কেন যেন তার শিক্ষা হয় না। কেউ একটু আদর মাখা, ভালোবাসা মাখা কথা বললেই সে পটে যায়। প্রতিবারই মনে হয় এবার বুঝি সে এমন কাউকে পাবে যে তার শরীর নয়, তার মনটাকে ভালোবাসবে। কিন্তু সবাই এক। ছবি দেখার পর কেউই আর দেখা করতে চায় না। সবার ভালবাসাই কেমন যেন কর্পূরের মত উড়ে যায় এক নিমেষে। কিন্তু সুজন যেন আলাদা। তার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় আজ প্রায় তিন মাস হবে। এই তিন মাসের কথায় সুজনকে তার অন্যরকম মনে হয়েছে। তেমনটি, ঠিক যেমনটি সে চায়। যে কিনা তার মনকে প্রাধান্য দেবে, শারীরিক সৌন্দর্যকে নয়। সুজনকে সে অনেকবার বলেছে তার একটা ছবি দেখতে, তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু সুজনের সেই এক কথা, “তুমি দেখতে যেমনই হও আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি ভালোবাসি তোমার মনকে, তোমার শরীরকে নয়।” এই একটা কথা গত তিন মাসে না হলেও কমপক্ষে পাঁচবার শুনেছে অনিক। তাই নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে অনেকটাই। এমন কেউ তো আছে যে তার মনকে প্রাধান্য দেবে।
প্রিয় মানুষের সাথে সাক্ষাতের দিন নিজেকে সুন্দর করে সাজানোটা মানুষের স্বভাবগত। অনিকও তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, যেন সুজনের সামনে তাকে একটু হলেও সুন্দর দেখায়। আর প্রথম দেখা বলে কথা। তাই নিউ মার্কেটের অনেকগুলো দোকান ঘুরে নিজের জন্য একটা নীল জিন্স কেনে সে। সাথে পড়বে ঈদে কেনা কে ক্রাফট-এর সাদা ফতুয়াটা। সাদা আর নীলে যে তাকে মানিয়ে যায় এটা সে জেনেছে ঘরে থাকা দাদার আমলের আয়নার কাছ থেকে। তাই শুক্রবারে জুম্মার পর খাওয়া দাওয়া করে নিজেকে সাজিয়ে একদম পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে থাকে সে। বিকেল পাঁচটায় দেখা হবে তার সুজনের সাথে। প্রথম দেখা। ভাবতেই একটা শিহরণ অনুভব করে সে নিজের শরীরে।
বিকেল চারটা নাগাদ চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে হাজির অনিক। লেট করলে পরে যদি আবার সুজন মাইন্ড করে! প্রায় পৌনে এক ঘন্টা নিজ মনে হেঁটে হেঁটে নিজের অনাগত ভবিষ্যৎ ভালবাসার স্বপ্নে বিভোর হতে থাকে সে। পাঁচটা বাজার পনেরো মিনিট আগে সুজনকে ফোন দেয়-
- হ্যালো,
- হ্যাঁ, কোথায় তুমি?
- আমি তো চলে এসেছি। তুমি কতদূর?
- এইতো আর বিশ মিনিটের মত লাগবে।
- আচ্ছা আসো।
- আচ্ছা তোমাকে চিনবো কিভাবে?
- আমি একটা সাদা ফতুয়া আর নীল জিন্স পরে আছি। একদম ব্রিজের সামনেই।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এসে ফোন দিচ্ছি।
বিশ মিনিটের সময় কাটতে চল্লিশ মিনিটের মত লাগে। সুজনের ফোন না পেয়ে অনিকই আবার ফোন দেয় সুজনকে।
- হ্যালো, কই তুমি? আরো দেরি হবে?
- ইয়ে মানে, আমি বাস থেকে নামার পরই আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা। সে জোর করে ধরে নিয়ে গেল। তাই আজ আর দেখা করতে পারছি না অনিক। আরেকদিন দেখা হবে। ওকে?
আরেকদিন কবে দেখা হবে সেটা না জানিয়েই ফোনটা কেটে দিল সুজন। এরপর থেকে সুজনের নাম্বারে কল দিয়ে সুইচ অফ পেয়েছে অনিক। বাসায় ফিরে দেখে সুজন ফেইসবুকেও ব্লক করে দিয়েছে তাকে।
ঘটনা ২.
- আমাকে তোমার ভালো লেগেছে রাসেল?
- খুউউউব!
- সত্যি?
- এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি। আর আমাকে?
- অনেক।
- তাহলে কি আমরা একদিন দেখা করতে পারি?
- হুম।
- কবে?
- শুক্রবার? বিকেল পাঁচটায়।
- কই দেখা করতে চাও?
- ধানমন্ডি লেক?
- ওকে।
ছবি না দেখে দেখা করার মত ভুল আর সুজন করে না এখন। একবার করেই শিক্ষা হয়ে গেছে। কি একটা কাইল্লা ভুত এসেছিলো, বাপরে বাপ! পরেছিল আবার সাদা ফতুয়া। রুচি কিরে! খ্যাত একটা।
যাক, রাসেল অনেক সুন্দর দেখতে। আর সেও তো দেখতে খারাপ না। রাসেল তাকে পছন্দও করেছে। তাই এবার আর ভুল হবে না। রাসেলের সাথেই একটা রিলেশনে চলে যাবে তাহলে।
নিজের পছন্দের লাল টি শার্ট আর কালো জিন্স পরে নেয় সুজন। তার ফরসা-লম্বা শরীরে খুব সুন্দর মানায় লাল টি শার্টটা। যথা সময়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে হাজির। কিছুক্ষন পর রাসেলও চলে আসে। দুজনের বিকেলটা খুব সুন্দর কাটে।
মাস খানেক পর,
- আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না রাসেল। প্লিজ একবার একটু বোঝার চেষ্টা করো।
- তুমি বোঝার চেষ্টা করো সুজন। আমি তোমাকে নিয়ে কিছু ভাবতে পারছি না।
- প্লিজ রাসেল... আমি কি তোমার যোগ্য নই?
- না।
- কি? তাহলে দেখা করেছিলে কেন? কেন বলেছিলে যে আমাকে খুব ভাল লাগে তোমার?
- তখন কি বলেছি ভুলে গেছি। আর তোমার সাথে আমার যায় না বুচ্ছো?
- মানে?
- মানে হলো তোমার মত গাঁইয়া একটা ছেলের সাথে রিলেশনে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না
- আমি কি দেখতে খারাপ?
- মাকাল ফল দেখেছো? উপরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট। তুমি হচ্ছো ঠিক তাই। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলো, ইয়াক! হাউ ডিসগাসটিং! আর তোমার ইংলিশ শুনলে তো আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।
- রাসেল! কি বলছো এসব? আচ্ছা মানলাম আমি তোমার মত স্মার্ট না, কিন্তু আমি তো তোমাকে মন দিয়ে ভালবাসি। আর মনের কি কোনই মূল্য নেই তোমার কাছে?
- মন ধুয়ে কি পানি খাবো নাকি? আজব তো! আমার কাছে একটা মানুষের ওভারঅল স্মার্টনেসটা ইম্পরট্যান্ট। তোমার মত খালি লাল্টু মার্কা চেহারা দিয়ে আমার চলবে না। এমনিতেই তোমাকে দেখানোর পর ফ্রেন্ডদের সামনে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। আচ্ছা শোন, ঘুম পাচ্ছে। ফোনটা রাখি। আর শোন, এরপর থেকে আমাকে আর ফোন দিও না।
টুট টুট টুট টুট... মুখের ওপর ফোনটা রেখে দেয় রাসেল।
ঘটনা ৩.
- হ্যালো অর্ক, কি করো?
- শুয়ে আছি।
- একা? না কারো সাথে?
- তুমি নেই কার সাথে শুয়ে থাকি বলো?
- আমি আসলে কি করতে?
- শুয়ে শুয়ে গল্প করতাম তোমার সাথে।
- সত্যি তো? নাকি আবার অন্য কোন মতলব আছে?
- না না, অন্য আর কোন মতলব নেই। তুমি না চাইলে আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না। আসো না! থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর থেকেই মনটা যেন কেমন কেমন করছে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। আসো না!
- এখন?
- এখন না তো কখন?
- আচ্ছা আসছি।
অর্কর এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের বিজনেস। প্রায়ই দেশের বাইরে যেতে হয়। তাই চাইলেও সব সময় দেখা করা যায় না অর্কর সাথে। অর্কর সাথে রাসেলের দেখা এক পার্টিতে। অর্ককে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার বয়স ৩০। কি সুন্দর লম্বা, ফরসা, জিম করা পেটানো শরীর। যেকোন ছেলেকে আকর্ষন করার জন্য যথেষ্ট।পার্টিতে অর্কই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। এ নিয়ে রাসেলের অহংকারের শেষ নেই। সে যে কম যায় না কোন দিক থেকেই সেটা তার বন্ধুদের সামনে খুব ভালভাবেই প্রমান করা গেছে সেই পার্টিতে। সুজনের মত গাইয়ার সাথে দেখা করানোর পর তার বন্ধুরা কম অপমান করেনি তাকে। আনকালচার্ড খ্যাত একটা!
যাইহোক, সেদিনই ফোন নাম্বারের আদান প্রদান অর্কর সাথে। তারপর থেকেই প্রতিদিন কথা আর এস এম এস বিনিময় শুরু। আজ প্রায় দেড় মাসের মত চলছে।
গুলশানের ফ্ল্যাটে অর্ক একাই থাকে। বাবা মা দেশের বাইরে থাকে। তাই অর্কর সাথে রোমান্স করার সুযোগটা অনেক বেশি। অর্ক অনেকদিন থেকেই চাইছে রাসেলকে আপন করে পেতে। কিন্তু রাসেলের সেই এক কথা, “তুমি যদি আমাকে সত্যিকারভাবে ভালবাসো তবেই আমাকে আপন করে পাবে, তার আগে নয়” এই কথাতে অর্ককে ঝুলিয়ে রেখেছে এতোদিন। তাই বলে যে রাসেলের ইচ্ছে করে না অর্কর শরীরের ছোঁয়া পেতে তা কিন্তু নয়।তাই আজ আর নিজেকে আটকাতে পারলো না সে। ছুটে গেলো অর্কর ফ্ল্যাটে। যা হবার হবে।
বেল চাপতেই অর্ক দরজা খুলে দিল, যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল। রাসেলকে নিয়ে সোজা ঢুকল তার বেডরুমে। রুমে ঢুকেই প্রচন্ড অবাক হয় রাসেল।
- এরা কারা?
- আমার বিজনেস পার্টনার। গতকালই এসেছে থাইল্যান্ড থেকে।
- এরা এখানে কেন? আর এরা যদি এখানেই থাকে, তাহলে আমাকে ডেকেছো কেন?
- ওদের খুব ইচ্ছা বাংলাদেশি মাল চেখে দেখার। তাই তোমাকে ডেকেছি।
- মানে?
- মানে খুব সোজা। এদের মন রঞ্জন করে দাও। ভালো পয়সা পাবে।
- অর্ক, তুমি জানো না আমি তোমাকে ভালোবাসি?
- হা হা হা! তোমার ভালোবাসার খেতা পুড়ি। তোমার মত টাইট মাল দিয়ে নিজের আর আমার বিজনেস পার্টনারদের মন রঞ্জন করাই আমার উদ্দেশ্য।
- কি?
- হ্যাঁ। এখন বলো কাপড় কি নিজেই খুলবে নাকি ওই থাইগুলোকে বলবো এগিয়ে আসতে।
পরের কাহিনী আর খুলে বলার প্রয়োজন আছে কি?
অভিশাপ কখনো মুখে উচ্চারণ করে দিতে হয় না। মনে প্রচন্ড আঘাত পেলে মনের অজান্তেই মন থেকে চলে আসে অভিশাপ। আর নিষ্পাপ মনের ভালোবাসাকে অপমান করায় অহঙ্কারীরা হয় অভিশপ্ত।
- অনেকদিন তো চ্যাট করলাম, কথাও হলো ফোনে। আসো একদিন দেখা করি।
- আমাকে দেখে তোমার ভালো লাগবে না সুজন।
- অনিক, আমি ভালোবেসেছি তোমার মনকে। তোমার চেহারাকে নয়। তুমি দেখতে যেমনই হও না কেন তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।
- সবাই তাই বলে প্রথমে।
- আমি কি সবার মতো? তাই মনে হয় তোমার?
- আসলে আমার খুব ভয় হয়।
- বাদ দাও তো! দেখা কবে করবে বলো।
- বলো কবে করতে চাও?
- শুক্রবার বিকেলে?
- আচ্ছা।
ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়, কিন্তু অনিক এমনই এক ন্যাড়া যে বারবার বেল তলায় গিয়েও তার শিক্ষা হয় না। জানে, তার কম উচ্চতা আর কালো গায়ের রঙের কারনে কেউই তাকে পছন্দ করে না তারপরও কেন যেন তার শিক্ষা হয় না। কেউ একটু আদর মাখা, ভালোবাসা মাখা কথা বললেই সে পটে যায়। প্রতিবারই মনে হয় এবার বুঝি সে এমন কাউকে পাবে যে তার শরীর নয়, তার মনটাকে ভালোবাসবে। কিন্তু সবাই এক। ছবি দেখার পর কেউই আর দেখা করতে চায় না। সবার ভালবাসাই কেমন যেন কর্পূরের মত উড়ে যায় এক নিমেষে। কিন্তু সুজন যেন আলাদা। তার সাথে ফেইসবুকে পরিচয় আজ প্রায় তিন মাস হবে। এই তিন মাসের কথায় সুজনকে তার অন্যরকম মনে হয়েছে। তেমনটি, ঠিক যেমনটি সে চায়। যে কিনা তার মনকে প্রাধান্য দেবে, শারীরিক সৌন্দর্যকে নয়। সুজনকে সে অনেকবার বলেছে তার একটা ছবি দেখতে, তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু সুজনের সেই এক কথা, “তুমি দেখতে যেমনই হও আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমি ভালোবাসি তোমার মনকে, তোমার শরীরকে নয়।” এই একটা কথা গত তিন মাসে না হলেও কমপক্ষে পাঁচবার শুনেছে অনিক। তাই নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে অনেকটাই। এমন কেউ তো আছে যে তার মনকে প্রাধান্য দেবে।
প্রিয় মানুষের সাথে সাক্ষাতের দিন নিজেকে সুন্দর করে সাজানোটা মানুষের স্বভাবগত। অনিকও তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, যেন সুজনের সামনে তাকে একটু হলেও সুন্দর দেখায়। আর প্রথম দেখা বলে কথা। তাই নিউ মার্কেটের অনেকগুলো দোকান ঘুরে নিজের জন্য একটা নীল জিন্স কেনে সে। সাথে পড়বে ঈদে কেনা কে ক্রাফট-এর সাদা ফতুয়াটা। সাদা আর নীলে যে তাকে মানিয়ে যায় এটা সে জেনেছে ঘরে থাকা দাদার আমলের আয়নার কাছ থেকে। তাই শুক্রবারে জুম্মার পর খাওয়া দাওয়া করে নিজেকে সাজিয়ে একদম পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে থাকে সে। বিকেল পাঁচটায় দেখা হবে তার সুজনের সাথে। প্রথম দেখা। ভাবতেই একটা শিহরণ অনুভব করে সে নিজের শরীরে।
বিকেল চারটা নাগাদ চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে হাজির অনিক। লেট করলে পরে যদি আবার সুজন মাইন্ড করে! প্রায় পৌনে এক ঘন্টা নিজ মনে হেঁটে হেঁটে নিজের অনাগত ভবিষ্যৎ ভালবাসার স্বপ্নে বিভোর হতে থাকে সে। পাঁচটা বাজার পনেরো মিনিট আগে সুজনকে ফোন দেয়-
- হ্যালো,
- হ্যাঁ, কোথায় তুমি?
- আমি তো চলে এসেছি। তুমি কতদূর?
- এইতো আর বিশ মিনিটের মত লাগবে।
- আচ্ছা আসো।
- আচ্ছা তোমাকে চিনবো কিভাবে?
- আমি একটা সাদা ফতুয়া আর নীল জিন্স পরে আছি। একদম ব্রিজের সামনেই।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এসে ফোন দিচ্ছি।
বিশ মিনিটের সময় কাটতে চল্লিশ মিনিটের মত লাগে। সুজনের ফোন না পেয়ে অনিকই আবার ফোন দেয় সুজনকে।
- হ্যালো, কই তুমি? আরো দেরি হবে?
- ইয়ে মানে, আমি বাস থেকে নামার পরই আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা। সে জোর করে ধরে নিয়ে গেল। তাই আজ আর দেখা করতে পারছি না অনিক। আরেকদিন দেখা হবে। ওকে?
আরেকদিন কবে দেখা হবে সেটা না জানিয়েই ফোনটা কেটে দিল সুজন। এরপর থেকে সুজনের নাম্বারে কল দিয়ে সুইচ অফ পেয়েছে অনিক। বাসায় ফিরে দেখে সুজন ফেইসবুকেও ব্লক করে দিয়েছে তাকে।
ঘটনা ২.
- আমাকে তোমার ভালো লেগেছে রাসেল?
- খুউউউব!
- সত্যি?
- এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি। আর আমাকে?
- অনেক।
- তাহলে কি আমরা একদিন দেখা করতে পারি?
- হুম।
- কবে?
- শুক্রবার? বিকেল পাঁচটায়।
- কই দেখা করতে চাও?
- ধানমন্ডি লেক?
- ওকে।
ছবি না দেখে দেখা করার মত ভুল আর সুজন করে না এখন। একবার করেই শিক্ষা হয়ে গেছে। কি একটা কাইল্লা ভুত এসেছিলো, বাপরে বাপ! পরেছিল আবার সাদা ফতুয়া। রুচি কিরে! খ্যাত একটা।
যাক, রাসেল অনেক সুন্দর দেখতে। আর সেও তো দেখতে খারাপ না। রাসেল তাকে পছন্দও করেছে। তাই এবার আর ভুল হবে না। রাসেলের সাথেই একটা রিলেশনে চলে যাবে তাহলে।
নিজের পছন্দের লাল টি শার্ট আর কালো জিন্স পরে নেয় সুজন। তার ফরসা-লম্বা শরীরে খুব সুন্দর মানায় লাল টি শার্টটা। যথা সময়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে হাজির। কিছুক্ষন পর রাসেলও চলে আসে। দুজনের বিকেলটা খুব সুন্দর কাটে।
মাস খানেক পর,
- আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না রাসেল। প্লিজ একবার একটু বোঝার চেষ্টা করো।
- তুমি বোঝার চেষ্টা করো সুজন। আমি তোমাকে নিয়ে কিছু ভাবতে পারছি না।
- প্লিজ রাসেল... আমি কি তোমার যোগ্য নই?
- না।
- কি? তাহলে দেখা করেছিলে কেন? কেন বলেছিলে যে আমাকে খুব ভাল লাগে তোমার?
- তখন কি বলেছি ভুলে গেছি। আর তোমার সাথে আমার যায় না বুচ্ছো?
- মানে?
- মানে হলো তোমার মত গাঁইয়া একটা ছেলের সাথে রিলেশনে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না
- আমি কি দেখতে খারাপ?
- মাকাল ফল দেখেছো? উপরে ফিটফাট আর ভেতরে সদরঘাট। তুমি হচ্ছো ঠিক তাই। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলো, ইয়াক! হাউ ডিসগাসটিং! আর তোমার ইংলিশ শুনলে তো আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।
- রাসেল! কি বলছো এসব? আচ্ছা মানলাম আমি তোমার মত স্মার্ট না, কিন্তু আমি তো তোমাকে মন দিয়ে ভালবাসি। আর মনের কি কোনই মূল্য নেই তোমার কাছে?
- মন ধুয়ে কি পানি খাবো নাকি? আজব তো! আমার কাছে একটা মানুষের ওভারঅল স্মার্টনেসটা ইম্পরট্যান্ট। তোমার মত খালি লাল্টু মার্কা চেহারা দিয়ে আমার চলবে না। এমনিতেই তোমাকে দেখানোর পর ফ্রেন্ডদের সামনে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। আচ্ছা শোন, ঘুম পাচ্ছে। ফোনটা রাখি। আর শোন, এরপর থেকে আমাকে আর ফোন দিও না।
টুট টুট টুট টুট... মুখের ওপর ফোনটা রেখে দেয় রাসেল।
ঘটনা ৩.
- হ্যালো অর্ক, কি করো?
- শুয়ে আছি।
- একা? না কারো সাথে?
- তুমি নেই কার সাথে শুয়ে থাকি বলো?
- আমি আসলে কি করতে?
- শুয়ে শুয়ে গল্প করতাম তোমার সাথে।
- সত্যি তো? নাকি আবার অন্য কোন মতলব আছে?
- না না, অন্য আর কোন মতলব নেই। তুমি না চাইলে আমি তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না। আসো না! থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর থেকেই মনটা যেন কেমন কেমন করছে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। আসো না!
- এখন?
- এখন না তো কখন?
- আচ্ছা আসছি।
অর্কর এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের বিজনেস। প্রায়ই দেশের বাইরে যেতে হয়। তাই চাইলেও সব সময় দেখা করা যায় না অর্কর সাথে। অর্কর সাথে রাসেলের দেখা এক পার্টিতে। অর্ককে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার বয়স ৩০। কি সুন্দর লম্বা, ফরসা, জিম করা পেটানো শরীর। যেকোন ছেলেকে আকর্ষন করার জন্য যথেষ্ট।পার্টিতে অর্কই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে। এ নিয়ে রাসেলের অহংকারের শেষ নেই। সে যে কম যায় না কোন দিক থেকেই সেটা তার বন্ধুদের সামনে খুব ভালভাবেই প্রমান করা গেছে সেই পার্টিতে। সুজনের মত গাইয়ার সাথে দেখা করানোর পর তার বন্ধুরা কম অপমান করেনি তাকে। আনকালচার্ড খ্যাত একটা!
যাইহোক, সেদিনই ফোন নাম্বারের আদান প্রদান অর্কর সাথে। তারপর থেকেই প্রতিদিন কথা আর এস এম এস বিনিময় শুরু। আজ প্রায় দেড় মাসের মত চলছে।
গুলশানের ফ্ল্যাটে অর্ক একাই থাকে। বাবা মা দেশের বাইরে থাকে। তাই অর্কর সাথে রোমান্স করার সুযোগটা অনেক বেশি। অর্ক অনেকদিন থেকেই চাইছে রাসেলকে আপন করে পেতে। কিন্তু রাসেলের সেই এক কথা, “তুমি যদি আমাকে সত্যিকারভাবে ভালবাসো তবেই আমাকে আপন করে পাবে, তার আগে নয়” এই কথাতে অর্ককে ঝুলিয়ে রেখেছে এতোদিন। তাই বলে যে রাসেলের ইচ্ছে করে না অর্কর শরীরের ছোঁয়া পেতে তা কিন্তু নয়।তাই আজ আর নিজেকে আটকাতে পারলো না সে। ছুটে গেলো অর্কর ফ্ল্যাটে। যা হবার হবে।
বেল চাপতেই অর্ক দরজা খুলে দিল, যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল। রাসেলকে নিয়ে সোজা ঢুকল তার বেডরুমে। রুমে ঢুকেই প্রচন্ড অবাক হয় রাসেল।
- এরা কারা?
- আমার বিজনেস পার্টনার। গতকালই এসেছে থাইল্যান্ড থেকে।
- এরা এখানে কেন? আর এরা যদি এখানেই থাকে, তাহলে আমাকে ডেকেছো কেন?
- ওদের খুব ইচ্ছা বাংলাদেশি মাল চেখে দেখার। তাই তোমাকে ডেকেছি।
- মানে?
- মানে খুব সোজা। এদের মন রঞ্জন করে দাও। ভালো পয়সা পাবে।
- অর্ক, তুমি জানো না আমি তোমাকে ভালোবাসি?
- হা হা হা! তোমার ভালোবাসার খেতা পুড়ি। তোমার মত টাইট মাল দিয়ে নিজের আর আমার বিজনেস পার্টনারদের মন রঞ্জন করাই আমার উদ্দেশ্য।
- কি?
- হ্যাঁ। এখন বলো কাপড় কি নিজেই খুলবে নাকি ওই থাইগুলোকে বলবো এগিয়ে আসতে।
পরের কাহিনী আর খুলে বলার প্রয়োজন আছে কি?
অভিশাপ কখনো মুখে উচ্চারণ করে দিতে হয় না। মনে প্রচন্ড আঘাত পেলে মনের অজান্তেই মন থেকে চলে আসে অভিশাপ। আর নিষ্পাপ মনের ভালোবাসাকে অপমান করায় অহঙ্কারীরা হয় অভিশপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন