২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

লাইফ উইদাইট লাভ – ১০

মাথার ভেতরে এক অচেনা অনুভূতি সুড়সূড়ি দিয়ে যাচ্ছে আমায়। দীপ্ত ভাইয়াকে আমার অন্যরকম ভালো লাগছে। কি রকম ভালো! আমি নিজেই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে তার কথা ভাবতে ভালো লাগছে। দুপুরে খাওয়ার পর থেকে তার কথা ভাবছি। ভাবছি তো ভাবছি। ভাবনার কোন শুরু নেই, শেষও নেই। নিজের মত করে কাহিনী সাজাচ্ছি। সেখানে মূল চরিত্রে থাকছে সে আর আমি। আজ আমাদের বাসায় পিঠা বানানো হবে। অন্যান্য সময় পিঠা বানানোর খবর শুনলে আমি আনন্দ বোধ করতাম। বিড়ালের মত চাল কোটা থেকে শুরু করে পিঠা বানানো পর্যন্ত আমি আম্মার পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করতাম। আজ কোন কিছুতেই উৎসাহ নেই। পড়ার টেবিলে বসে আছি।

কি এক প্রয়োজনে একবার বাইরে এলাম। ঢেঁকিঘরে চাল কুটছে মা, ফুফু। কাজের মেয়েটা একই ছন্দে ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছে। ফুফু মাঝে মাঝে হাত দিয়ে “নোটের” ভেতরের চাল “এলে” দিচ্ছে। মা তার পাশে বসে ছাঁকনি দিয়ে গুড়ো আলাদা করে ফেলছেন। মা বললেন, “যা তো ছোট খোকা, দোকান থেকে সের দুয়েক তেল নিয়ে আয়।” আমি রহিমকে পাঠিয়ে দিতে বললাম। এশার আজান হচ্ছে মসজিদে। এই সময় মিয়া ভাই এবং তার বন্ধু গ্রাম ঘুরে ফিরে এলেন। আমাকেও ডাকা হলো। সবাই বসেছি রান্নাঘরের দাওয়ায়। আমাদের রান্নাঘরের বারান্দা পাকা করা। উপরে গোলপাতার ছাউনি। আব্বা টিনের চাল দিতে চান। কিন্তু আম্মা রাজি হন না। আম্মা বলেন টিনের চালের রান্নাঘর অনেক বেশী গরম হয়ে যায়।

আজ তিন ধরণের পিঠা বানানো হচ্ছে। কুলি পিঠা, পান পিঠা, আর রসে ভেজানোর জন্য চিতই পিঠা। প্রথম হওয়া পিঠাটা আমার চাইই চাই। আজ আমি চাইলাম না। চুপ করে ছিলাম। মা প্রথম পিঠা টা আমাকে দিলেন। আব্বা বসেছেন বড় ঘরের দাওয়ায়। তাকে এক বাটি কুলি পিঠা দিয়ে এলাম। ভাইয়া আর দীপ্ত ভাইয়াও পিঠা খাচ্ছেন। পিঠা খাওয়ায় দীপ্ত ভাইয়ার চোখে মুখে আনন্দের রেশ ফুটে উঠছে। ভাইয়া পিঠা খেতে খেতেই বললো, আমাদের উত্তরের একটা জমি নিয়ে মামলা চলছে কয়েক বছর। ভাইয়াকে সেই কারনে আগামীকাল খুলনা টাউনে যেতে হবে। দীপ্ত ভাইয়া একটু হতাশ হলো। সেও ভাইয়ার সাথে যেতে চাইলো। ভাইয়া তাকে নিরস্ত করলো। ওখানে গিয়ে সারাদিন উকিল সাথে কথা বলতে হবে, আদালতের বারান্দায় দিন কেটে যাবে। দিন তিনেকের তো মামলা।

সকালে উঠে রসে ভেজা পিঠা খেয়েই ভাইয়া আর আব্বা ব্যাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলো। সাতটার লঞ্চে তারা খুলনা যাবে। রাতের লঞ্চে যাওয়া যেত। কিন্ত আব্বার একটু ঠান্ডার ধাঁত হয়েছে। তাই রাতে গেলেন না। কয়েকদিন স্কুলে যাওয়া হয় না। আমিও স্কুলের পথ ধরলাম। দীপ্ত ভাইয়া বললেন, বিকেলে আমার সাথে বেড়াতে যাবেন। আমার তখনি মনে হচ্ছিলো, আজ আর ইস্কুল যাওয়ার দরকার নেই। চলেন এখনি বেড়াতে যাই। অতিকষ্টে লোভ সামলালাম। ক্লাসে কোন মনযোগ দিতে পারলাম না। প্রশান্ত স্যার তো বলেই বসলেন, কোন আনারকলির কথা ভাবছো ক্লাসে বসে শুভ্র? পড়ায় মনযোগ নেই কেন!  পড়ায় ধ্যান দাও। বিকেলে ৪ টায় স্কুল ছুটি হয়। আমি দুইটাতেই শর্ট লিভ নিয়ে চলে এলাম। এসে দেখি দীপ্ত ভাইয়া দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমি তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় রইলাম।


ভাইয়া বলে গেছেন, সে আসা না পর্যন্ত আমি যেন দীপ্ত ভাইয়ার ঘরে থাকি। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নাই। সেজন্য শহরের মেহমানকে একা থাকতে দেয়া হয় না। কখন কি লাগে। আমি দীপ্ত ভাইয়া যে ঘরে থাকেন সেখানে গেলাম। দরজা হালকা ভেজানো। শব্দ না হয় এমন ভাবে দরজা খুললাম। ভাইয়া ঘুমিয়ে আছেন। আমি আস্তে করে খাঁটের কোনায় বসলাম। প্রতিটি ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে নিষ্পাপ লাগে। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ঘরের পাশের নিমগাছে একটা কোকিল পাখি ডাকছে। শীতকালে কোকিল পাখি ডাকে কেন! 

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?