২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

লাইফ উইদাউট লাভ - ১১

পানিতে বৈঠা ফেলার শব্দ হচ্ছে। নৌকা তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মাগরিবের আযান হয়ে গেছে বেশ আগে। প্রকৃতি এখন কালো চাদরে মোড়া। কিছুক্ষন আগেই আকাশের কোনার দ্বাদশীর চাঁদ উঁকি দিলো। দ্বীপ্ত ভাইয়া বসেছে নৌকার পাটাতনে। আমি গলুইতে বসে বৈঠা  বাইছি।প্লানটা দ্বীপ্ত ভাইয়ের্। ঘুম থেকে উঠে বললেন , চল নৌকা করে ঘুরে আসি। এ তো আর শহর না যে ঘাটে গেলেই ভাড়ার নৌকা পাওয়া যাবে। মা অবশ্য হালকা বাঁধা দিলেন। ঠান্ডা বিকেলে নৌকা চড়ার কি দরকার্। দ্বীপ্ত ভাই আর আমি বেড়াতে যাবো। মনটাই আমার আনন্দে নেচে উঠলো। কোন বাঁধা মানার পাত্র নই আজ আমি। নৌকা জোগাড় করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। রহিম আসতে পারলো না। সন্ধ্যার আগেই তাকে গরু বাছুর গোয়ালে তুলতে হবে। চটের মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে। ধুয়া দিয়ে মশা তাড়াতে হবে। না হলে সারা রাত অবলা পশু গুলো মশার কামড়ে কষ্ট পাবে।  আমিও চাচ্ছিলাম না রহিম আমাদের সাথে আসুক। সে একবার বললো আজ না হয় মর্জিনা গরু গুলোকে গইলে তুলুক। আমি বাধা দিলাম। সন্ধ্যা বেলায় হাস মুরগী গুলো তুলতে হয় তাকে।
                    
আমাদের  বাড়ী থেকে শালিক খালি নদী মিনিট পনেরো হাঁটা পথ।পাশাপাশি দুজন হাঁটছি। আমার খুব ইচ্ছে করছে দ্বীপ্ত ভাইয়ার হাত ধরে হাঁটতে । কিন্তু কিভাবে ধরি। বড়ই বেমানান দেখায়। হঠাৎ দ্বীপ্ত ভাই এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলেন। আমি পুলকিত হলাম। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না। কি একটা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন। আমার কানেই ঢুকছিলো না।

এশার আযানের পর চাঁদ অনেক উপরে উঠে গেছে। এক মোহনীয় মায়াময় আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে।শালিক খালির পানিতে , আমাদের নৌকার উপর , বৈঠায়, দ্বীপ্ত ভাইয়ার মুখে। ডাঙায় ঝোঁপে ঝাড়ে জোনাকি পোকার মিটিমিটি জ্বলে আর নেভে। আমি অপলকে চেয়ে আছি। দ্বীপ্ত ভাইয়ার চোখে । সেও তাকিয়ে আছে। চোখে যেন আজ নেশা , মনে আজ ঘোর্। চুম্বকের মত একে অন্যকে টানছি আমরা। আমি বৈঠা রেখে কখন যে পাটাতনে এসেছি জানিনা। কখন যে আমার মাথার পেছেনে দ্বীপ্ত ভাইয়ার হাত এসেছে তাও জানিনা। মন্ত্রমুগ্ধের মত আমি কখন ঠোঁট রেখেছি দ্বীপ্ত ভাইয়ার ঠোঁটে তাও জানি না। আমাদের দুটি ঠোঁট চুম্বকের দুই মেরুর মত এক হয়ে আছে। আমাদের দুজনের লালা মিশে যাচ্ছে। নি:শ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। শরীর কাঁপছে। হৃদপিন্ডের ধুকপুকুনি বেড়ে গেছে। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানিনা।

একটা সময় কামনার আগুন শীতল হলো। আমরা দুজন দুজকে ছেড়ে দিলাম। দ্বীপ্ত ভাইয়া পাটাতনে শুয়ে পড়লেন। আমি তার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। তিনি বাঁধা দিলেন না। আমাকে টেনে পাশে শোয়ালেন। আমি তার বাহুতেমাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। ঢেউয়ে ভেসে নৌকা একাই এগিয়ে যেতে লাগলো। আমি দুর আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চাঁদটাকে আজ অসহ্য সুন্দর লাগছে। জ্যোছনার আলোয় সে আজ ভাসিয়ে দেবে তামাম দুনিয়া। দ্বীপ্ত ভাইয়া গলা ছেড়ে রবীন্দ্র সংগীত ধরলেন। তার গানের গলাও চমৎকার্। অনেকটা শ্রীকান্ত আচার্যের মত।

 তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি
আমি ডুবতে রাজি আছি, আমি ডুবতে রাজি আছি

সকাল আমার গেল মিছে বিকেল যে যায় তারি পিছে গো

রেখো না আর বেঁধো না আর কুলের কাছাকাছি...

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?