[ "বৃষ্টির পরে" গল্পটি কোন নির্দিষ্ট স্থান, কাল, ধর্ম বা সময়ের গল্প নয়, এটি এমন কিছু মানুষের গল্প যারা চাইলেও নিজের পরিবারের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেনা, পারেনা নিজের ভালোবাসাকে কখনো স্বীকৃতি দিতে”]
১.
প্রতিদিনের মত খুব ভোরেই আমার ঘুম ভাঙল। রোজকার অভ্যেস মত বিছানা থেকে উঠেই রুমের দরজা খুলতে গেলাম। কিন্তু গত ১৬ বছরের মত আজ আর দরজা খুললো না। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। আমি অবাক হলাম, আমি আমার নিজের রুমেই বন্দী হয়ে আছি। তারপর মনে পড়ল কাল রাতের কথা। পৃথিবীর সকল বস্তু তাদের স্ব স্ব স্থানে আছে, আজও পূর্ব দিকেই সূর্য উঠেছে। শুধু বদলে গেছে আমার পৃথিবী। আমার খুব সুখী একটি পরিবার ছিল। আমার বাবা মা উচ্চ শিক্ষিত, পেশায় ডাক্তার, তাদের একমাত্র সন্তান আমি, তাদের ভালোবাসার সমস্ত কেন্দ্রবিন্দু ছিলাম আমি। তারাই ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু আজ আমার কেউ নেই, আমি কারো সন্তান নই, আজ আমি শুধু রাতুল যার একমাত্র পরিচয় সে সমকামী। আজ আমাকে কেউ ভালোবাসেনা, তারা ভালবাসত সেই রাতুলকে যে ছদ্মবেশী, যে খুব ভাল ছেলে, যার ভেতরে কোন সমস্যা নেই, যে আর অন্য দশজনের মতই স্বাভাবিক। গতকাল ছিল আমার ১৭ তম জন্মদিন। রাত ১২টায় আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বাবা মা নিজেরাই ঘর সাজালেন। অনেক বড় কেক আনা হল, ঘুম থেকে জেগে কেক কাটলাম, দেয়া হল অসংখ্য দামী উপহার। কিন্তু আমি আর পারছিলাম না নিজেকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে। প্রতিদিন জীবনের সাথে অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত।
“বাবা, মা, তোমাদের আমার কিছু বলার ছিল, I need ur help” , আমি অসহায়ের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালাম। ' কি সাহায্য? কোন সমস্যা হলে খুলে বল আমাদের, ' মা হাসি মুখে আমার দিকে তাকালেন। আমি শেষবারের মত তাদের সেই হাসি দেখেছিলাম। 'আমি..... আমি মনে হয়..... I think I'm gay' বাবা সজোরে আমার গালে চড় মারলেন। মা মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠলেন। বাবা অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করল। মাকেও অনেক বকাঝকা করলেন। তিনি নাকি চাকুরী করায় আমাকে যথেষ্ট সময় দেননি, তাই আমাকে ঠিক মত মানুষ করতে পারেননি, তাই আমি অমানুষ হয়েছি। মা কাঁদছেন, আমি নাকি তাদের কোন পাপের ফসল, বাবা রাগে অন্ধ হয়ে আমার ল্যাপটপ, মোবাইল সব ভেঙ্গে ফেললেন। তার ধারনা ইন্টারনেট আর ফেসবুকের জন্যই আমার আজকের এই দুরবস্থা। আমার শিক্ষিত ডাক্তার বাবা মা ভুলেই গেছেন যে মানুষের sexual orientation তার জন্মের সময়ই নির্ধারিত হয়, কেউ ইচ্ছে করে সমকামী হয়না।
২.
আজ প্রায় তিন মাস পর আমি ঘরে ফিরছি। গত তিন মাস আমাকে একটি হোমে থাকতে হয়েছে। হোম না বলে জেলখানা বলাই ভাল। আমার মত বিগড়ে যাওয়া ছেলে মেয়েদের সেখানে পাঠানো হয়। তাদের শোধরানোর জন্য, তাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য। সেখানে কোন শারীরিক নির্যাতন করা হতো না ঠিক, কিন্তু কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা শুধু আমিই জানি। এর চেয়ে শারীরিক কষ্ট অনেক ভাল ছিল। বিছানা-বিহীন পাকা মেঝেতে শুধু চাটাইয়ের উপর আমাদের থাকতে দেয়া হত, দুবেলা খাবার, একবেলা ভাত আর সবজী , অন্য বেলা ডাল আর শুকনো রুটি। সেখানে যাওয়ার পর আমার জিনস, শার্ট খুলে নেয়া হয়, ছেলে মেয়ে সবার পোশাক ছিল নীল রঙ্গের ঢোলা পাজামা আর ফতুয়া। আমার ঘার পর্যন্ত লম্বা চুল কেটে মাথা নেড়া করা হল। এখানে আমরা সবাই যেন দাগী খুনের আসামী বা কোন মানসিক রোগী। কেউ হাসত না, কাঁদত না, এমনকি কেউ কারো সাথে কথাও বলত না। খাওয়া, ঘুমানো, প্রার্থনা, আর হোমের তথাকথিত গুরুদের লেকচার। আমি কতো বড় পাপী আর সেই জঘন্য মহাপাপের কতো বড় শাস্তি শুধু তাই শোনান হত আমাকে। একসময় আমি ভাঙতে বাধ্য হলাম, হোমের গুরুদের জানালাম আমি ঘরে ফেরার জন্য প্রস্তুত। আমি পবিত্র ধর্ম গ্রন্থকে ছুঁয়ে শপথ করলাম, ' আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত, আমি আমার ভুল স্বীকার করছি, আমি এতদিন যা ভেবেছি সব ভুল, I'm not a gay , আমার ভেতরের সমস্ত নোংরা ভাবনা আমি ত্যাগ করছি, আজ থেকে আমি নতুন একজন মানুষ। ' আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার মিথ্যাচারের জন্য, কিন্তু এটাই ছিল আমার মুক্তির একমাত্র উপায়। বাসায় ফিরে আমি আমার রুমকে চিনতে পারছিলাম না, আমি যেন ভুলে অন্য কারো রুমে প্রবেশ করেছি, আমার সেই প্রিয় বাবা মা, কিন্তু তারা ভিন্ন, আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত। আমি তিন মাস আগের সেই রাতের কথা ভাবলাম। একটি ছোট্ট সত্য আমার পুরো জীবনটাই বদলে দিল। আমি কি কখনো ফিরে পাব আমার সেই চিরচেনা পৃথিবীকে ??
৩.
আমি আবিদ। মধ্যবিত্ত একটি খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। জীবনে পথ চলতে গিয়ে এতটা বন্ধুর পথে হাটতে হয়েছে যে কখনো প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময়ই পাইনি। রাতুল আমাদের কলেজেই পড়তো। কিন্তু ওর সাথে তেমন কথা হতো না, সে ছিল অনেক বড়লোক ঘরের ছেলে, কলেজের হিরো। মেয়েরা তার জন্য পাগল ছিল, রাতুল খুব ভাল ফুটবল খেলত, সবাই তাকে অনেক পছন্দ করত। আমিও রাতুলকে অনেক পছন্দ করতাম কিন্তু তার মত ছেলের সাথে নিজে গিয়ে পরিচিত হওয়া বা তার সাথে বন্ধুত্ব করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, মনে হত সে যদি আমাকে পাত্তা না দেয়। কি দরকার শুধু শুধু সখ করে অপমানিত হবার? অনেক দিন ধরেই রাতুল কলেজে আসে না। যেন হঠাৎ করেই কোথাও উধাও হয়ে গেছে সে. অনেকের কাছে শুনলাম সে নাকি ড্রাগ addicted হয়ে গেছে, ইয়াবা, হিরোইন এসব খায়। তার বাবা মা তাকে শহর থেকে দূরে কোনও এক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দিয়েছেন। কিন্তু কেন জানি আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারিনি যে রাতুলের মত হাসি খুশি প্রাণবন্ত একটি ছেলে কখনো নেশাখোর হতে পারে! আজ প্রায় তিন মাস পর কলেজে রাতুলকে দেখলাম। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি, কে বলবে এই সেই তিন মাস আগের রাতুল ? সে যেখানেই দাঁড়াত সেখানেই আড্ডা জমে যেত। কলেজে তার বন্ধুর অভাব ছিল না, আর আজ সে চুপচাপ একা পেছনের বেঞ্চে বসে আছে, কারো সাথেই কথা বলছে না। অনেক শুকিয়ে গেছে সে, চোখ গুলো শান্ত, স্থির, যেন অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে সেখানে। কেন জানি আমার ভেতরে একটা অদ্ভুত মায়া হচ্ছিল রাতুলের জন্য।
আজ আইয়ুব স্যারের ক্লাস, অসাধারণ একজন মানুষ, তিনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। তিনি হঠাৎ করে আমাদের সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, ' কোন ব্যক্তি কি তার মুল্যবোধ বা বিশ্বাসে অটল থাকতে পারবে যদি তার পরিবার বা সমাজ সেটাকে মিথ্যা বা ভুল ভাবে? তোমরা কি মনে কর? ' আমি হাত তুললাম, স্যার আমাকে বলার সুযোগ দিলেন,
-আমি মনে করি আমাদের বিশ্বাস সত্য হবে যদি আমোদের হৃদয় জানে তা সঠিক এবং সত্য'
-কিন্তু তোমার বিশ্বাস যদি তোমার আপন জনকে কষ্ট দেয়, যদি তোমাকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়?'
-I think, the truth is always remains truth , আমরা যদি যা সত্য, তা যতোই নির্মম হোক না কেন তাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি , তাহলে কেউই কষ্ট পাবে না, আর তখন সবাই সুখী হতে পারবে।'
স্যার আমার জবাবে অনেক খুশী হলেন, বললেন
-ঠিক বলেছ আবিদ, মিথ্যা দিয়ে কাউকে সুখী করা যায় না, মিথ্যার কদর্য রূপ একদিন সবার সামনে বেরিয়ে আসবেই...
৪.
সেদিন ক্লাস শেষে আমি যখন কলেজ থেকে চলে আসছিলাম, রাতুল আমাকে পেছন থেকে ডাকল,
-আবিদ, শোন, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল
-হ্যাঁ, বল
-তুমি কি আমাকে একটু সময় দিতে পারবে?
-আসলে রাতুল, আমি একটা পার্ট টাইম জব করি। আমাকে এখন সেখানে যেতে হবে
-কোথায়?
-কম্পিউটার ভিলেজে, তুমি যাবে আমার সাথে?
-ওকে, চল তাহলে...
রাতুল আমার সাথে ভিলেজে গেল, সারাটা বিকেল আমার সাথেই থাকলো, সন্ধের পর কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে একটি কফি শপে গেলাম। রাতুল চুপচাপ ধূমায়িত কফির মগে চুমুক দিচ্ছিল, আমি প্রথম নীরবতা ভাঙলাম,
-তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
রাতুল একটু সংকোচ বোধ করছিলো। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
-সবাই জানে, আমি ড্রাগ addicted হয়ে গেছিলাম, কিন্তু তা মিথ্যা
-তাহলে সত্যিটা কি?
-তুমি আজ ক্লাসে যা বলেছ তা কি তুমি মন থেকে বিশ্বাস কর?
-হ্যাঁ, কেন?
-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই, আমি কাউকেই কিছু বলতে পারছি না, মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাব।
-আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু খারাপ সময় আসে, তুমি আমাকে সব বলতে পার। আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম।
-আমি তোমাকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারি ?
তার কোন কারণ ছিল না আমাকে বিশ্বাস করার। কারন আমরা বন্ধু ছিলাম না তখন পর্যন্ত। কিন্তু রাতুলের এমন একজন মানুষ প্রয়োজন ছিল যে তার কথা শুনবে, তাকে বুঝবে, তাকে বিচার করতে যাবে না।
-তুমি যদি চাও আমাকে বলতে পার, আমি কাউকে কিছু বলব না, প্রমিস...
-আবিদ, আমি একটা গাধার মত কাজ করেছি। আমি ভেবেছি, বাবা মা আমাকে বুঝবে, যেহেতু তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
-তারা তোমাকে বোঝেনি?
-না, তারা আমাকে ঘৃণা করে, আমি তাদেরকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা বলেছিলাম, আমি ভেবেছি তারা আমাকে মানসিকভাবে সাহায্য করবে। আমি কখনো ভাবিনি, যে মা আমার কপালে প্রতিদিন চুমো দিত, আজ আমার সত্যিটা জানার পর তিনি আমার মুখ দেখাও পাপ মনে করবেন।
-কি এমন ভয়ংকর সত্য বলেছিলে তুমি?
-আমি বলেছি, 'I'm Gay, I feel so helpless. I never feel any attraction for girl'
রাতুল কাঁদতে লাগলো, ভাগ্য ভাল, কফিশপ টাতে তেমন বেশী মানুষ ছিল না, তাছাড়া আমরা একটু ভেতরের দিকে বসে ছিলাম। রাতুল বলতে লাগলো কিভাবে একটি ছোট্ট সত্য তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিল। কিভাবে হোমে নিয়ে গিয়ে একটি জীবন্ত মানুষকে জিন্দা লাশে পরিণত করা হল। সেদিন আমার মুখে কোনও ভাষা ছিল না, আমি চুপচাপ স্তব্ধ হয়ে শুনেছি জীবনের কিছু নির্মম বাস্তবতা।
৫.
সেদিন সন্ধ্যায় কিভাবে আবিদকে নিজের ভেতরের সব কথা এভাবে বলেছি আমি জানিনা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমার বাবা মায়ের মত আবিদের চোখে কোন ঘৃণা ছিল না। সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার চোখ পানিতে টলমল করছিলো। একজন straight হওয়ার পরও সে আমাকে খুব সাধারণ ভাবে গ্রহণ করেছে। সেদিন থেকেই আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। আবিদ আমাকে কম্পিউটার ভিলেজে পার্ট টাইম চাকুরী জোগাড় করে দিল। যদিও টাকার আমার তেমন প্রয়োজন ছিল না। ছোটবেলা থেকেই কোন কিছু না চাইতেই আমি পেয়েছি। কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার পর একা একা বাসায় ভাল লাগতো না। তাছাড়া সেখানে আবিদের সান্নিধ্যও আমি বেশ উপভোগ করতাম। প্রথমে বাবা চাকুরী করতে দিতে রাজী হয়নি। পরে মা বাবাকে রাজী করাল এই বলে যে, ব্যস্ত থাকলে আমি ভাল থাকব। ধীরে ধীরে আমি যেন নিজেকে একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছিলাম। আবিদের বন্ধুত্ব, তার সঙ্গ, আমার মনের ঘা গুলোকে ক্রমশ সারিয়ে দিচ্ছিল। প্রতিদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। আবিদের সাথেই আমি জীবনে প্রথম রাস্তার ছোট টঙ্গের দোকানে চা খেয়েছি। রাস্তার ধুলো বালি মাখা চটপটি খেয়ে ঝালে চোখে পানি ফেলেছি। মাঝে মাঝে কলেজ ফাঁকি দিয়ে সমুদ্র পাড়ে যেতাম, আমি পানিতে নামতে না চাইলে আবিদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিত। কখনো হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট উঠিয়ে পানিতে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম। আবিদ আমাকে শক্ত করে ধরে রাখত, হয়তো সে ভয় পেত যদি সাগরের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমি বুঝতে পারছি আমি ধীরে ধীরে আবিদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি। রাস্তায় হাঁটার সময় সে যখন আমার কাঁধে হাত রাখে আমি শিহরিত হই, সমুদ্রে নেমে আবিদ যখন আমার হাত ধরে আমার শরীর জেগে উঠে। প্রতিদিন বিদায় নেওয়ার সময় আবিদ যখন হ্যান্ডশেক করে, আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় তাকে অনুভব করে, ইচ্ছে করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আমি জানি আবিদ আমার মত নয়, তার অনেক বান্ধবী আছে। আমি চাইনা আমার সামান্য ভুলের জন্য তাকে হারাতে। সে না হয় বন্ধু হয়েই আমার পাশে থাকুক।
৬.
ধীরে ধীরে আমি রাতুলের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের সম্পর্ক ক্রমশ সীমানা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল কোন এক অনিশ্চয়তার পথে। রাতুল কি আমাকে পছন্দ করে? এর মধ্যেই আমাদের HSC পরীক্ষা শুরু হল। আমরা দুজনই পড়া শোনা, পরীক্ষা এইসব নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে গেলাম। পরীক্ষা শেষ হল, আগের মতো আমাদের আর দেখা হত না, পরীক্ষার সময় আমরা দুজনই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভর্তি কোচিং, বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য দৌড়াদৌড়ি সব কিছু নিয়ে আমি এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে, রাতুলের খুব একটা খোঁজ রাখতে পারিনি। হঠাৎ একদিন সকালে মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল। ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করতেই,
-শুভ জন্মদিন
-রাতুল, এতদিন পর, তোর মনে ছিল?
-আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন, আমি কিভাবে ভুলে যাই বল?
-আমার নিজেরও কিন্তু মনে ছিল না, THANKS দোস্ত
-Thanks দিতে হবে না, আজকে তোর একটু সময় হবে?
-কেন, দেখা করবি?
-হ্যাঁ' ওকে, আমি বিকেল ৪টায় তোর জন্য আমাদের প্রিয় কফি শপটাতে অপেক্ষা করব...
৭.
সেদিন বিকেলে অনেক দিন পর আমরা দেখা করলাম। রাতুল আমাকে একটি ডায়রি উপহার দিয়েছিল। তার মন খুব খারাপ ছিল, রাতুলের বাবা মায়ের ইচ্ছে সেও তাদের মত একজন ডাক্তার হোক, কিন্তু অনেক ভাল ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও রাতুল মেডিকেলে চান্স পেল না, তার বাবা বলেছেন এক বছর ড্রপ দিয়ে ঘরে বসে 2nd বার মেডিকেলের জন্য পড়াশোনা করতে. কিন্তু আমি জানতাম এভাবে এক বছর ঘরে বসে থাকলে সে মানসিক ভাবে আরও ভেঙ্গে পড়বে। তাই নিজেই অনলাইন থেকে দুজনের জন্য ফরম তুলে রাতুলকে অনেকটা জোর করে একসাথে রুয়েটে পরীক্ষা দিলাম, এবং সৌভাগ্যবশত দুজনেই টিকে গেলাম একসাথে। আমি অবশ্য চুয়েটেও চান্স পেয়েছি কিন্তু রাতুলকে রাজশাহীতে একা পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। রাতুল অনেকটা শুধুমাত্র আমার জন্যই তার বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে engineering এ ভর্তি হল। বাসা থেকে রাতুলকে বলা হল এখন থেকে তার নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে, সে যেন পরিবার থেকে কখনো কিছু আশা না করে.
৮.
ক্লাস শুরু হল, রাতুল ও আবিদ পেল জীবনের নতুন স্বাধীনতা যা তারা আগে কখনো পায়নি। দুজন ভাল বন্ধু এখন হোস্টেলের রুম মেট, নিয়তি হয়তো তাদের একসাথে দেখতে চেয়েছে। তারা একসাথে ক্লাসে যেত, একসাথে খেত, অনেক রাত জেগে একসাথে গল্প করত। মজার ব্যাপার হল তারা দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও একে অপরের কাছে যথেষ্ট লজ্জা পেত, রাতুল যখন কাপড় চেঞ্জ করত, আবিদ তখন কম্পিউটারের মনিটরে দিকে তাকাত। আবার আবিদ যখন টাওয়েল পড়ে গোসল সেরে আসতো, রাতুল তখন বইয়ের পাতায় মুখ লুকাত, তারা দুজনই সতর্ক থাকতো যেন কখনো একে অপরের গায়ে হাত না লাগে, এভাবেই কেটে গেল অনেকটা সময়।
৯.
আজ রাতুলের জন্মদিন। তার মা তাকে ফোন করে উইশ করল, তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি কুরিয়ারে ছেলের জন্য গিফট আর একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
“রাতুল, কেমন আছিস তুই, হয়ত আমাদের ছেড়ে অনেক ভালই আছিস, I'm sorry রাতুল, আমরা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি, আমি মা হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাইছি, পারলে ক্ষমা করিস, তুই কোন পাপ করিস নি , যদি কেউ পাপ করে, তাহলে আমরা করেছি তোকে হোমে পাঠিয়ে, আমরা বাবা মা হয়ে তোকে বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের অক্ষমতা। সন্তান যদি বাবা মায়ের কাছেই আশ্রয় না পায়, তাহলে সে কোথায় যাবে, তুই Gay হোস আর যাই হ, তুই আমার সন্তান, এটাই তোর সবচেয়ে বড় পরিচয়, জানিনা তোর বাবা কখনো তার ভুল বুঝতে পারবে কিনা, আমি ছুটি পেলে তোকে দেখার জন্য রাজশাহীতে আসব, ভাল থাকিস। ...তোর মা”
মায়ের চিঠি পড়ে রাতুলের চোখে পানি চলে আসলো। কতদিন তার মায়ের মুখটি সে দেখেনা, মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তার সব বন্ধুরাও তাকে উইশ করলো, কিন্তু যে মানুষটি তার জন্য সবচেয়ে স্পেশাল, সেই তাকে উইশ করতে ভুলে গেল। রাতুলের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। তারপর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখল আবিদ একটা মেয়ের সাথে হাসাহাসি করছে, দেখে রাতুলের গা জ্বলে গেল, তাহলে কি আবিদ তার জন্মদিনের কথা ভুলে গেল? রাত ১১টার সময় হঠাৎ আবিদ বাইরে থেকে এসেই রাতুলকে জোর করে ছাদে নিয়ে গেল। রাতুল বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখল পুরো ছাদ ভর্তি অসংখ্য রঙ্গিন মোমবাতি, এত অসাধারণ সারপ্রাইজ সে তার জীবনে কখনো পায়নি। আবিদ হাসছে।
-তোর মনে ছিল?
-কেন তুই একাই বুঝি মনে রাখতে পারিস?
-তাহলে সারাদিন উইশ করলি না কেন?
-তাহলে এই গাধাকে সারপ্রাইজ দিতাম কিভাবে?
-কি, আমি গাধা!
-হ্যাঁ, গাধাই তো
-গাধা হইলে ভাল, এখন আমার গিফট দে
রাতুল কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিদ তাকে চুমো খেতে শুরু করলো। রাতুল অবাক হয়ে,
-এটা কি হইল?
-I Love You রাতুল, তুই ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, তুই পাশে থাকলে আমার প্রতিটা দিন স্পেশাল হয়ে যায়, তুই তো আমার জীবনের অক্সিজেন, অক্সিজেন ছাড়া কি মানুষ বাঁচে বল?
-কিন্তু তুই তো straight?
-মিথ্যে কথা, আমি তোকে ভালোবাসি সেই কলেজের প্রথম দিন থেকেই, তোর কষ্টগুলো তোর মত করেই আমি অনুভব করতাম কারণ I am also gay
-আমি confused, এই কথা তুই আমকে এতদিন বলিসনি কেন? তুই ভাল করেই জানতিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি
-Because, I was waitting for the right time, আমি চাইনি তখন আমরা কোন সম্পর্ক শুরু করি। মনে আছে তুই আমাকে বলেছিলি, তোকে যদি কোনদিন ঐ হোমে ফিরে যেতে হয়, তুই মরে যাবি। আমি তোকে নতুন করে কোন সমস্যায় ফেলতে চাইনি, তুই তোর ধর্ম, পরিবার আর নিজেকে নিয়েই অনেক কনফিউজড ছিলি, I didn't tell you because I care so much, I had to protect you
-তুই যদি আমাকে ভালবাসিস, তাহলে অনিতার সাথে মাখামাখি করছিলি কেন?
-সেটা তো তোকে রাগানোর জন্য, তুই কি জানিস তোকে রাগলে পাকা টমেটোর মত দেখায়, আর আসিফ স্যার যে তোর হাত ধরে কথা বলছিল?
-তুই না ...
-আমি কি?
-একটা আস্ত শয়তান
-আর তুই তো আমার লাল টুকটুকে লক্ষ্মী বৌ...
আবিদ রাতুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পকেট থেকে আংটি বের করলো।
-Will you be my life partner?
জবাবের অপেক্ষা না করেই রাতুলের হাতে আংটি পরিয়ে দিল। রাতুলও আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এই মানুষটিকে সে কখনো হারাতে চায় না। আজ সে আবিদকে ভালবাসবে তার সব কিছু উজাড় করে দিয়ে। এমন সময় বৃষ্টি এসে দুজনকে ভিজিয়ে দিল। বছরের প্রথম বৃষ্টি রাতুল আর আবিদের জীবনের সকল অতীত ধুয়ে সাফ করে উন্মোচিত করলো ভালোবাসার এক নতুন দিগন্ত।
The rain drops are conspiring with my hidden desire.
Just look...
The soft gentle breeze is saying something extra ordinary
-Why this distance between us?
Just look...
১.
প্রতিদিনের মত খুব ভোরেই আমার ঘুম ভাঙল। রোজকার অভ্যেস মত বিছানা থেকে উঠেই রুমের দরজা খুলতে গেলাম। কিন্তু গত ১৬ বছরের মত আজ আর দরজা খুললো না। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। আমি অবাক হলাম, আমি আমার নিজের রুমেই বন্দী হয়ে আছি। তারপর মনে পড়ল কাল রাতের কথা। পৃথিবীর সকল বস্তু তাদের স্ব স্ব স্থানে আছে, আজও পূর্ব দিকেই সূর্য উঠেছে। শুধু বদলে গেছে আমার পৃথিবী। আমার খুব সুখী একটি পরিবার ছিল। আমার বাবা মা উচ্চ শিক্ষিত, পেশায় ডাক্তার, তাদের একমাত্র সন্তান আমি, তাদের ভালোবাসার সমস্ত কেন্দ্রবিন্দু ছিলাম আমি। তারাই ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু আজ আমার কেউ নেই, আমি কারো সন্তান নই, আজ আমি শুধু রাতুল যার একমাত্র পরিচয় সে সমকামী। আজ আমাকে কেউ ভালোবাসেনা, তারা ভালবাসত সেই রাতুলকে যে ছদ্মবেশী, যে খুব ভাল ছেলে, যার ভেতরে কোন সমস্যা নেই, যে আর অন্য দশজনের মতই স্বাভাবিক। গতকাল ছিল আমার ১৭ তম জন্মদিন। রাত ১২টায় আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বাবা মা নিজেরাই ঘর সাজালেন। অনেক বড় কেক আনা হল, ঘুম থেকে জেগে কেক কাটলাম, দেয়া হল অসংখ্য দামী উপহার। কিন্তু আমি আর পারছিলাম না নিজেকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে। প্রতিদিন জীবনের সাথে অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত।
“বাবা, মা, তোমাদের আমার কিছু বলার ছিল, I need ur help” , আমি অসহায়ের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালাম। ' কি সাহায্য? কোন সমস্যা হলে খুলে বল আমাদের, ' মা হাসি মুখে আমার দিকে তাকালেন। আমি শেষবারের মত তাদের সেই হাসি দেখেছিলাম। 'আমি..... আমি মনে হয়..... I think I'm gay' বাবা সজোরে আমার গালে চড় মারলেন। মা মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠলেন। বাবা অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করল। মাকেও অনেক বকাঝকা করলেন। তিনি নাকি চাকুরী করায় আমাকে যথেষ্ট সময় দেননি, তাই আমাকে ঠিক মত মানুষ করতে পারেননি, তাই আমি অমানুষ হয়েছি। মা কাঁদছেন, আমি নাকি তাদের কোন পাপের ফসল, বাবা রাগে অন্ধ হয়ে আমার ল্যাপটপ, মোবাইল সব ভেঙ্গে ফেললেন। তার ধারনা ইন্টারনেট আর ফেসবুকের জন্যই আমার আজকের এই দুরবস্থা। আমার শিক্ষিত ডাক্তার বাবা মা ভুলেই গেছেন যে মানুষের sexual orientation তার জন্মের সময়ই নির্ধারিত হয়, কেউ ইচ্ছে করে সমকামী হয়না।
২.
আজ প্রায় তিন মাস পর আমি ঘরে ফিরছি। গত তিন মাস আমাকে একটি হোমে থাকতে হয়েছে। হোম না বলে জেলখানা বলাই ভাল। আমার মত বিগড়ে যাওয়া ছেলে মেয়েদের সেখানে পাঠানো হয়। তাদের শোধরানোর জন্য, তাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য। সেখানে কোন শারীরিক নির্যাতন করা হতো না ঠিক, কিন্তু কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা শুধু আমিই জানি। এর চেয়ে শারীরিক কষ্ট অনেক ভাল ছিল। বিছানা-বিহীন পাকা মেঝেতে শুধু চাটাইয়ের উপর আমাদের থাকতে দেয়া হত, দুবেলা খাবার, একবেলা ভাত আর সবজী , অন্য বেলা ডাল আর শুকনো রুটি। সেখানে যাওয়ার পর আমার জিনস, শার্ট খুলে নেয়া হয়, ছেলে মেয়ে সবার পোশাক ছিল নীল রঙ্গের ঢোলা পাজামা আর ফতুয়া। আমার ঘার পর্যন্ত লম্বা চুল কেটে মাথা নেড়া করা হল। এখানে আমরা সবাই যেন দাগী খুনের আসামী বা কোন মানসিক রোগী। কেউ হাসত না, কাঁদত না, এমনকি কেউ কারো সাথে কথাও বলত না। খাওয়া, ঘুমানো, প্রার্থনা, আর হোমের তথাকথিত গুরুদের লেকচার। আমি কতো বড় পাপী আর সেই জঘন্য মহাপাপের কতো বড় শাস্তি শুধু তাই শোনান হত আমাকে। একসময় আমি ভাঙতে বাধ্য হলাম, হোমের গুরুদের জানালাম আমি ঘরে ফেরার জন্য প্রস্তুত। আমি পবিত্র ধর্ম গ্রন্থকে ছুঁয়ে শপথ করলাম, ' আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত, আমি আমার ভুল স্বীকার করছি, আমি এতদিন যা ভেবেছি সব ভুল, I'm not a gay , আমার ভেতরের সমস্ত নোংরা ভাবনা আমি ত্যাগ করছি, আজ থেকে আমি নতুন একজন মানুষ। ' আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার মিথ্যাচারের জন্য, কিন্তু এটাই ছিল আমার মুক্তির একমাত্র উপায়। বাসায় ফিরে আমি আমার রুমকে চিনতে পারছিলাম না, আমি যেন ভুলে অন্য কারো রুমে প্রবেশ করেছি, আমার সেই প্রিয় বাবা মা, কিন্তু তারা ভিন্ন, আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত। আমি তিন মাস আগের সেই রাতের কথা ভাবলাম। একটি ছোট্ট সত্য আমার পুরো জীবনটাই বদলে দিল। আমি কি কখনো ফিরে পাব আমার সেই চিরচেনা পৃথিবীকে ??
৩.
আমি আবিদ। মধ্যবিত্ত একটি খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। জীবনে পথ চলতে গিয়ে এতটা বন্ধুর পথে হাটতে হয়েছে যে কখনো প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময়ই পাইনি। রাতুল আমাদের কলেজেই পড়তো। কিন্তু ওর সাথে তেমন কথা হতো না, সে ছিল অনেক বড়লোক ঘরের ছেলে, কলেজের হিরো। মেয়েরা তার জন্য পাগল ছিল, রাতুল খুব ভাল ফুটবল খেলত, সবাই তাকে অনেক পছন্দ করত। আমিও রাতুলকে অনেক পছন্দ করতাম কিন্তু তার মত ছেলের সাথে নিজে গিয়ে পরিচিত হওয়া বা তার সাথে বন্ধুত্ব করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, মনে হত সে যদি আমাকে পাত্তা না দেয়। কি দরকার শুধু শুধু সখ করে অপমানিত হবার? অনেক দিন ধরেই রাতুল কলেজে আসে না। যেন হঠাৎ করেই কোথাও উধাও হয়ে গেছে সে. অনেকের কাছে শুনলাম সে নাকি ড্রাগ addicted হয়ে গেছে, ইয়াবা, হিরোইন এসব খায়। তার বাবা মা তাকে শহর থেকে দূরে কোনও এক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দিয়েছেন। কিন্তু কেন জানি আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারিনি যে রাতুলের মত হাসি খুশি প্রাণবন্ত একটি ছেলে কখনো নেশাখোর হতে পারে! আজ প্রায় তিন মাস পর কলেজে রাতুলকে দেখলাম। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি, কে বলবে এই সেই তিন মাস আগের রাতুল ? সে যেখানেই দাঁড়াত সেখানেই আড্ডা জমে যেত। কলেজে তার বন্ধুর অভাব ছিল না, আর আজ সে চুপচাপ একা পেছনের বেঞ্চে বসে আছে, কারো সাথেই কথা বলছে না। অনেক শুকিয়ে গেছে সে, চোখ গুলো শান্ত, স্থির, যেন অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে সেখানে। কেন জানি আমার ভেতরে একটা অদ্ভুত মায়া হচ্ছিল রাতুলের জন্য।
আজ আইয়ুব স্যারের ক্লাস, অসাধারণ একজন মানুষ, তিনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। তিনি হঠাৎ করে আমাদের সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, ' কোন ব্যক্তি কি তার মুল্যবোধ বা বিশ্বাসে অটল থাকতে পারবে যদি তার পরিবার বা সমাজ সেটাকে মিথ্যা বা ভুল ভাবে? তোমরা কি মনে কর? ' আমি হাত তুললাম, স্যার আমাকে বলার সুযোগ দিলেন,
-আমি মনে করি আমাদের বিশ্বাস সত্য হবে যদি আমোদের হৃদয় জানে তা সঠিক এবং সত্য'
-কিন্তু তোমার বিশ্বাস যদি তোমার আপন জনকে কষ্ট দেয়, যদি তোমাকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়?'
-I think, the truth is always remains truth , আমরা যদি যা সত্য, তা যতোই নির্মম হোক না কেন তাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি , তাহলে কেউই কষ্ট পাবে না, আর তখন সবাই সুখী হতে পারবে।'
স্যার আমার জবাবে অনেক খুশী হলেন, বললেন
-ঠিক বলেছ আবিদ, মিথ্যা দিয়ে কাউকে সুখী করা যায় না, মিথ্যার কদর্য রূপ একদিন সবার সামনে বেরিয়ে আসবেই...
৪.
সেদিন ক্লাস শেষে আমি যখন কলেজ থেকে চলে আসছিলাম, রাতুল আমাকে পেছন থেকে ডাকল,
-আবিদ, শোন, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল
-হ্যাঁ, বল
-তুমি কি আমাকে একটু সময় দিতে পারবে?
-আসলে রাতুল, আমি একটা পার্ট টাইম জব করি। আমাকে এখন সেখানে যেতে হবে
-কোথায়?
-কম্পিউটার ভিলেজে, তুমি যাবে আমার সাথে?
-ওকে, চল তাহলে...
রাতুল আমার সাথে ভিলেজে গেল, সারাটা বিকেল আমার সাথেই থাকলো, সন্ধের পর কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে একটি কফি শপে গেলাম। রাতুল চুপচাপ ধূমায়িত কফির মগে চুমুক দিচ্ছিল, আমি প্রথম নীরবতা ভাঙলাম,
-তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও?
রাতুল একটু সংকোচ বোধ করছিলো। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
-সবাই জানে, আমি ড্রাগ addicted হয়ে গেছিলাম, কিন্তু তা মিথ্যা
-তাহলে সত্যিটা কি?
-তুমি আজ ক্লাসে যা বলেছ তা কি তুমি মন থেকে বিশ্বাস কর?
-হ্যাঁ, কেন?
-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই, আমি কাউকেই কিছু বলতে পারছি না, মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাব।
-আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু খারাপ সময় আসে, তুমি আমাকে সব বলতে পার। আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম।
-আমি তোমাকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারি ?
তার কোন কারণ ছিল না আমাকে বিশ্বাস করার। কারন আমরা বন্ধু ছিলাম না তখন পর্যন্ত। কিন্তু রাতুলের এমন একজন মানুষ প্রয়োজন ছিল যে তার কথা শুনবে, তাকে বুঝবে, তাকে বিচার করতে যাবে না।
-তুমি যদি চাও আমাকে বলতে পার, আমি কাউকে কিছু বলব না, প্রমিস...
-আবিদ, আমি একটা গাধার মত কাজ করেছি। আমি ভেবেছি, বাবা মা আমাকে বুঝবে, যেহেতু তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
-তারা তোমাকে বোঝেনি?
-না, তারা আমাকে ঘৃণা করে, আমি তাদেরকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা বলেছিলাম, আমি ভেবেছি তারা আমাকে মানসিকভাবে সাহায্য করবে। আমি কখনো ভাবিনি, যে মা আমার কপালে প্রতিদিন চুমো দিত, আজ আমার সত্যিটা জানার পর তিনি আমার মুখ দেখাও পাপ মনে করবেন।
-কি এমন ভয়ংকর সত্য বলেছিলে তুমি?
-আমি বলেছি, 'I'm Gay, I feel so helpless. I never feel any attraction for girl'
রাতুল কাঁদতে লাগলো, ভাগ্য ভাল, কফিশপ টাতে তেমন বেশী মানুষ ছিল না, তাছাড়া আমরা একটু ভেতরের দিকে বসে ছিলাম। রাতুল বলতে লাগলো কিভাবে একটি ছোট্ট সত্য তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিল। কিভাবে হোমে নিয়ে গিয়ে একটি জীবন্ত মানুষকে জিন্দা লাশে পরিণত করা হল। সেদিন আমার মুখে কোনও ভাষা ছিল না, আমি চুপচাপ স্তব্ধ হয়ে শুনেছি জীবনের কিছু নির্মম বাস্তবতা।
৫.
সেদিন সন্ধ্যায় কিভাবে আবিদকে নিজের ভেতরের সব কথা এভাবে বলেছি আমি জানিনা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আমার বাবা মায়ের মত আবিদের চোখে কোন ঘৃণা ছিল না। সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার চোখ পানিতে টলমল করছিলো। একজন straight হওয়ার পরও সে আমাকে খুব সাধারণ ভাবে গ্রহণ করেছে। সেদিন থেকেই আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। আবিদ আমাকে কম্পিউটার ভিলেজে পার্ট টাইম চাকুরী জোগাড় করে দিল। যদিও টাকার আমার তেমন প্রয়োজন ছিল না। ছোটবেলা থেকেই কোন কিছু না চাইতেই আমি পেয়েছি। কিন্তু কলেজ থেকে ফেরার পর একা একা বাসায় ভাল লাগতো না। তাছাড়া সেখানে আবিদের সান্নিধ্যও আমি বেশ উপভোগ করতাম। প্রথমে বাবা চাকুরী করতে দিতে রাজী হয়নি। পরে মা বাবাকে রাজী করাল এই বলে যে, ব্যস্ত থাকলে আমি ভাল থাকব। ধীরে ধীরে আমি যেন নিজেকে একটু একটু করে ফিরে পাচ্ছিলাম। আবিদের বন্ধুত্ব, তার সঙ্গ, আমার মনের ঘা গুলোকে ক্রমশ সারিয়ে দিচ্ছিল। প্রতিদিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। আবিদের সাথেই আমি জীবনে প্রথম রাস্তার ছোট টঙ্গের দোকানে চা খেয়েছি। রাস্তার ধুলো বালি মাখা চটপটি খেয়ে ঝালে চোখে পানি ফেলেছি। মাঝে মাঝে কলেজ ফাঁকি দিয়ে সমুদ্র পাড়ে যেতাম, আমি পানিতে নামতে না চাইলে আবিদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিত। কখনো হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট উঠিয়ে পানিতে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম। আবিদ আমাকে শক্ত করে ধরে রাখত, হয়তো সে ভয় পেত যদি সাগরের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমি বুঝতে পারছি আমি ধীরে ধীরে আবিদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি। রাস্তায় হাঁটার সময় সে যখন আমার কাঁধে হাত রাখে আমি শিহরিত হই, সমুদ্রে নেমে আবিদ যখন আমার হাত ধরে আমার শরীর জেগে উঠে। প্রতিদিন বিদায় নেওয়ার সময় আবিদ যখন হ্যান্ডশেক করে, আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় তাকে অনুভব করে, ইচ্ছে করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আমি জানি আবিদ আমার মত নয়, তার অনেক বান্ধবী আছে। আমি চাইনা আমার সামান্য ভুলের জন্য তাকে হারাতে। সে না হয় বন্ধু হয়েই আমার পাশে থাকুক।
৬.
ধীরে ধীরে আমি রাতুলের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের সম্পর্ক ক্রমশ সীমানা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল কোন এক অনিশ্চয়তার পথে। রাতুল কি আমাকে পছন্দ করে? এর মধ্যেই আমাদের HSC পরীক্ষা শুরু হল। আমরা দুজনই পড়া শোনা, পরীক্ষা এইসব নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে গেলাম। পরীক্ষা শেষ হল, আগের মতো আমাদের আর দেখা হত না, পরীক্ষার সময় আমরা দুজনই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভর্তি কোচিং, বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য দৌড়াদৌড়ি সব কিছু নিয়ে আমি এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে, রাতুলের খুব একটা খোঁজ রাখতে পারিনি। হঠাৎ একদিন সকালে মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙল। ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করতেই,
-শুভ জন্মদিন
-রাতুল, এতদিন পর, তোর মনে ছিল?
-আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন, আমি কিভাবে ভুলে যাই বল?
-আমার নিজেরও কিন্তু মনে ছিল না, THANKS দোস্ত
-Thanks দিতে হবে না, আজকে তোর একটু সময় হবে?
-কেন, দেখা করবি?
-হ্যাঁ' ওকে, আমি বিকেল ৪টায় তোর জন্য আমাদের প্রিয় কফি শপটাতে অপেক্ষা করব...
৭.
সেদিন বিকেলে অনেক দিন পর আমরা দেখা করলাম। রাতুল আমাকে একটি ডায়রি উপহার দিয়েছিল। তার মন খুব খারাপ ছিল, রাতুলের বাবা মায়ের ইচ্ছে সেও তাদের মত একজন ডাক্তার হোক, কিন্তু অনেক ভাল ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও রাতুল মেডিকেলে চান্স পেল না, তার বাবা বলেছেন এক বছর ড্রপ দিয়ে ঘরে বসে 2nd বার মেডিকেলের জন্য পড়াশোনা করতে. কিন্তু আমি জানতাম এভাবে এক বছর ঘরে বসে থাকলে সে মানসিক ভাবে আরও ভেঙ্গে পড়বে। তাই নিজেই অনলাইন থেকে দুজনের জন্য ফরম তুলে রাতুলকে অনেকটা জোর করে একসাথে রুয়েটে পরীক্ষা দিলাম, এবং সৌভাগ্যবশত দুজনেই টিকে গেলাম একসাথে। আমি অবশ্য চুয়েটেও চান্স পেয়েছি কিন্তু রাতুলকে রাজশাহীতে একা পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। রাতুল অনেকটা শুধুমাত্র আমার জন্যই তার বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে engineering এ ভর্তি হল। বাসা থেকে রাতুলকে বলা হল এখন থেকে তার নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে, সে যেন পরিবার থেকে কখনো কিছু আশা না করে.
৮.
ক্লাস শুরু হল, রাতুল ও আবিদ পেল জীবনের নতুন স্বাধীনতা যা তারা আগে কখনো পায়নি। দুজন ভাল বন্ধু এখন হোস্টেলের রুম মেট, নিয়তি হয়তো তাদের একসাথে দেখতে চেয়েছে। তারা একসাথে ক্লাসে যেত, একসাথে খেত, অনেক রাত জেগে একসাথে গল্প করত। মজার ব্যাপার হল তারা দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও একে অপরের কাছে যথেষ্ট লজ্জা পেত, রাতুল যখন কাপড় চেঞ্জ করত, আবিদ তখন কম্পিউটারের মনিটরে দিকে তাকাত। আবার আবিদ যখন টাওয়েল পড়ে গোসল সেরে আসতো, রাতুল তখন বইয়ের পাতায় মুখ লুকাত, তারা দুজনই সতর্ক থাকতো যেন কখনো একে অপরের গায়ে হাত না লাগে, এভাবেই কেটে গেল অনেকটা সময়।
৯.
আজ রাতুলের জন্মদিন। তার মা তাকে ফোন করে উইশ করল, তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি কুরিয়ারে ছেলের জন্য গিফট আর একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
“রাতুল, কেমন আছিস তুই, হয়ত আমাদের ছেড়ে অনেক ভালই আছিস, I'm sorry রাতুল, আমরা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি, আমি মা হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাইছি, পারলে ক্ষমা করিস, তুই কোন পাপ করিস নি , যদি কেউ পাপ করে, তাহলে আমরা করেছি তোকে হোমে পাঠিয়ে, আমরা বাবা মা হয়ে তোকে বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের অক্ষমতা। সন্তান যদি বাবা মায়ের কাছেই আশ্রয় না পায়, তাহলে সে কোথায় যাবে, তুই Gay হোস আর যাই হ, তুই আমার সন্তান, এটাই তোর সবচেয়ে বড় পরিচয়, জানিনা তোর বাবা কখনো তার ভুল বুঝতে পারবে কিনা, আমি ছুটি পেলে তোকে দেখার জন্য রাজশাহীতে আসব, ভাল থাকিস। ...তোর মা”
মায়ের চিঠি পড়ে রাতুলের চোখে পানি চলে আসলো। কতদিন তার মায়ের মুখটি সে দেখেনা, মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তার সব বন্ধুরাও তাকে উইশ করলো, কিন্তু যে মানুষটি তার জন্য সবচেয়ে স্পেশাল, সেই তাকে উইশ করতে ভুলে গেল। রাতুলের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। তারপর ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখল আবিদ একটা মেয়ের সাথে হাসাহাসি করছে, দেখে রাতুলের গা জ্বলে গেল, তাহলে কি আবিদ তার জন্মদিনের কথা ভুলে গেল? রাত ১১টার সময় হঠাৎ আবিদ বাইরে থেকে এসেই রাতুলকে জোর করে ছাদে নিয়ে গেল। রাতুল বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখল পুরো ছাদ ভর্তি অসংখ্য রঙ্গিন মোমবাতি, এত অসাধারণ সারপ্রাইজ সে তার জীবনে কখনো পায়নি। আবিদ হাসছে।
-তোর মনে ছিল?
-কেন তুই একাই বুঝি মনে রাখতে পারিস?
-তাহলে সারাদিন উইশ করলি না কেন?
-তাহলে এই গাধাকে সারপ্রাইজ দিতাম কিভাবে?
-কি, আমি গাধা!
-হ্যাঁ, গাধাই তো
-গাধা হইলে ভাল, এখন আমার গিফট দে
রাতুল কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিদ তাকে চুমো খেতে শুরু করলো। রাতুল অবাক হয়ে,
-এটা কি হইল?
-I Love You রাতুল, তুই ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ, তুই পাশে থাকলে আমার প্রতিটা দিন স্পেশাল হয়ে যায়, তুই তো আমার জীবনের অক্সিজেন, অক্সিজেন ছাড়া কি মানুষ বাঁচে বল?
-কিন্তু তুই তো straight?
-মিথ্যে কথা, আমি তোকে ভালোবাসি সেই কলেজের প্রথম দিন থেকেই, তোর কষ্টগুলো তোর মত করেই আমি অনুভব করতাম কারণ I am also gay
-আমি confused, এই কথা তুই আমকে এতদিন বলিসনি কেন? তুই ভাল করেই জানতিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি
-Because, I was waitting for the right time, আমি চাইনি তখন আমরা কোন সম্পর্ক শুরু করি। মনে আছে তুই আমাকে বলেছিলি, তোকে যদি কোনদিন ঐ হোমে ফিরে যেতে হয়, তুই মরে যাবি। আমি তোকে নতুন করে কোন সমস্যায় ফেলতে চাইনি, তুই তোর ধর্ম, পরিবার আর নিজেকে নিয়েই অনেক কনফিউজড ছিলি, I didn't tell you because I care so much, I had to protect you
-তুই যদি আমাকে ভালবাসিস, তাহলে অনিতার সাথে মাখামাখি করছিলি কেন?
-সেটা তো তোকে রাগানোর জন্য, তুই কি জানিস তোকে রাগলে পাকা টমেটোর মত দেখায়, আর আসিফ স্যার যে তোর হাত ধরে কথা বলছিল?
-তুই না ...
-আমি কি?
-একটা আস্ত শয়তান
-আর তুই তো আমার লাল টুকটুকে লক্ষ্মী বৌ...
আবিদ রাতুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পকেট থেকে আংটি বের করলো।
-Will you be my life partner?
জবাবের অপেক্ষা না করেই রাতুলের হাতে আংটি পরিয়ে দিল। রাতুলও আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এই মানুষটিকে সে কখনো হারাতে চায় না। আজ সে আবিদকে ভালবাসবে তার সব কিছু উজাড় করে দিয়ে। এমন সময় বৃষ্টি এসে দুজনকে ভিজিয়ে দিল। বছরের প্রথম বৃষ্টি রাতুল আর আবিদের জীবনের সকল অতীত ধুয়ে সাফ করে উন্মোচিত করলো ভালোবাসার এক নতুন দিগন্ত।
The rain drops are conspiring with my hidden desire.
Just look...
The soft gentle breeze is saying something extra ordinary
-Why this distance between us?
Just look...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন