আচ্ছা এতো রাত পর্যন্ত ফেসবুকে কার সাথে এতো চ্যাট করিস ইরাদ ভাইয়া?
ইরাদ হচ্ছে আমার খালাত ভাই, আমাদের এখানেই থেকে লেখাপড়া করে। আমার থেকে বছর দেড়েকের বড় হবে। তবে সম্পর্ক বন্ধুর মতই। আমরা এক রুমেই আলাদা আলাদা খাটে থাকি।
-হ, খালি আমি ফেসবুকে থাকি আর তুই কই থাকিস বল দেখি? সদরঘাটে?
হায় হায় ইরাদ ভাইয়ার কথায় মনে পড়ছে, পলাশ এতক্ষণ ধরে অনলাইনে অপেক্ষা করছে। পলাশের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় একমাস এখনো হয়নি। আমরা একই শহরে থাকি। তবে এখনও কেউ কাউকে দেখিনি এমনকি ফোনেও কথা বলিনি। তবে সে যে আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি আকারে ইঙ্গিতে বুঝতে পারি বাট আমি যে সেটা বুঝতে পারি বা পেরেছি সেটা তাকে কখনও বুঝতে দেইনা। ফেসবুকে লগইন করে দেখি ইনবক্সে পলাশের মেসেজে ভরে আছে।
-হাই, স্যরি লেট হয়ে গেল
-আসার কি দরকার ছিল? না আসলেই পারতে >-<
-ওরে বাবুটা, রাগু রাগু করেছ?
-ঢং করবা নাতো, আরে শুনই না বাসায় কি হইছে, আমাদের কাজের মেয়েটার হাত কেটে গেছে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে। ওরে নিয়া বাসার পাশের ফার্মেসীতে গিয়েছিলাম ব্যান্ডেজ করাতে সেই জন্যইতো এতো লেট হইছে।
-ওহ তাই বল।(নিজের মিথ্যা বলার প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হলাম)
-কি হল শিমুল, চুপ কেন? বিজি?
-না বিজি না, নেট প্রবলেম।
আবারও মিথ্যা, আমি খেয়াল করছি ফেসবুক ব্যবহারের পর থেকে আমার দিনদিন মিথ্যা বলার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
-শিমুল বল
-দেখা করবেনা?
-করব, তবে সেটা আরও কিছুদিন পরে।
-তোমার নাম্বারটা দাওনা শিমুল। খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
-উফফ তোমাকে কত করে বুঝালাম যতদিন না আমরা সরাসরি দেখা করছি ততদিন কেউ কারও ছবি এমনকি কণ্ঠস্বরও শুনবনা। যখন সরাসরি দেখা করতে যাব তখন দেখবে এবং শুনবে। অন্যরকম একটা থ্রিল ফিল হবে তখন।
-তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে যে!
-দেখবেতো, আমি কি না করছি দেখা করবনা । আচ্ছা আমাকে দেখে যদি তোমার ভাল না লাগে তখন কি করবে? আমিতো সুন্দর না
-আমি কি বলেছি তোমাকে সুন্দর হতে হবে, মন সুন্দর হলেই চলবে
-বহুল প্রচলিত চ্যাট ডায়ালগ মারলা পলাশ
-বহুল প্রচলিত হোক আর সদ্য ভূমিষ্ঠ ডায়ালগই হোক এটা কিন্তু আমার মনের কথা।
-তাই, খুব ভাল। এবার যেতে হবে।
-এতো তাড়াতাড়ি?
-ওমা সকালে ক্লাস আছেতো
-আচ্ছা, শুভ রাত্রি সোনা
-শুভ রাত্রি।
ইদানীং মাঝে মাঝে পলাশ আমাকে সোনা বলে ডাকে। আমি এখনও সোনা ডাকিনি তবে ওর মুখ থেকে ডাকটা শুনতে খারাপ লাগেনা। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। পাশের বিছানায় ইরাদ এখনও মোবাইল টিপছে। আচ্ছা ইরাদ ভাইয়া তুই দিনে কয়টা মিথ্যা বলিস?
-আমি মিথ্যা বলিনা
-ফেসবুকেও বলিসনা?
-না
-আমাকেতো মিথ্যা দিয়াই আলাপ শুরু করতে হয়।
-কিরকম?
-যেমন কেউ জিজ্ঞাসা করল আজ কি দিয়া ডিনার করেছ, আমি বানিয়ে বানিয়ে ভাল ভাল ৩/৪টা আইটেমের নাম বলে দেই।
-মিথ্যা বলার দরকার কি? যা খেয়েছিস তাই বললেইতো হয়।
-হ আজকে আলু ভর্তা, ডাল, পেঁপের তরকারী দিয়া খেয়েছি। এগুলো যদি বলি তাইলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে?
-থাকবেনা কেন?
-তোকে বুঝাতে পারবনা
-ওকে আমাকে আর বুঝাতে হবেনা, এবার ঘুমা।
পরদিন রাতে আবার যথারীতি সেই চ্যাট, কি ব্যাপার আজ পলাশ আসছে না যে। ওকে অনেকগুলা মেসেজ দিয়া রাখলাম। তার অনলাইন আক্টিভেশন দেখলাম 10hours ago অর্থাৎ দুপুরের পরে আর ফেসবুকে ঢুকে নাই। এদিকে বাসায় এসে শুনি ইরাদ ভাইয়াও তার বাড়ি গেছে কি একটা জরুরি কাগজ আনতে কাল আসবে। খুব একা একা লাগছে। পলাশের জন্য দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। বারবার নিজেকে নিজেই দোষ দিচ্ছি কেন পলাশের নাম্বারটা রাখলাম না। এতো নাটকীয়তা না করলেই হত। এই প্রথম আমি বুঝলাম আমি কাউকে ফিল করছি। কারও জন্য আমার মনে অন্যরকম একটা কষ্ট হচ্ছে। আমি পলাশকে ভালবেসে ফেলেছি নাকি? মাত্র একমাসেই? যে ছেলে দিনের পর দিন আমার পাশের বিছানায় থেকেছে।যার সাথে গল্প করে করে প্রতিদিন ঘুমাই তার কথা আমার একবারও মনে পড়ছেনা। আমার মনে পড়ছে মাত্র একমাসের প্রায় অচেনা এক ছেলেকে। একেই কি ভালবাসা বলে? বারবার চ্যাট লিস্ট রিফ্রেশ করছি এই বুঝি পলাশের কাছ থেকে মেসেজ এল কিন্তু না পলাশের কোন মেসেজ এলোনা। পরদিন বিকেলে ফেসবুকে গিয়ে দেখি পলাশ মেসেজ দিছে
'সোনা আমি একটা ঝামেলায় পরে গেছিলাম তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। রাতে কথা হবে'।
মেসেজটা দেখে মনে হল আমি আমার বুকের উপর থেকে প্রকাণ্ড একটা পাথর সরে গেছে। সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি ইরাদ ভাইয়াও চলে এসেছে। আজকে আমি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনলাইনে বসে আছি। পলাশ এসে হাই বলার সাথে সাথেই আমি অন্য কোন কথা না বলেই বললাম আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
-এতদিনপর তোমার মনে দয়া হল দেখি এই অধমের।
-জন্য ফাজলামি রাখ পলাশ, আমি সিরিয়াস।
ইরাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম পরশু কি বার। সে বলল শুক্রবার। পরে আমি পলাশকে বললাম আগামী শুক্রবার অমুক রেস্টুরেন্টের অত নাম্বার টেবিলে ঠিক বিকেল ৫টায় থাকবে। যে আগে যাব সে গিয়ে ওই টেবিলে বসব। সে বলল যদি গিয়ে দেখি ওই টেবিল খালি নাই তখন? খালি থাকার সম্ভাবনাই বেশি কারণ ওই রেস্টুরেন্টে খুব একটা ভিড় থাকেনা তারপরও যদি খালি না থাকে তাইলে এর পাশেরটায় বসবে। পরদিন ইরাদ ভাইয়াকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম পলাশের জন্য টিশার্ট কিনতে কারণ আমার পছন্দের উপর আমার মোটেও ভরসা নাই। তাকে বললাম আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা টিশার্ট কিনব শুনে সে বলল সেও নাকি তার কোন এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা গিফট কিনবে। ভালই হল একসাথে কিনা যাবে। ইরাদ যেটাই পছন্দ করে সেটাই আমার বাজেটের বাইরে গিয়ে পরে। বিরক্ত হয়ে ওরে বললাম,টাকা কি নদীর জল দিয়া ভেসে আসে, এতো দাম দিয়া গিফট দিব। এই নে টাকা, এই টাকার মধ্যে একটা পছন্দ করে দে। শেষমেশ টিশার্ট একটা কিনা হল আর তার বন্ধুর জন্য সে ক্রিস্টালের একটা তাজমহল কিনল। ওরে ঠাট্টা করে বললাম কিরে মেয়ে বন্ধু নাকি একেবারে তাজমহল দিয়ে দিচ্ছিস? সে হেঁসে উড়িয়ে দিল।
শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে স্মরণকালের সর্বোচ্চ মাঞ্জা মেরে সাড়ে ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। ভাগ্যিস ইরাদ ভাইয়া বাসায় ছিলনা নইলে কি মনে করত কে জানে। বিকেল ৫.১৫মিনিটে নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের নির্ধারিত টেবিলে তাকিয়ে দেখি একজন আমার দিকে পিঠ করে বসে আছে। আমার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে লোকটা আমার পরিচিত অবশ্য পিছনদিক থেকে দেখলে আমার সবাইরেই পরিচিত মনে হয়। একবার এক মহিলাকে পেছন দিক থেকে দেখে আম্মু ভেবে যা এক কেলেঙ্কারি সৃষ্টি হয়েছিল সেটা না বলাই ভাল। ধুকধুক বুক নিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।আমার মনে হচ্ছে আমার পা চলছেনা, হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। কোনমতে টেবিলের সামনে গিয়ে হাই বলে যার মুখের দিকে তাকালাম তাকে দেখে আমার বেড়ে যাওয়া হার্টবিট মনেহয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছিল।
একমাস পর...
আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারায় সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন এসেছে। আমাদের মানে আমার আর ইরাদের। যেটা আমি আর ইরাদ ছাড়া আর কেউ জানেনা। যেমন- আগে আমরা ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতাম আর এখন দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে ঘুমাই। আমাদের আর এখন দুই বিছানায় দুটা মশারি টানাতে হয়না,যেকোন একটাতেই টানালেই হয়। সিঙ্গেল খাটে আমার আর ইরাদের দিব্যি জায়গা হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি ওর বুকেই ঘুমাই। এখন আর আগের মত নির্দিষ্ট টাইমে কেউ ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকিনা কারণ যার জন্য ফেসবুকে যাওয়া তাকে এখন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। কিছুদিন আগে ইরাদের সাথে ঝগড়া এক রাতে আমাকে অন্য মশারি টানাতে হয়েছিল। ওই খাট থেকে ইরাদ আমাকে ঐসময় চ্যাটে যেভাবে নক করত ঠিক সেভাবে মুখে হাই বলে যাচ্ছে।আমি কোন উত্তর দিচ্ছিনা। শেষে বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে ওরে হাই বললাম। আমার ধমকে সে আরও দিগুণ উৎসাহে দ্বিতীয় প্রশ্ন করল।
-এতো লেট করে আসলা যে, কাজের মেয়ের হাত কেটে গেছিল?
আমি আর রাগ ধরে রাখতে পারলামনা, হেসে দিলাম। আমি অবশ্য এমনিতেই ওর উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারিনা। এভাবেই চলছে আমাদের মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি আর ভালবাসা।
ইরাদ হচ্ছে আমার খালাত ভাই, আমাদের এখানেই থেকে লেখাপড়া করে। আমার থেকে বছর দেড়েকের বড় হবে। তবে সম্পর্ক বন্ধুর মতই। আমরা এক রুমেই আলাদা আলাদা খাটে থাকি।
-হ, খালি আমি ফেসবুকে থাকি আর তুই কই থাকিস বল দেখি? সদরঘাটে?
হায় হায় ইরাদ ভাইয়ার কথায় মনে পড়ছে, পলাশ এতক্ষণ ধরে অনলাইনে অপেক্ষা করছে। পলাশের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় একমাস এখনো হয়নি। আমরা একই শহরে থাকি। তবে এখনও কেউ কাউকে দেখিনি এমনকি ফোনেও কথা বলিনি। তবে সে যে আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি আকারে ইঙ্গিতে বুঝতে পারি বাট আমি যে সেটা বুঝতে পারি বা পেরেছি সেটা তাকে কখনও বুঝতে দেইনা। ফেসবুকে লগইন করে দেখি ইনবক্সে পলাশের মেসেজে ভরে আছে।
-হাই, স্যরি লেট হয়ে গেল
-আসার কি দরকার ছিল? না আসলেই পারতে >-<
-ওরে বাবুটা, রাগু রাগু করেছ?
-ঢং করবা নাতো, আরে শুনই না বাসায় কি হইছে, আমাদের কাজের মেয়েটার হাত কেটে গেছে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে। ওরে নিয়া বাসার পাশের ফার্মেসীতে গিয়েছিলাম ব্যান্ডেজ করাতে সেই জন্যইতো এতো লেট হইছে।
-ওহ তাই বল।(নিজের মিথ্যা বলার প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হলাম)
-কি হল শিমুল, চুপ কেন? বিজি?
-না বিজি না, নেট প্রবলেম।
আবারও মিথ্যা, আমি খেয়াল করছি ফেসবুক ব্যবহারের পর থেকে আমার দিনদিন মিথ্যা বলার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
-শিমুল বল
-দেখা করবেনা?
-করব, তবে সেটা আরও কিছুদিন পরে।
-তোমার নাম্বারটা দাওনা শিমুল। খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
-উফফ তোমাকে কত করে বুঝালাম যতদিন না আমরা সরাসরি দেখা করছি ততদিন কেউ কারও ছবি এমনকি কণ্ঠস্বরও শুনবনা। যখন সরাসরি দেখা করতে যাব তখন দেখবে এবং শুনবে। অন্যরকম একটা থ্রিল ফিল হবে তখন।
-তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে যে!
-দেখবেতো, আমি কি না করছি দেখা করবনা । আচ্ছা আমাকে দেখে যদি তোমার ভাল না লাগে তখন কি করবে? আমিতো সুন্দর না
-আমি কি বলেছি তোমাকে সুন্দর হতে হবে, মন সুন্দর হলেই চলবে
-বহুল প্রচলিত চ্যাট ডায়ালগ মারলা পলাশ
-বহুল প্রচলিত হোক আর সদ্য ভূমিষ্ঠ ডায়ালগই হোক এটা কিন্তু আমার মনের কথা।
-তাই, খুব ভাল। এবার যেতে হবে।
-এতো তাড়াতাড়ি?
-ওমা সকালে ক্লাস আছেতো
-আচ্ছা, শুভ রাত্রি সোনা
-শুভ রাত্রি।
ইদানীং মাঝে মাঝে পলাশ আমাকে সোনা বলে ডাকে। আমি এখনও সোনা ডাকিনি তবে ওর মুখ থেকে ডাকটা শুনতে খারাপ লাগেনা। মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। পাশের বিছানায় ইরাদ এখনও মোবাইল টিপছে। আচ্ছা ইরাদ ভাইয়া তুই দিনে কয়টা মিথ্যা বলিস?
-আমি মিথ্যা বলিনা
-ফেসবুকেও বলিসনা?
-না
-আমাকেতো মিথ্যা দিয়াই আলাপ শুরু করতে হয়।
-কিরকম?
-যেমন কেউ জিজ্ঞাসা করল আজ কি দিয়া ডিনার করেছ, আমি বানিয়ে বানিয়ে ভাল ভাল ৩/৪টা আইটেমের নাম বলে দেই।
-মিথ্যা বলার দরকার কি? যা খেয়েছিস তাই বললেইতো হয়।
-হ আজকে আলু ভর্তা, ডাল, পেঁপের তরকারী দিয়া খেয়েছি। এগুলো যদি বলি তাইলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে?
-থাকবেনা কেন?
-তোকে বুঝাতে পারবনা
-ওকে আমাকে আর বুঝাতে হবেনা, এবার ঘুমা।
পরদিন রাতে আবার যথারীতি সেই চ্যাট, কি ব্যাপার আজ পলাশ আসছে না যে। ওকে অনেকগুলা মেসেজ দিয়া রাখলাম। তার অনলাইন আক্টিভেশন দেখলাম 10hours ago অর্থাৎ দুপুরের পরে আর ফেসবুকে ঢুকে নাই। এদিকে বাসায় এসে শুনি ইরাদ ভাইয়াও তার বাড়ি গেছে কি একটা জরুরি কাগজ আনতে কাল আসবে। খুব একা একা লাগছে। পলাশের জন্য দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। বারবার নিজেকে নিজেই দোষ দিচ্ছি কেন পলাশের নাম্বারটা রাখলাম না। এতো নাটকীয়তা না করলেই হত। এই প্রথম আমি বুঝলাম আমি কাউকে ফিল করছি। কারও জন্য আমার মনে অন্যরকম একটা কষ্ট হচ্ছে। আমি পলাশকে ভালবেসে ফেলেছি নাকি? মাত্র একমাসেই? যে ছেলে দিনের পর দিন আমার পাশের বিছানায় থেকেছে।যার সাথে গল্প করে করে প্রতিদিন ঘুমাই তার কথা আমার একবারও মনে পড়ছেনা। আমার মনে পড়ছে মাত্র একমাসের প্রায় অচেনা এক ছেলেকে। একেই কি ভালবাসা বলে? বারবার চ্যাট লিস্ট রিফ্রেশ করছি এই বুঝি পলাশের কাছ থেকে মেসেজ এল কিন্তু না পলাশের কোন মেসেজ এলোনা। পরদিন বিকেলে ফেসবুকে গিয়ে দেখি পলাশ মেসেজ দিছে
'সোনা আমি একটা ঝামেলায় পরে গেছিলাম তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। রাতে কথা হবে'।
মেসেজটা দেখে মনে হল আমি আমার বুকের উপর থেকে প্রকাণ্ড একটা পাথর সরে গেছে। সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখি ইরাদ ভাইয়াও চলে এসেছে। আজকে আমি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অনলাইনে বসে আছি। পলাশ এসে হাই বলার সাথে সাথেই আমি অন্য কোন কথা না বলেই বললাম আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
-এতদিনপর তোমার মনে দয়া হল দেখি এই অধমের।
-জন্য ফাজলামি রাখ পলাশ, আমি সিরিয়াস।
ইরাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম পরশু কি বার। সে বলল শুক্রবার। পরে আমি পলাশকে বললাম আগামী শুক্রবার অমুক রেস্টুরেন্টের অত নাম্বার টেবিলে ঠিক বিকেল ৫টায় থাকবে। যে আগে যাব সে গিয়ে ওই টেবিলে বসব। সে বলল যদি গিয়ে দেখি ওই টেবিল খালি নাই তখন? খালি থাকার সম্ভাবনাই বেশি কারণ ওই রেস্টুরেন্টে খুব একটা ভিড় থাকেনা তারপরও যদি খালি না থাকে তাইলে এর পাশেরটায় বসবে। পরদিন ইরাদ ভাইয়াকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম পলাশের জন্য টিশার্ট কিনতে কারণ আমার পছন্দের উপর আমার মোটেও ভরসা নাই। তাকে বললাম আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা টিশার্ট কিনব শুনে সে বলল সেও নাকি তার কোন এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা গিফট কিনবে। ভালই হল একসাথে কিনা যাবে। ইরাদ যেটাই পছন্দ করে সেটাই আমার বাজেটের বাইরে গিয়ে পরে। বিরক্ত হয়ে ওরে বললাম,টাকা কি নদীর জল দিয়া ভেসে আসে, এতো দাম দিয়া গিফট দিব। এই নে টাকা, এই টাকার মধ্যে একটা পছন্দ করে দে। শেষমেশ টিশার্ট একটা কিনা হল আর তার বন্ধুর জন্য সে ক্রিস্টালের একটা তাজমহল কিনল। ওরে ঠাট্টা করে বললাম কিরে মেয়ে বন্ধু নাকি একেবারে তাজমহল দিয়ে দিচ্ছিস? সে হেঁসে উড়িয়ে দিল।
শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে স্মরণকালের সর্বোচ্চ মাঞ্জা মেরে সাড়ে ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। ভাগ্যিস ইরাদ ভাইয়া বাসায় ছিলনা নইলে কি মনে করত কে জানে। বিকেল ৫.১৫মিনিটে নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের নির্ধারিত টেবিলে তাকিয়ে দেখি একজন আমার দিকে পিঠ করে বসে আছে। আমার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে লোকটা আমার পরিচিত অবশ্য পিছনদিক থেকে দেখলে আমার সবাইরেই পরিচিত মনে হয়। একবার এক মহিলাকে পেছন দিক থেকে দেখে আম্মু ভেবে যা এক কেলেঙ্কারি সৃষ্টি হয়েছিল সেটা না বলাই ভাল। ধুকধুক বুক নিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।আমার মনে হচ্ছে আমার পা চলছেনা, হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। কোনমতে টেবিলের সামনে গিয়ে হাই বলে যার মুখের দিকে তাকালাম তাকে দেখে আমার বেড়ে যাওয়া হার্টবিট মনেহয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছিল।
একমাস পর...
আমাদের দৈনন্দিন জীবনধারায় সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন এসেছে। আমাদের মানে আমার আর ইরাদের। যেটা আমি আর ইরাদ ছাড়া আর কেউ জানেনা। যেমন- আগে আমরা ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতাম আর এখন দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে ঘুমাই। আমাদের আর এখন দুই বিছানায় দুটা মশারি টানাতে হয়না,যেকোন একটাতেই টানালেই হয়। সিঙ্গেল খাটে আমার আর ইরাদের দিব্যি জায়গা হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি ওর বুকেই ঘুমাই। এখন আর আগের মত নির্দিষ্ট টাইমে কেউ ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকিনা কারণ যার জন্য ফেসবুকে যাওয়া তাকে এখন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। কিছুদিন আগে ইরাদের সাথে ঝগড়া এক রাতে আমাকে অন্য মশারি টানাতে হয়েছিল। ওই খাট থেকে ইরাদ আমাকে ঐসময় চ্যাটে যেভাবে নক করত ঠিক সেভাবে মুখে হাই বলে যাচ্ছে।আমি কোন উত্তর দিচ্ছিনা। শেষে বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে ওরে হাই বললাম। আমার ধমকে সে আরও দিগুণ উৎসাহে দ্বিতীয় প্রশ্ন করল।
-এতো লেট করে আসলা যে, কাজের মেয়ের হাত কেটে গেছিল?
আমি আর রাগ ধরে রাখতে পারলামনা, হেসে দিলাম। আমি অবশ্য এমনিতেই ওর উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারিনা। এভাবেই চলছে আমাদের মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি আর ভালবাসা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন