২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

লাইফ উইদাউট লাভ - ১৬

পরের দিন সকালে আমরা সবাই জড়ো হয়েছি মধ্যির ডাঙায়। প্লানটা দ্বীপ্ত ভাইয়ার্। মিয়া ভাই গাইগুই করছিলো। কিন্তু আমি দ্বীপ্ত ভাইয়া র সাথে তাল দেয়া শুরু করলাম। রহিম কিছু না বুঝেও বললো, অনেক মজা হবেনে। আমরা বনভোজনে এসেছি।

ভাইয়া বললেন, বনভোজনটা সুন্দরবনে গিয়েই করলে হত। আর দ্বীপ্ত তুই যে এত সুন্দরবন দেখার বায়না ধরতি , আর এখানে এসে তো একবারও বলিস না।

- এতদিন বলতাম। এখন সুন্দরবন দেখানোর দ্বায়িত্ব তোর্। তোর যা ভাব দেখছি তাতে মনে হয় না সুন্দরবনে নিয়ে যাবি।

- নিয়ে যাবো না মানে । আগামীকালই নিয়ে যাবো।
- দেখা যাবে ঘুম কুমার্।

মধ্যির ডাঙায় বড় ঝাকড়া গাছটার নিচে মাদুর পেতে বসেছে ফুফু আর তার বাল্য কালের সখী সুখী ফুফু। সখী ফুফু গতকাল ভাইয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছে। সকালে ফুফুর সাথে দেখা করতে আসে। আমরা তাকেও যেতে দেইনি। রহিমকে নিয়ে মিয়াভাই মাটিতে চুলা খুচছে। দ্বীপ্ত ভাইয়া আলুগুলোর খোসা ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। আমি মাংসগুলো ধুয়ে আনলাম পুকুর থেকে। দেশী মোরগের মাংস দিয়ে ভুনা খিঁচুড়ি রান্না হবে। বাবুর্চি আমাদের দ্বীপ্ত ভাইয়া। সকালে মোরগটা ধরতে গিয়ে ঘন্টাখানেক লেগে গেলো। রহিম মাছ ধরা খ্যাপলা জাল ছুড়েও ধরতে পারে নাই। দ্রুত ছুটে যায়। শেষে মর্জিনা রান্নাঘরের দরজা খোলা রেখে একমুঠো চাউল রেখে এলো। ডান বাম ক্লিয়ার দেখে মোরগটা রান্নাঘরে ঢুকলো। মর্জিনা টুক করে দরজার শিকল তুলে দিলো। ঘরের ভিতর আগে থেকে ওঁত পেতে আছি আমি আর রহিম।

ফুফু তো কিছুতেই আসবে না। ঘর দোর থাকতে বন বাঁদাড়ে গিয়ে কেন রান্না করতে হবে। এইসব পাগলামি কে কবে শুনেছে। মানুষে বলবে কি ! সে সুখী ফুফুকে সাক্ষি মানে। সুখী ফুফু কিছুই বলে না। এখানে এসে মর্জিনা আলুকাটা শুরু করেছিলো। দ্বীপ্ত তাকে ফুফুদের পিছে গিয়ে বসতে বললো। আজ মেয়েরা কোন কাজ করবে না। আমরাই সব করবো। শুনে সুখী ফুফুও গালে হাত দিলো। পাগল ছেলেরা বলে কি! আমরা থাকতে তোমরা রাধবে কেন! আর মর্দ মানুষ কি রাধতে পারে নাকি। কোন দিন তো চুলোর পিঠে যাও নাই। ফুফু বলেন, গাছ তলায় বসে রান্না করলে ভুতে নজর দেয়। পেট খারাপ হয় তাতে। আমরা শুনে হাসি। ফুফু সেই আগের জমানার বিশ্বাসেই রয়ে গেছে।

রান্না শুরু হবে। কিন্তু আমরা কিছুতেই চুলা ধরাতে পারি না। সাদা ধোয়া কালো ধোয়া গাছের মাথা গিয়ে ছোয়। কিন্তু আগুন জলেনা। আমরা চারজনে পারলে ফু দেই একসাথে। আমাদের কান্ড দেখে ফুফুরা বাচ্চা মেয়ের মত হেসে উঠলো। শেষপর্যন্ত মর্জিনা চুলা ধরিয়ে দিলো। ফুফুরা গভির মনোযোগ নিয়ে রান্না বান্না দেখতে লাগলো। তারা তো বিশ্বাস করে নি যে শেষ পর্যন্ত আমরা রান্না করতে পারবো। আসার সময় ফুফু মাকে বলে এসেছে আমাদের জন্য রান্না করে রাখতে। কিন্তু রান্না শেষ হলো।

আমরা সবাই মধ্যির ডাঙার পুকুরে গা ধুয়ে নিলাম এক এক করে রহিমের গামছা পরে। রহিমের জন্য মিয়া ভাই যে নতুন জামাটা এনেছে এবার সেটা সে পরে এসেছে। বেচারার মন খারাপ। নতুন জামাটায় কালি লেগে গেছে। মর্জিনা বলেছে বাড়ি গিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে দেবে। আমরা খেতে বসলাম। রান্না খুবই ভালো হয়েছে। ভুনা খিচুড়ি আমি দুই প্লেট খেলাম। আমার তো তার হাতের রান্না খারাপ লাগতেই পারে না। মর্জিনা ফিসফিস করে রহিমকে বলে কাঁচা মরিচ নেই না। ঝাল কম হইছে। ফিসফিস করলেও আমরা শুনে ফেললাম। ফুফু বললেন, মর্জিনা তোকে বলেছি খাবারের বদনাম করবে না। গুনা হয়। হাদিসে নবীজী বলেছেন, তোমরা খাবার পছন্দ না হলে খেয়ো না কিন্তু খাবারের বদনাম করো না।

মর্জিনা ভয় পেয়ে মিনমিন করে খাবার ভালো হয়েছে। খাবার তো আমি খারাপ বলিনি। দ্বীপ্ত ভাইয়া সলাজ হেসে বলল, আমি ঝালের অনুমানটাই ঠিক করতে পারিনি। আর সব ঠিক আছে।
ফুফু বললেন, ঠিক আছে। তোমার রান্না তো অনেক ভালো। আর শহরের মানুষ ঝাল কম খায় আমরা জানি। তাই তো রান্নার সময় ঝাল কম দেই।
মিয়া ভাই বাড়িতে আগেই বলেছিলো যেন ঝাল কম দিয়ে রান্না করা হয়। ফুফুর কথা শুনে মিয়াভাই হা হা হা করে হেসে ঊঠলেন, দ্বীপ্ত এখন কি ভাবছে জানো। ভাবছে এই যদি কম হয় তবে বেশীর নমুনা কি !
দ্বীপ্ত ভাইয়া প্রতিবাদ করে বললেন , কখনোই না। রান্না আমার খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে মুলা বেগুন দিয়ে ভেটকি মাছের কারিটা জোস লাগছে। ফুফু আমাকে রান্নাটা শিখিয়ে দেবেন?
- কারি কি ? ফুফু জানতে চাইলেন।

মিয়া ভাই বললেন, তরকারিকে ইংরেজীতে কারি বলে।
রহিম বলে উঠলো, তাই। ইংরেজী এত সুজা !
আমরা গ্রামের অন্যান্য বাড়ির তুলনায় ঝাল কম খাই। কিন্তু এটুকুও দ্বীপ্ত ভাইয়ার জন্য বেশী হয়ে যায়। আমি প্রথম থেকেই লক্ষ্য করে দেখেছি সে ভাত খাওয়ার মাঝে ঘনঘন পানি খায়। মাছ মাংসে ঝোল ভাত দিয়ে মুছে নেয়। ঝালের উত্তাপে তার লাল ঠোট আরো বেশি লাল হয়ে যায়। শীতের দুপুরে তার শুভ কপোলে মুক্ত দানার মত বিন্দু ঘাম জমে।  ু

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?