সুখে আছে যারা , সুখে থাক তারা ...
রাতটা সুখেই কেটে গেলো। ভোরের আলো কখন যে জানালার ফাঁক গলে ঘরে উঁকি দেয়া শুরু করেছে বলতে পারবো না। ঘুম ভাঙলো দ্বীপ্ত ভাইয়ার মৃদু ঝাঁকুনিতে। আস্তে আস্তে করে ডাকছে, এই শুভ্র। আমি চোখ মেললাম। গত রাতের ক্লান্তি এখনো শরীরে। চারটার কিছু আগে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমি দ্বীপ্ত ভাইয়ার ঠোটে নিজের ঠোট চেপে ধরলাম।
চুমুটা বেশিক্ষণ দীর্ঘায়িত হলো না। দরজায় রহিমের ডাকাডাকি শুনে দ্বীপ্ত ভাইয়া আমার ঘুম ভাঙায়। তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লাম। লুঙ্গি কই গেলো। রেখেছিলাম কোথায়। খুজে পাই না। কম্বলের ভিড়ে খুঁজলাম দুজন। আরে এটা তো দ্বীপ্ত ভাইয়ার প্যান্ট । লুঙ্গি কই। লুঙ্গি খুঁজে পেলাম পালংকের নিচে । টপাক করে আরেকটা চুমু খেলাম দ্বীপ্ত ভাইয়াকে।
বাইরে এসে দেখি ভাইয়া আর আব্বা দুজনেই ফিরে এসেছেন। মামলায় আমাদের জয় হয়েছে। হাত মুখ ধুয়ে খুলনা টাউন থেকে আনা সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারি থেকে আনা মিষ্টি খেলাম। মিয়া ভাই ঘুমাতে গেলো। দ্বীপ্ত ভাইয়া বললেন, চল ভোরের হাওয়ায় কিছুক্ষণ খালি পায়ে ঘুরে আসি। কুয়াশা কাটেনি এখনো। ঠান্ডা নেই। আমরা দুজন হাত ধরে হাঁটছি। আজ সোয়েটার পরেছি। দ্বীপ্ত ভাইয়ের গায়ে সাদা কালো ডোরাকাটা সোয়েটার্। পেছনে হট হট শব্দ শুনে আমরা রাস্তার সাইডে সরে দাঁড়ালাম। রহিম গরু গুলোকে তাড়িয়ে মাঠে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আস্তে হাটছি। রহিম আমাদের ছাড়িয়ে গেলো। কালো দামড়াটা অনেক বেয়াড়া। এর গাছ খায়, ওর বেড়া ভাঙে। ওকে কন্ট্রোল করতে রহিমকে ছুটতে হয়। সামনের বকরি ইদে কুরবানি দেয়ার জন্য গরুটাকে রাখা হয়েছে।
পায়ের নিচে শিশির ভেজা ঘাস। দ্বীপ্ত ভাইয়া মনে হয় বহুকাল পরে ঘাসে পা দিয়েছে। পায়ের নিচে ঘাসের সুড়সুড়ি লাগার অভিব্যক্তি তার চোখে মুখে ফুটে উঠছে। কথা বলতে বলতে আমরা মধ্যির ডাঙা পর্যন্ত চলে এসেছি। মধ্যির ডাঙায় কেউ থাকে না। উচু উচু খেজুর গাছ আছে অনেকগুলো। গফুর গাছি গাছ থেকে রস নামাচ্ছে। একজায়গায় মাটির ভাড় জড়ো করে রাখা । অধিকাংশই খালি। বাকি গুলো ভরা। আমাদের দেখে মাঝ গাছ থেকে গফুর গাছি ডাক দিলো কিডা যায় ?
- এইতো আমরা। রস কখান হলো আইজকে গফুর কা।
গাছ থেকে গাছি ততক্ষনে নেমে এসেছে। আধাভরা একটা ভাড়ে হাতের ভাড় থেকে রস ঢালতে ঢালতে বললো, রস হলো এই ধরো সাতখান। আরো দুখোনের মত হবে। সাথে কিডা ?
- ভাইয়ার বন্ধু।
- খুইল্লে শহরে বাড়ি ?
- না ঢাকায়। -
ও ঢাহায়। রস খাও। দাড়াও দিতিছি। -
না থাক।
- আরে থাকপে ক্যান। সাথে শহরের কুটুম। আমাগে শাহ জালাল ভাইয়ের বন্ধু মানুষ।
দ্বীপ্ত ভাইয়া হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ালো। গাছি গলায় ঝোলানো গামছায় ভালো করে হাত মুছে হাত মেলালো। গাছিকে কখনো চাদর কি জাম্পার পরতে দেখা যায় না। পাতলা হাফ হাতা ফতুয়ার উপর গামছা খানাই তার শীতের সাজ। একটা ভাড়ের গলায় এলুমিনিয়ামের গ্লাস বাঁধা। গ্লাস টা ভালো করে ধুয়ে এনে তাতে রস ভরে বাড়িয়ে দিলো রস। গাছি বললো, তোমরা রস খাতি থাকো। আমি ভাড় খান পাইতে দিয়ে আসতিছি। উলা রস দিয়ে গুড় বানাতিছি এবার্।
ঠান্ডা শীতল রস বেশ কিছুটা সময় নিয়ে খেলো দ্বীপ্ত ভাইয়া। যখন গ্লাস থেকে মুখ তুললো দেখলাম তার উপরের ঠোটে রসের সাদা ফেনা লেগে আছে। আমি আরেকটু হলে মুছেই দিতাম। কিন্তু গফুর গাছি চলে আসায় হাত সরিয়ে পেছনের দিকে একটা জমি দেখিয়ে বললাম , ঐটা আমার জমি। দ্বীপ্ত ভাইয়া হাতের তালুতে মুখ মুছে সেদিকে তাকালো। কুয়াশার উপরে সুর্য মামা হাসি মুখে ভেসে উঠলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন