২৭ মে, ২০১৪

সেলিব্রেটি লেখকঃ অরণ্য রাত্রি

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মাঝেই অন্ধকার হয়ে যাবে। পশ্চিম আকাশ ইতিমধ্যে লাল রঙ্গে রাঙ্গা হয়ে গিয়েছে। হাতে একটি কফি মগ নিয়ে জানালার ধারে বসে আছি।এই সময়টায় জন বাসায় থাকে না। কাজে যায়। আর আমি একা বাসায় থাকি। চেষ্টা করছি একটি কাজ যোগার করার।একা একা খুব বিষণ্ণ লাগে।কখনো রান্না করি , কখনো বা ঘর গুছাই। টিভি দেখতেও ভাল লাগে না। শুধু অতীতের কথা মনে পড়ে । মনে পরে আমার জীবনের সেই অন্ধকার অধ্যায়ের কথা। ঢাকায় থাকার দিন গুলোর কথা। আনমনা হয়ে যাই আমি। কখনো রাগ , ক্ষোভে ফেটে পড়তে ইচ্ছা করে। কখনো কষ্টে নীল হয়ে যাই। আমি সিডনি তে আছি ৬ মাস হলও। সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করতে এসেছি। প্রথম ১ মাস পাগলের মত ছিলাম। অন্ধকার আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছিল।সেই সব স্মৃতি আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল। সারারাত গে ক্লাবে পড়ে থাকতাম। পড়াশোনা হচ্ছিলো না। আমি বুঝতে পারলাম এইভাবে চলতে থাকলে আমাকে বাংলাদেশেই ফিরে জেতে হবে। কিন্তু কোন ভাবেই আমি আর ঢাকা যাবো না।মনে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছিলেম। তক্ষুনি জনের সাথে আমার পরিচয়।

জন অদ্ভুত ধরনের ভাল মানুষ। আমরা কয়েকদিন ডেট করলাম। অর সঙ্গ আমার ভাল লাগছিলও। কিন্তু এক সময় মনে হলও আমি তার সাথে প্রতারণা করছি। নিজেকে দোষী মনে হলও । এক হিম হিম ঠাণ্ডা বিকেলে এক কফি শপে আমরা বসলাম। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। হাত জমে আসছিলো। গরম কফি তে চুমুক দিলাম। এলো মেলো বাতাস আমার চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছিলও । আমি ভাবলাম আজই সব বলবো।আমার কথা, রূপকের কথা আর সায়মনের কথা। ফিরে গেলাম ১ বছর আগে। সেই তিলোত্তমা ঢাকা শহরে। আমার স্বপ্নের দিন গুলো তে। আবার স্বপ্ন ভঙ্গের নীল বেদনা-বিধুর অন্ধকার রাত টিতে। বাংলাদেশের বিখ্যাত নায়ক রূপকের প্রেমে পরেছিলাম আমি। যেমন তেমন প্রেম নয় কঠিন প্রেম।তার অভিনীত সব গুলো সিনেমা আমি দেখেছি। একবার নয় একাধিক বার। সারা ঘরময় ছিল তার পোস্টার। মোবাইলে তার ছবি। তার ভুবন ভুলানো হাসি।অনেকবার ফোন করেছিলাম। কিন্তু কখনই লাইন পাই নাই। ফেসবুকে হাজার হাজার মেসেজ পাঠিয়েছি। কিন্তু কোন উত্তর নেই। তখন আমি থাকতাম গাজীপুর। ঢাকাতে রূপকের বাসার সামনে এসে আমি প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকতাম। কিন্তু ঢুকার সাহস হতও না একদিন আমার ভাগ্য খুলে গেলও। রূপকের আগের পিএ চলে গিয়েছে।

এদিকে পিএ চলে যাওয়ায় নতুন পিএ নিবে। আমি আবেদন পত্র জমা দিলাম। যথা সময় ডাকা হলও। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে সে খুব অবাক হলও। বলল এত ভাল শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনি আমার পি এ হতে চাচ্ছেন ?
আমি কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। রূপক বললও আপনাকে আমি নিতে পারবো না। সরি আমি উঠে চলে যাচ্ছি। চোখে কষ্টে পানি এসে গিয়েছে। হটাত পিছন থেকে ডাকলও রূপক আচ্ছা একটু শোন। আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো আমাকে সে ডাকবে।আমি পিছন ঘুরে তাকালাম। আমাকে বসতে বললও। তারপর এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিলো। তুমি শুধু পিএ না। আমার বন্ধু হয়েও থাকবে।আর যত তাড়াতাড়ি পারো আমার বাসায় শিফট করো । ঠিকাছে স্যার। তুমি স্যার না আমাকে নাম ধরেই ডাকবে।রূপক বলে ডাকবে। সেদিন থেকে আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলও । আমি রূপক কে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। কিন্তু এই স্বপ্ন ভাঙতে বেশি সময় লাগলো না। সায়মনের কথা জানতে পারলাম। জানলাম তাদের বন্ধুত্বের অন্তরালের কথা। তাদের ভালবাসার কথা। সায়মন আর রূপক ছোটবেলার বন্ধু। নামে বন্ধু তারা। আসলে ২ জন ২ জন কে অসম্ভব ভালবাসে। সায়মন আর রূপক ছোটো বেলায় একই বিদ্যালয়ে পড়তো। ছোটবেলাতেও স্কুলে সায়মনের রূপক ছাড়া আর কোন বন্ধু ছিল না।আর এদিকে রূপকের অনেক বন্ধু ছিলও। এদিকে সায়মন রূপক অন্য কাউকে বেশি সময় দিলেই অভিমান করতো। সায়মনের জন্য রূপকও অন্য বন্ধু দের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দিলো। একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি। ছাতা নেই ।স্কুল থেকে বাসা যাওয়ার তারা পথে আটকা পড়লো ।জরাজীর্ণ একটি পরিত্যক্ত বাড়ি আশ্রয় নিলো ।সায়মন আর রূপক গা ঘেঁষা ঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ছিল। অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছিল।তারা তাদের নিঃশ্বাস এর শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলো।২ জনই এক জন আরেকজনের স্পর্শ অনুভব করছে।সায়মন তার হাত রূপকের পিঠে ছোঁয়ালও।হাত দিয়ে স্পর্শ করতে লাগলো রূপকের পিঠ। রূপক চোখ বন্ধ করে সায়মনের স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। হটাত রূপক সায়মন কে দেয়ালে চেপে ধরে পাগলের মত চুমু দিতে লাগলো। রূপক এর ঠোঁটের স্পর্শ সায়মন কে উত্তেজিত করে তুলল ।সায়মন রূপকের জিভের স্বাদ নিতে লাগলো । ২ জন কিশোর এক অন্ধকার ঘরে আদিম খেলায় মেতে উঠলও।একসময় বৃষ্টি থেমে এলো ।বাড়ি যেতে হবে। সায়মন ছিল ধনী পরিবারের ছেলে। আর রূপক একদম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সায়মনের বাবার ঢাকায় বিশাল ব্যবসা। তিনি পুরো পরিবার কে ঢাকায় নিয়ে আসতে চাইলেন।

কিন্তু সায়মন কিছুতেই যাবে না। রূপক কে ছাড়া কোথাও যাবে না।তখন সায়মনের বাবা বললেন এক মাস পর তিনি নিজেই রূপককে নিয়ে আসবেন ঢাকায়।তারপর দিন ভোরে উঠে সায়মন দেখলও একটা মাইক্রোবাস বাসার সামনে,। আজ তারা চলে যাবে। তাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হল। কাঁদতে কাঁদতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলও সায়মন।রূপক কে ঢাকায় নিয়ে আসার আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেলো। বাস্তবে পরিণত হলও না। ১০ বছর পর আবার দেখা হলও দুই জনের। রূপকের বাবা মারা গিয়েছে অল্প কিছুদিন হলও।মধ্যবিত্ত পরিবার। রূপকের বাবা কিছু টাকা ব্যাঙ্কে রেখে গিয়েছিলেন। তা দিয়ে মা , ছেলের চলে যাচ্ছিলো।কিন্তু বসে বসে খেলে রাজার ধন ও শেষ হয়ে যায় । রূপক পড়াশোনা তে তেমন ভালো ছিল না। অভিনয় , নাচ , গানের প্রতি তার অসম্ভব আগ্রহ। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কোন একটা কিছু করতে হবে। কিন্তু তার ইচ্ছা মিডিয়া তে কাজ করা রূপক ফেসবুক পাগল। একদিন ফেসবুকে না ঢুকলে অস্থির লাগে। বাংলাদেশের যত সেলেব্রিটি আছে তাদের সবাই তার ফেসবুক একাউন্টের ফ্রেন্ড লিস্টে আছে।

একদিন ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে সায়মনের প্রোফাইল চোখে পড়ে গেলো। গত ৭ বছর তাদের মাঝে কোন কোন যোগাযোগ নেই। সেই যে সায়মন তাকে না বলে চলে গেলো তাতে তার অনেক অভিমান হয়ে ছিল। তাই তার সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করে নাই। সময়ের সাথে সাথে ভুলে গিয়েছে তার কথা।হটাত তার একাউন্ট দেখে সায়মনের কথা মনে পড়লো। দেখলও সায়মনের বাবা বেঁচে নেই। সায়মন এখন ব্যবসা দেখছে। কিউট। জাস্ট একটু মোটা হয়েছে।রূপক ভাবলও যোগাযোগ করবে কিনা। অনেক ভেবে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালও । পরের দিন ফ্রেন্ড রিকুসেস্ট এক্সেপ্টেড হলও। সাথে একটি মেসেজ। আমি সাধারণত ফেসবুকে চ্যাট করি না। তোমার সেল নম্বরটি কি পেতে পারি? তোমার সাথে আমার অনেক অনেক কথা...... অনেক কথা।

এরপর রূপক তার সেল নাম্বার ফেসবুকে টেস্ট করলো । সন্ধ্যা বেলা। বৃষ্টি পড়ছে। এই সময় টা কেন জানি খুব বিষণ্ণ হয়। মাঝেই মাঝেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মা ডাকছেন চা খেতে। মুড়ি মাখিয়ে দিয়েছে মা। চা আর মুড়ি খেলো।

নিজের রুমে এসে রূপক দেখলও একটি অচেনা নাম্বার থেকে বিশটি মিস কল। রূপক ফোন দিলো সেই নাম্বারে। ২ বার রিং বাজতেই অপর পাশ থেকে একটি পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেলো। কণ্ঠটি অনেক চেনা। কত দিন হয়ে গেলও কিন্তু চিনতে একটুও ভুল হয় নাই। এ আর কেউ নয়। সায়মনের কণ্ঠ। অনেক কথা হল সায়মনের সাথে। প্রতিদিন কথা হয়।সময় পেলেই সায়মন ফোন দেয়। কথায় কথায় সায়মন জানতে পারলো রূপক মিডিয়া তে কাজ করতে চায়। সায়মন বলল ঢাকায় আস একটা ব্যবস্থা করবো। আসল কথা সায়মন রূপক কে দেখতে চায়। সেই আগের মত আলিঙ্গন করতে চায় । কাছে পেতে চায়। চায় তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে। তার ঠোঁটের স্বাদ নিতে। তার যে কোন বন্ধু নেই। নেই ভালবাসার মানুষ। সবাই তাকে ভালবাসার অভিনয় করে। টাকার লোভে , ক্ষমতার লোভে।সে সত্যিকার ভালবাসা চায়। অনেক ভেবে রূপক ঢাকা যাওয়ার কথা ভাবলো।সারা জীবন তো গ্রামে পড়ে থাকলে হবে না। তাছাড়া সায়মন কে দেখতে ইচ্ছা করে। কত সুন্দর মুহূর্ত আছে সায়মন কে নিয়ে।আর সায়মনের এখন অনেক টাকা , ক্ষমতা । হয়তো মিডিয়া তে কাজ করার সুযোগ করে দিবে।

রূপক সরাসরি সায়মনের বাসায় উঠলো । সায়মন ছাড়া আর কেউ থাকে না। বাবা মা উভয়েই মারা গিয়েছেন। কিছু কাজের লোক আছে। বিশাল বাসা। অনেক সুন্দর করে সাজানো। সায়মন অফিসে ছিল । গাড়ি নিয়ে এক টানে বাসায় চলে আসলো। যখন দেখা হলও এত দিন পর তখনো তাদের মাঝে কোন জড়তা ছিল না। ঠিক যেনও সেই আগের রূপক আর সায়মন। দিন গড়ায় তাদের সম্পর্ক আগের মত হয়ে গিয়েছে। রূপক সায়মনের বাসাতেই থাকে। ২ জনের আলাদা রুম কিন্তু ঘুমোয় একসাথে। ২ জন প্রাপ্ত বয়স্ক সমকামী পুরুষ এক সাথে ঘুমোয় যখন তখন কি আর কোন শারীরিক বাধা থাকে।তাদের মাঝেও রইলো না। তার উপর ২ জন ২ জন কে ভালবাসে। ভালবাসার জোয়ারে ভেসে গেলো তারা। অনেকদিন হয়ে গেল। রূপকের কোন চাকুরী হয় নাই। এদিকে আর মিডিয়ায় করার সম্ভাবনা দেখছে না। ভাবলও গ্রামে মায়ের কাছে চলে যাবে। ব্যবসা করবে।

একদিন ডিনারের সময় কথা গুলো বলল রূপক সায়মন কে।সায়মনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। যে করেই হোক তাকে আটকাতে হবে। সারা রাত ভাবলও। সমাধান পেলো। ফাগুন মাস। গাড়ি চালাচ্ছে সায়মন। লং ড্রাইভে যাচ্ছে। অসংখ্য কৃষ্ণচূড়ার গাছ চারিদিকে। পুরো এলাকাই যেন লাল রঙে সেজেছে। দমকা হাওয়া বইছে। সায়মন তার বাগান বাড়ির সামনে গাড়ি থামালও । অসম্ভব সুন্দর জায়গা টি। একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের ঘাটে বসলো তারা। তোর জন্য একটি সারপ্রাইজ আছে।বলল সায়মন কি? আম্মা মারা যাওয়ার আগে একটি ফ্যাশন হাউজ চালাতও। খুব বিখ্যাত ছিল। আমি আবার এটা শুরু করতে যাচ্ছি। তুই হবি ব্র্যান্ড এম্বাসেডর । রিয়েলি? হ্যাঁ। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন দিয়েই তোকে উঠতে হবে যাতে অন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা গুলো তোকে পেতে চায়। আমি জাস্ট সুযোগ করে দিলাম। কাল থেকে কাজ শুরু। প্রথমে বিলবোর্ড আর ম্যাগাজিনের কাজ। তারপরে টিভিসি।

বিলবোর্ড লাগানোর পর থেকেই মোটামুটি সবাই রূপক কে মডেল হিসেবে চিনে ফেললো। এরপর নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেলো। মডেলিং আর অভিনয় সমান তালে চলতে লাগলো। কিন্তু তাই বলে সায়মন কে ভুলে গেলো না। প্রতি সপ্তাহেই বাগান বাড়ি তে থেকে আসতো এক রাত। পুকুর পারে বসে ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে জোছনা দেখার সুখ তো আলাদা। রূপক গান গাইতে পারে। গিটার বাজিয়ে গান শোনায় মিথুন কে। আকাশের তারা আর জোনাকি পোকারাউ যেন তার গানের তালে নেচে উঠে। সায়মনের মনে হয় এত সুখ কি থাকবে তার কপালে? দেশের খ্যাতনামা এক পরিচালক এলেন রূপকের সাথে দেখা করতে। রূপক কে নিয়ে ফিল্ম বানানোর ইচ্ছা তার। কিন্তু রূপকের আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে হবে। সিনেমায় নামলে অনেক সাংবাদিক ,পরিচালক আসবে সাক্ষাৎকার নিতে, দেখা করতে। কিন্তু রূপক একটা ব্যাচেলর ছেলের বাড়িতে গেস্ট হিসেবে আছে। রূপকের নিজের বাসা নেই এটা ভাল দেখায় না।মানুষ নানা কথা বলবে। তিনি প্রস্তাব দিলেন যে একটি সুন্দর এপার্টমেন্ট তিনি সাজিয়ে দিবেন। ওই এপার্টমেন্টে ইচ্ছে করলে ছবির শুটিং পর্যন্ত থাকতে পারবে। অনেক ভেবে রূপক ঠিক করলো সিনেমাটি তে অভিনয় করবে সে। ভাবলও মিডিয়াতে থাকলে একদিন না একদিন তো নিজের একটা বাসা নিতে হবে।না হলে মানুষ নানা কথা বলবেই।ডিনারে সব কথা খুলে বলল সায়মন কে। কিন্তু সায়মন কোন ভাবেই তাকে যেতে দিবে না। শেষ এক শর্তে রাজি হলও প্রতি সপ্তাহে একবার তার সাথে বাগান বাড়ি তে কাটাতে হবে। রূপক শর্ত মেনে নিলো। সিনেমা সুপার হিট হলও। চারিদিকে শুধু রূপক আর রূপক। এক সাথে দশ টা সিনেমা সাইন করলো রূপক। আর রঙ্গ মঞ্চে প্রবেশ করলাম আমি।আমি রূপকের নতুন পি এ হিসেবে যোগ দিলাম।

আমাকে পি এ হিসেবে পেয়ে খুব খুশি রূপক। আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো। কখনই স্টাফের মত দেখতও না আমাকে।যখন রূপক বাগান বাড়ি যেত তখন আমাকে নিত না। কিন্তু আমি তো বুঝতাম সে কি জন্য গিয়েছে। আমার খুব হিংসা হত। সায়মন কে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করতাম। যখন রূপকের হাতে আর সিনেমা আসতো তখন আমদের প্রায়ই দেশের বাইরে যেতে হত। কিন্তু তখন তো সায়মন সাথে দেখা করা সম্ভব হতও না। সে আমাদের পিছন পিছন ঠিকই বিদেশ চলে আসতো। তারা গোপনে দেখা করতো।আমার প্রচণ্ড হিংসে হত। আমি অনেক বুঝতাম। বলতাম কেউ জেনে ফেললে তোমার কেরিয়ারের অনেক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে সাংবাদিক রা। তারপর থেকে সে শুটিঙের কাজে বাইরে গেলে দেখা করতো না। সায়মনের মনে সন্দেহ , অভিমান র ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে লাগলো।একবার ব্যাংককে শুটিং করতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া শুটিং স্পটে ঢুকে রূপকের উপর চড়াও হলও।আমি অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে সায়মন কে স্পটের বাইরে নিয়ে আসলাম। তারপর থেকেই রূপক সায়মনের উপর বিরক্ত।কিন্তু সায়মনের পাগলামি বন্ধ হলও না। আমাকে রূপক প্রায় ই জিজ্ঞেস করত আমি কি সায়মন কে ভালবেসে ভুল করেছি? ও তো আমাকে বুঝতেই চায় না। একদিন গভীর রাতে রূপক বাগানবাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে আসলো। চোখ মুখ ফোলা ফোলা। বুঝলাম কিছু হয়েছে। বাড়ির বিশাল ব্যাল্কনিতে বসলাম আমরা। এক পর্যায় আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল।তারপর বলল তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় সায়মন তাকে মেরেছে। তার সায়মন কে মারার রুচি হয় নাই। সে গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। সেদিন রূপক সারা রাত জেগে সিদ্ধান্ত নিলো সায়মনের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিবে। এরপরের দিন শুটিং কান্সেল করলো সে। সারাটা সময় বাসায় থাকলো আমার সাথে। রাতে আমি রূপক একসাথে হুইস্কি পান করলাম।সেই রাত ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাত। রূপকের সাথে প্রথম সেক্স হলও আমার।

এরপর থেকে প্রায়ই হতে লাগলো। সায়মন কে ভোলার জন্য সে আমাকে ব্যবহার করতে লাগলো। আমি সবই বুঝলাম। কিন্তু আমি তো তার দ্বারা ব্যবহৃত হতেও রাজি। আমার খালি ভয় লাগতো সায়মন আবার না ফিরে আসে। এরই মাঝে রূপক এক অভিনব প্রস্তাব পেলো। অনেক বড় সুযোগ। কলকাতার একজন ডিরেক্টর মুম্বাই এ একটি হিন্দি ফিল্ম বানাবে।তাকে নায়ক চরিত্রে অফার দেয়া হলও। কিন্তু একটি শর্ত আছে। তা হলও এই সিনেমার প্রডিউসারের মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে।তার মেয়ে বাংলাদেশের সিনেমা দেখে রূপকের প্রেমে পরে গিয়েছে। আর প্রডিউসার মেয়ের সকল ইচ্ছা পূরণ করেন।তার একটি মাত্র মেয়ে। তাই তিনি রূপক কে নায়ক বানিয়ে সিনেমা বানাতে চাচ্ছেন। তার পরিকল্পনা একদিকে রূপক তার মেয়ে কে বিয়ে করবে। আরেকদিকে তার হবু জামাতার বলিউডে অভিষেক হবে। আমি ভাবলাম রূপকের আজকে হোক কালকে হোক বিয়ে করতে হবে। আমি তার পিএ আমার জায়গা তো একই রয়ে যাবে। বরং সায়মনের হাত থেকে তো রেহাই পাওয়া যাবে। আর ফিল্মসটার দের বিয়ে বেশি দিন টিকে না। আর এই বিয়েও টিকার সম্ভাবনা কম। আমি বরং রূপক কে বুঝাই। সায়মনের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর হতে পারে না।

আমার কথা শুনে রূপক অনেকটাই রাজি হয়ে গেল। হবেই বা না কেন আমি তো এখন তার একমাত্র বন্ধু। কিন্তু তার মন টা কেমন যেন দোনোমনা করছে। বুঝলাম সায়মনের কথা ভাবছে। বিয়ের কথা সায়মন জেনে গেলে কোন ভাবেই বিয়ে হবে না। আমি একটা চাল চাললাম। ডিরেক্টর সাহেব কে সব কিছু খুলে বললাম। তিনি বুঝলেন। কারন এই বিয়ে না হলে প্রডিউসার আর টাকা ঢালবে না। তার সিনেমা বন্ধ হয়ে যাবে।

কলকাতায় গেলাম রূপক কে নিয়ে বিয়ে এবং সিনেমা নিয়ে প্রডিউসারের সাথে আলাপ করতে। আর সেখানেই প্রডিউসারের মেয়ের সাথে প্রথম কথা হবে।বিয়ে ও হয়ে যেতে পারে । কোলকাতা এয়ারপোর্ট এ গিয়ে কি জানি হলও রূপকের। সে ফিরতি প্লেনে করে ঢাকা চলে এলো। আমাকে বলল সায়মন কে না বলে সে বিয়ে করতে পারবে না।

এদিকে প্রডিউসার প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলেন।ডিরেক্টর আমাকে ফোন দিলেন। বললাম এখন একটাই উপায় আপনার ঢাকা আসেন। এখানেই বিয়ের আয়োজন করা হবে। আমি রূপক কে বুঝাতে গেলাম। কিছুতেই রাজি হয় না। শেষে মিথ্যা কথা বললাম। আমি বললাম তুমি এই বিয়ে না করলে ওরা বলেছে তোমার এবং সায়মনের সম্পর্কের কথা মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিবে। ম্যাগাজিন আর পেপার এ বড় বড় আর্টিকেল ছাপাবে তারা। আর তুমি জানো এটা একবার প্রচার হলে তোমার ক্যারিয়ার শেষ। তোমার মা জানতে পারলে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু আমার এই সম্পর্কের কথা কে বলেছে? আমি শেষ এবং কঠিন মিথ্যাটি বললাম। সায়মন বলছে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্য। যাতে তুমি ওর কাছে আবার ফিরে যাও। সায়মনের প্রতি অসম্ভব ঘৃণা জন্মালও তার। তার ল্যাপটপে সায়মনের যে কয়টা ছবি ছিলও সে ডিলিট করলও। সায়মনের দেয়া যে কয়টা গিফট সামনে ছিলও সব ছুঁড়ে ফেললো। আমি থামালাম না। কিন্তু আমি অসম্ভব অনুতাপে ভুগছি। এটা কি ঠিক করলাম?কিন্তু মনে হলও এটাই রূপকের জন্য মঙ্গল হবে। কিন্তু আমি যে স্বার্থের জন্য এই কাজ করেছি এটা বার বার মনে হতে লাগলো ।কিন্তু যুদ্ধ আর ভালবাসার জন্য সব কিছু করা যায়। আর আমি তো রূপক কে ভালবাসি। বিয়ে হয়ে গেলো।

পরের দিন দেশের বড় বড় পত্রিকা তে বিয়ের খবর ছাপানো হলও। রূপকের চেহারায় এক রাতেই যেন কয়েক বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কি ব্যাপার বুঝলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম আড়ালে যেয়ে । তোমার কি হয়েছে? সে বলল সায়মন বিয়ের খবর জানতে পেরেছে। সে আমাকে ফোন করে গালাগালি করলো। আমাকে চিটার বলল। আমি তো আসলেই চিটার । নিজের কাছেই চিটার। ভালবাসি এক জন কে। বিয়ে করেছি আরেক জন কে। আমার নিজের জীবন কে বোঝা মনে হচ্ছে। বাসর রাতে সারাটা সময় শুধু সায়মনের কথা মনে পরেছে। আমি বললাম সময় সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। তুমিও ভুলে যাবা। ট্রাস্ট মি আর এই বিয়ে তোমার জন্য অনেক ভালো কিছু বয়ে আনবে। আর তুমি বলিউডে ফিল্ম করতে যাচ্ছ। এটা বুঝো ? আমার কথায় রূপক একটু শান্ত হলও। কিন্তু এর পর যা ঘটলো তা অভাবনীয়, ইউ টিউবে সায়মন ভিডিও ছেড়ে দিল। বাগান বাড়ির শয়ন কক্ষে সিসি ক্যামেরা ছিল। সবাই জানতো নিরাপত্তার জন্য লাগানো রয়েছে। কিন্তু তাতে যে সায়মন আর রূপকের সেক্স ভিডিও করে সায়মন রেখে দিয়েছে তা কে জানতো। সায়মন নাকি প্রায় সেই ভিডিও দেখতও। কিন্তু তার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে সে ভিডিও ছেড়েছে। সারা দিন ফোন আমার বাসায়। সব ফোন আমি রিসিভ করলাম । বললাম রূপক অসুস্থ কথা বলতে পারবে না। এদিকে প্রডিউসারের মেয়ে এখানে থাকবে না এক মুহূর্ত। আমি আটকাতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু প্রডিউসার নিজে এসে মেয়ে কে নিয়ে গেল।

সারা বাসায় শুধু আমি আর রূপক।রূপকের চেহারার দিকে আমি তাকাতে পারছিলাম না। রূপকের ক্যারিয়ার এক অর্থে শেষ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়া অনেক কঠিন।একদিকে ক্যারিয়ার শেষ । মা কে কিভাবে মুখ দেখাবে? আগামী কাল সব পত্রিকায় এই খবর চলে আসবে।ভক্তরা তো তাকে ছুড়ে ফেলে দিবে। আরেক দিকে সায়মনের এমন বিশ্বাসঘাতকতা। রূপক আমাকে বলল হুইস্কির বোতল নিয়ে ছাদে আসতে। ড্রিংক করবে। কিন্তু আমি ছাদে এসে দেখি সে নাই। তার ডেড বডি রাস্তার উপর পড়ে আছে। সেই রাত আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের রাত। এক ফোঁটা জল চোখ থেকে পড়লো না। কিন্তু আমি জানি আমার ভিতরে কি হচ্ছে। পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে গেল। লাশ মর্গে পাঠানো হলও ময়নাতদন্ত করার জন্য। সারা রাত আমি ঘুমালাম না। ভাবলাম প্রতিশোধ নিতে হবে। সায়মন কে আমি খুন করবো। রূপক ছাড়া আমি অর্ধমৃত । চারিদিকে রূপকের স্মৃতি।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। আত্মহত্যা করবো। কিন্তু তার আগে সায়মন কে উচিৎ শিক্ষা দিবো ।

একটি চাইনিজ কুড়াল ছিল আমার কাছে। সেটা নিয়ে গেলাম সায়মনের বাড়ি। বাড়ির সামনে দোতালার বারান্দায় বসে সায়মন ড্রিংক করছে এটাই মোক্ষম সময় সায়মন কে খুন করার। কিন্তু আমি খুন করতে পারলাম না তাকে।আসলে অনেক কিছু ভাবা যায় কিন্তু বাস্তবে করা যায় না। কাপুরুষের মত চলে এলাম। বুড়িগঙ্গা ব্রিজে দাড়িয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। আমি কাপুরুষ ।মৃত্যু ভয় পাই। ঢাকাতে রূপকের স্মৃতি আমাকে তিলে তিলে মারছিলও। ঢাকায় আর থাকবো না। চলে এলাম সিডনি । সিনেমা নিয়ে পড়তে। প্রথমে কয়েকদিন কাজিনের বাসায় থাকলাম। তারপর জন আর আমি নতুন বাসায় উঠলাম ।

১০ বছর পর আজ আমি একজন সফল ডিরেক্টর। একটি সিনেমা বানাবো।রূপকের স্বপ্নের ফিল্ম। রূপক আমাকে বলতো সিনেমা নিয়ে পড়তে যেন আমি একজন বড় পরিচালক হয়। তখন সে শুধু আমার সিনেমায় কাজ করবে। আর কোন টাতে নয়। তার একটা স্বপ্নের গল্প ছিলও । তার সেই গল্প নিয়ে সিনেমা বানাবো। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিনেতা খুজলাম।কিন্তু রূপকের মত কাউকে পেলাম না। আর এই চরিত্রটিতে এক মাত্র রূপক কেই মানাতো। আমি পারলাম না সিনেমাটা বানাতে। রূপকের জায়গা তো আর কাউকে দেয়া যায় না। রূপকের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না।মাঝেই মাঝেই হারিয়ে যাই সেই দিন গুলোতে। নিজের দোষের কথা ভেবে কাঁদি। ক্ষমা করতে পারি না নিজেকে। দিন কাটে আমার রূপকের অভিনীত সিনেমা গুলো দেখে। জীবন চলে যায় জীবনের নিয়মে।

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?