০৩ মার্চ, ২০১৪

লেটার ডেস

যেনে নাও যখন আমি এই মুভির রিভিউ লিখছি তখন আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা বইছে। আমি জানিনা এই মুভি সম্বন্ধে আমি কি লিখবো, কি লিখার আছে জীবনের নির্মম কাহীনি নিয়ে। আমরা সবাইতো জানি জীবন কতটা নির্মম, সামাজিক প্রথার বেড়াজালে। ভালোবাসা আসলেই অনেক সুন্দর একটা জিনিস।

যারা ভালোবাসাকে অবহেলা করছে বা বিভিন্ন মাপকাঠিতে মাপছে, এই মুভিটা শুধু তাদের জন্য। তাদেরকে জানানোর জন্য, যে তারা জীবন থেকে কি হারাচ্ছে? তারা জীবনের কাছ থেকে কি চায়? তারা কি সত্যি সত্যি একজন মানুষের কাছ থেকে, রূপ, যৌবন আর অর্থের বাইরে শুধুই ভালোবাসাকে চায় নাকি নিজের মনের গভীরে ভালোবাসা নামক শব্দের আড়ালে খোঁজে সৌন্দর্যের পাহাড়? 

আমি দেখেছি, সবাই তাই। কেউ যখন মুখে বলে ভালোবাসি তখন সে প্রথমেই খুঁজে সে দেখতে কেমন, তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন, অর্থ আর প্রাচুর্য কেমন। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় ইয়েস অর নো বলার। আমি এই পেইজের এডমিন হওয়ার বদৌলতে দেখেছি সত্যিকারের ভালোবাসা কিভাবে পদদলিত হয়। লিখে নাও আজকে সবাইকে একটা কথা বলি জীবন এবং মানবতার অভিজ্ঞতা থেকে। 

যারা কারো সত্যিকারের ভালোবাসাকে কাঁদিয়েছে, প্রকাশের সুযোগ দেয়নি, বিশ্বাস করেনি, ভালোবাসার আড়ালে শুধু লালন করেছে লালশাকে, তারা ঈশ্বরের কাছে তো ক্ষমা পাবেইনা, সুখি হবেনা পৃথিবীতেও। তুমি ভালোবাসা খুঁজছো? তাহলে যাকে ভালোলাগে তাকে জানাও তোমার ভালোবাসার কথা। ভয় পেওনা, সে মানা করে দিবে, দিকনা। দেখবে যে তোমাকে আজকে অবহেলা করেছে শুধু তোমার লুকস, অর্থ আর যৌবনের জন্য সে একদিন তার এই ভুলের জন্য অন্ধকারে একা একা কাঁদবে। 

এই কান্না শেয়ার করার জন্য সে তখন কোনো স্বন্তনা বা কারো কাঁধও পাবেনা। এটা শুধু কথার কথা না পরীক্ষীত সত্য।

যাই হোক এবার আসি মুভির কাহিনীর ব্যাপারে। যেই মুভি আমাকে পুরো ৫৫মিনিট অঝরে কাঁদিয়েছে।সেই মুভিকে নিজের ভাষায় লিখছি- 

ক্রিস্টিয়ান একজন সমকামী। একটি রেস্টুরেন্টে জব করে। রেস্টুরেন্টের কলিগদের সাথে তার অনেক সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। প্রতিদিন রাতে একজন নতুন দেহ সঙ্গী তার যৌন চাহিদার সাক্ষী। ভালোবাসা নামক স্বর্গীয় বস্তুর অভাব বা তার স্বাদ কোনটাই ক্রিস্টিয়ান কখনো পায়নি। ভালোবাসা তার কাছে দুটি দেহের ৫/১০ মিনিটের ঘর্মাক্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু শুভ্রলাভা উদগিরনই। 

এমনি সময়ে তার পাশের বাসায় চার মিশনারী বন্ধু শিফট করে, যারা ধর্ম প্রচারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এদের মধ্যেই এ্যারন বেশ সুন্দর এবং ভদ্র। ক্রিস্টিয়ান এ্যারন কে দেখে তার প্রতি চরম আকর্ষণ অনুভব করে এবং তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য এক কেইস ড্রিংকস নিয়ে উপস্থিত হয়। গিয়ে জানতে পারে তারা কেউই ড্রিংকস করে না। খুব অপমানিত হয়ে ফিরে আসে সে।

অপরদিকে এ্যারন ও ক্রিস্টিয়ান এর প্রতি একটা অদ্ভুত আকর্ষণ ফিল করে। যদিও প্রতিদিন রাতে জানালার ফাক দিয়ে সে দেখে যে ক্রিস্টিয়ান নতুন নতুন পুরুষ নিয়ে আসছে নিজের যৌন চাহিদা চরিতার্থ করার জন্য। তারপরও কেন যেন তাকে ভালোলাগে তার। ধীরে ধীরে দুজন দুজনের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে একটা পর্যায়ে খুব কাছে চলে আসে। একটা দূর্বল মুহুর্তে যখন এ্যারন ক্রিস্টিয়ান এর খুব কাছে চলে যায় তখন এ্যারন ক্রিস্টিয়ান কে বলে যে সে এর আগে কারও সাথে এমন কিছু করেনি। 

ক্রিস্টিয়ান বলে কোন সমস্যা নাই এটা ঠিক হয়ে যাবে। ক্রিস্টিয়ান দুজন মানুষের মধ্যে সম্পর্ককে শুধু সেক্স দিয়ে বিচার করে এটা দেখে এ্যারন প্রচুর রিয়েক্ট করে। সে প্রচুর অপমানিত বোধ করে এবং ক্রিস্টিয়ানকে কে তার জীবনবোধ সম্পর্কে আয়না দেখায়। তার জীবনের শুধু সেক্সটাই প্রধান, ভালোবাসার কোন অনুভূতিই তার কাছে নাই। এমন মানুষের সাথে তার এই দুর্বল মুহুর্ত পর্যন্ত আসাই ভূল হয়েছে জানিয়ে এ্যারন সেই মুহুর্তেই ক্রিস্টিয়ানের রূম থেকে বের হয়ে যায়।

এরপর থেকে ক্রিস্টিয়ান বার বার ভালোবাসা সম্বন্ধে বুঝতে শিখেছে। আরও দূর্বল হয়েছে এ্যারন এর প্রতি। একদিন আবারও একটি দুর্বল মুহুর্তে দুজন দুজনকে প্রথমবারের মত কিস করে বসে যা মিশনারী বাকি ৩বন্ধু দেখে ফেলে। দেখে ফেলার পর তারা চার্চে ইনফর্ম করে এবং এ্যারন কে তার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ক্রিস্টিয়ান নিজে নিজে খুব অনুশোচনায় ভোগে এই ভেবে যে তার জন্য এ্যারন এর ক্যারিয়ার এবং প্রেস্টিজ দুটোই ধ্বংস হয়ে গেল। 

সে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে এ্যারন এর সাথে দেখা করে যেখানে ফ্লাইট øো ফলের কারনে ৫/৭ ঘন্টা লেট ছিলো। ক্রিস্টিয়ান বোঝাতে সক্ষম হয় যে সে এ্যারন কে কত ভালোবাসে। সেদিন এয়ারপোর্ট ইন এর তাদের শরীর প্রথমবারের মত বিবস্ত্র হয়। প্রথমবারের মত এ্যারন একটা পুরুষ শরীরের এতটা কাছে আসে। এ্যারন ভ্রমন করে না জানা এক অভিজ্ঞতার নতুন পৃথিবী। ভোরে এ্যারন তার ফ্লাইট নিয়ে নিজ বাড়ি চলে আসে যেখানে তার জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছিলো। 

তার বাবা মিশনারী প্রধান হওয়াতে সে খুবই লজ্জিত বোধ করে এমন ছেলের জনক হওয়াতে। সে তাকে মিশনারী এবং চার্চ থেকে ডিজওন করে। বাসায় এ্যারন প্রতিনিয়ত তার পরিবারের সদস্যদের কাছে অবহেলিত এবং অপমানিত হতে থাকে। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ান অনেক কষ্টে এ্যারন এর বাসার ফোন নাম্বার জোগাড় করে তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। একটা সময় তাকে জানানো হয় যে এ্যারন মারা গেছে। কিন্তু এই মারা যাওয়ার ঘটনা যে পুরোটাই মিথ্যা তা ক্রিস্টিয়ান বুঝতে পারেনা। জীবনে প্রথম সাজানো তার ভালোবাসার ঘর মুহুর্তেই তছনছ হয়ে যায়। পরিবারের এই অপমানের গ্লানি এ্যারন নিতে না পেরে নিজেকে সংশোধনের জন্য কারেকশান হোমের বাসিন্দা করে। যেখানে শাস্তি হিসেবে প্রতিদিন তাকে ছোট্ট একটা টুথব্রাশ দিয়ে পুরো বিল্ডিংয়ের ফ্লোর পরিস্কার করতে হয়, নিজের পুরুষাঙ্গে ইলেক্ট্রিক শক নিতে হয়, বরফ ভর্তি বাথটাবে ঘন্টার পর ঘন্টা ডুবে থাকতে হয় আরও অমানুষিক অনেক কিছু।

এত কিছুর পরও কি এ্যারন পারবে সমাজের তথাকথিত সংশোধনী প্রকৃয়ায় সংশোধীত হয়ে সবাইকে গর্বিত করতে? পারবে কি তার জীবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটিকে ভূলে যেতে? ক্রিস্টিয়ান পারবে কি এর পর কাউকে নিজের দেহ সঙ্গী করতে, নাকি সারা জীবন কাটিয়ে দিবে অপূর্ণ ভালোবাসার স্মৃতি মন্থন করতে করতে? এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব পেতে চলুন দেখে ফেলি দ্যা মোস্ট রোমান্টিক ফিল্ম অফ মাই লাইফ “লেটার ডেস” । 

মুভিটি পরিচালনা করেছেন- সি.জে কক্স
প্রধান চরিত্রে আছেন- স্টিভ সেন্ডভস এবং ওয়েস রেমসি
মুভিটির ভাষা- ইংলিশ
মুভিটির দৈর্ঘ্য- ১০৭ মিনিট
মুক্তির সাল- ২০০৩
আই.এম.ডি.বি রেটিং- ৭.৩

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?