২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

অন্তহীন প্রতীক্ষা

• ০১ 
ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১১

ব্যাংকের চাকরি যারা করে, তাদেরকে মানুষ না বলে কলুর বলদ বলাটাই বোধহয় যুক্তিসঙ্গত। অন্তত আমার তাই মনে হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যাংকে ঢোকো, আর বের হও সেই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। তাও ভালো ইন্টার্নশিপ! তিন মাস পরেই রক্ষা পাবো এই যন্ত্রণা থেকে। ম্যানেজার হারামজাদাটাকে দুইদিন ধরে বলে আসছি যে আজকে আমার একটু ভার্সিটি যেতে হবে একটা কাজে। সামনের মাসে কনভোকেশন। ফর্ম ফিলআপ, টাকা জমা দেয়া, অনেক কাজ বাকি। কিন্তু আজ বের হওয়ার আগেই আমার সামনে এক পাহাড় উঁচু কতোগুলো ফাইল দিয়ে হারামিটা বলল, 
- দেখো তো রাদিয়ান, নতুন খোলা একাউণ্টগুলার পোস্টিং ঠিক মতো আছে কিনা!
- কিন্তু স্যার, আমি তো আপনাকে বলেছিলাম আজ একটু ভার্সিটি যাবো। কনভোকেশনের কাজ করতে।
- তাহলে ভার্সিটিতেই ইন্টার্নশিপ করতা! এখানে আসছো কেন? যত্তসব ফাঁকিবাজ।
এই মইনুল, সামনের মাস থেকে আর কাউরে ইন্টার্নশিপ করার চান্স দিবা না। সব কয়টা ফাঁকিবাজ। কাজ তো কিছু পারেই না। শিখার ইচ্ছাটাও নাই।
এমনিতেই রাতে আব্বার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে, তার উপর আজকে আবার এই হারামজাদার গাল শুনতে হলো। রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে গেল। অনেক কষ্টে সামলালাম! 

অফিস থেকে বের হয়ে মেজাজটা সপ্তমে চড়লো। একটা সি এন জি ও যেতে চায় না বসুন্ধরার দিকে। চাইলেও ভাড়া চায় ৪০০ টাকা। রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে। শেষে ৩৫০ টাকায় রাজি হলো এক মামা। বলল, “আসেন, নিয়া যাই, বিপদে পড়ছেন যখন!” অনেক বড় একটা দয়া করলো যেন আমার উপর। 
নর্থসাউথের সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা বেজে গেল। লাঞ্চ আওয়ার শুরু। মেজাজটা আরো চড়ে গেল। অফিস খুলবে আবার সেই ২ টা বাজে। এক ঘণ্টা এখন বসে বসে ভেরেন্ডা ভাজো! ভার্সিটি ঢুকে দেখি কি একটা এক্সিবিশন হচ্ছে আর্কিটেক্টদের। মনটা একটু শান্ত হলো। আর্কিটেকচারের উপর আমার আগ্রহ অনেক দিনের। দেশি আর্কিটেক্টদের সাথে কিছু বিদেশি আর্কিটেক্টও এসেছে এক্সিবিশনে। হঠাত একজনকে দেখে চোখ আটকে গেল। ৬ ফিট লম্বা, বা তার চেয়ে ২/১ ইঞ্চি বেশি হবে! ব্লন্ড আমেরিকানরা যেমন হয় আর কি! চোখ আর চুলগুলো বাদামি। নজর সরাতে পারছিলাম না লোকটার থেকে। এগিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই লোকটা মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো। বলল,
- Hello! 
- Hi… Is it your work?
- Yah! Are you a student of Architecture in this Uni?
- O no! I wish, I could be. I had a strong desire for studying architecture, but I didn’t get chance. I have completed my graduation on business administration.You know, B.B.A? 
- Yah, I know. 
- But still I have fascination for architectural structures.
- Oh really? That sounds good!
- Why don’t you describe me your model?
- Sure, why not!

লোকটা একের পর এক বুঝাতে লাগলো কিভাবে সে environment friendly বাড়ি বানিয়েছে। হু, হা করলাম, যেন অনেক কিছু বুঝছি। আসলে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে লাগলাম ও কি বলে। কথার মাঝে কি সুন্দর নিষ্পাপ একটা হাসি দেয় না! আমি পুরোই হা করে শুনতে লাগলাম ওর কথা। শেষে জানতে চাইলো, 
- You like it?
- Yah! Of course! When I will have lots of money, I will build my house on your model, be sure.
- Ha ha ha! Yah! It’s a bit costly.
- Hey, why don’t you come with me to have a look of our campus?
- Why not? Let’s go.
- Your model?
- Forget that! It’s too costly to be realized. No one is interested. 
- Ha ha ha! Let’s go.

নর্থসাউথের ক্যাম্পাসটা ভালই বড়! কিন্তু কেন যেন খুব ছোট মনে হলো আমার কাছে, আধ ঘন্টায়ই পুরো ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানো শেষ হয়ে গেলো। Josh’ র সাথে হাঁটতে, কথা বলতে এতো যে ভালো লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না। জানলাম ওর নাম Peter Joshua Anderson. Josh বলেই ডাকে সবাই। খুব ইচ্ছা করছিলো ফোন নাম্বারটা চাইতে, কিন্তু চক্ষুলজ্জার ভয়ে আর চাইলাম না। ইমেইল এড্রেস আদান প্রদান হলো আমাদের মাঝে। আমি তাতেই খুশি।

সেই আমার Josh’ র সাথে প্রথম আর শেষ দেখা। প্রথম দেখাতে তো কতজনকেই ভালো লাগে, আর Josh থাকেও কোস্টারিকায়। তাই আর যোগাযোগ হবে না ভেবে আস্তে আস্তে ওকে মন থেকে মুছে ফেলতে চাইলাম। ভাবলাম Josh চ্যাপ্টারটা এখানেই শেষ আমার জীবনে।

কিন্তু না। অবাক হলাম যখন দেখি তিনদিন পর Josh’র একটা মেইল এলো। আমি ও রিপ্লাই দিলাম। এভাবেই কথা চলতে থাকলো আমাদের মাঝে। সবকিছু শেয়ার করতাম আমরা। আমি কি করলাম সারাদিন, ও কি করলো, আমার অফিসের ম্যানেজার হারামজাদাটার বদনাম, ওর কুকুর দুটো সেদিন খায়নি বলে তার মন খারাপ, এগুলোই ছিল আমাদের মেইল চ্যাটের টপিক। কয়েকদিন পর বুঝতে পারলাম সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে প্রথম কাজটিই আমার হয়ে দাঁড়িয়েছে মেইল চেক করা, Josh’ র মেইল এলো কিনা! ও কোনদিন মেইল দিতে ভুলতো না, আর আমিও ভুলতাম না রিপ্লাই দিতে। একদিন সন্ধ্যায় দেখি Josh আমার রিপ্লাই পাওয়ার সাথে সাথেই একটা মেইল করলো। “Do you have cam? Can I see you? Can we chat in yahoo messenger?” আমি অবাক আর খুশি একসাথে হলাম যেন। এ তো দেখি মেঘ না চাইতেই জল! ব্যাস সেই থেকে শুরু আমাদের কথোপকথনের নতুন অধ্যায়। একজন আরেকজনকে দেখে দেখে কথা বলা। মনে হতো যেন Josh আমার সামনেই বসে আছে।

প্রায় প্রতিদিনই Josh আমাকে দেখতে চাইতো। একদিন আমি জিজ্ঞেস করেই বসলাম, “why do you want to see me daily?” যে উত্তরটা পেলাম তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। “I just want to make sure that you are real, not my imagination” Josh খুব সহজ কথায় আমাকে বুঝিয়ে দিল তার পছন্দের কথা। সেদিনই বলে বসলো, “can we be boyfriends?” আমি হথাত করেই হকচকিয়ে গেলাম। কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। শুধু বললাম, “how can that be possible? You live far away from me.” Josh শুধু বলল, “Ya! it can be difficult, but not impossible. If both of us want, it is possible.” আমি তখনি কিছু বললাম না। সময় নিলাম। ঠিক করলাম আমরা আমাদের যোগাযোগ চালিয়ে যাবো, প্রতিদিন চ্যাট করবো, যাতে করে একজন আরেকজনকে ভালো ভাবে জানতে পারি। 

আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম Josh আমার ব্যাপারে কতোটা সিরিয়াস, আর কতোটা বিশ্বস্ত সে। আমি Josh’ র প্রতি দূর্বল হতে শুরু করি। এর মধ্যে একদিন Josh ক্যাম্পিং এ গেলো ৩ দিনের জন্য। যেখানে গেলো, সেখানে আবার নেট কানেকশন পাওয়া যায় না। তিনটা দিন যেন তিন মাসের মতো দীর্ঘ মনে হলো আমার কাছে। আমি বুঝে গেলাম Joshকে ছাড়া আমার চলবে না। 
তিনদিন পর Josh আবার অনলাইনে এলো, আমি যেন প্রাণ ফিরে ফেলাম দেহে। কাল বিলম্ব না করে হুট করে বলে ফেল্লাম,
- “I Love You!”
- “Really! Are you sure? What makes you decide it suddenly?” Josh কিছুটা অবাক হয়েই জানতে চাইলো। 
- “In these three days I missed you soooo much that I can’t explain!” একদমে বলে ফেললাম।
- “Really?”
- “Yes”
- “ I Love You too my luv!” 

সেই থেকে আজ অব্দি Josh আমাকে “My Luv” বলেই ডাকে। আর আমি প্রতিনিয়ত স্বপ্নের জাল বুনতে থাকি এক ভিনদেশি মানুষের জন্য। প্রতিদিন আমাদের দুইবার চ্যাট হয়। বাংলাদেশি সময় সকাল ৬ টায়ঃ যখন আমি ঘুম থেকে উঠি আর ও অফিস থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে, আর সন্ধ্যা ৬ টায়ঃ যখন আমি অফিস থেকে ফিরি আর ও কোস্টারিকায় ঘুম থেকে ওঠে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের প্রতিদিনকার কথোপকথন। 

• ০২

Josh আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা নয়। সত্যি বলতে কি, কৈশরের প্রথম ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার মতো যোগ্যতা সৃষ্টিকর্তা কাউকে দেন না। আমাকেও দেননি। শুরুটা আদনানের পক্ষ থেকেই ছিল। স্কুলে আমাদের দু’জনেকে সবাই চিনতো। কিন্তু দু’জনকে দু’ভাবে। আমাকে ক্লাসের সেরা ছাত্র হিসেবে, আদনানকে সেরা বাউন্ডুলে হিসেবে। আমার মতো শান্তশিষ্ট ছেলেটাকে খুঁচিয়েই আদনান আনন্দ পেতো বেশি। এই এসে আমার গাল টিপে দিচ্ছে, না হয় পেটে চিমটি কেটে দিচ্ছে। একদিন তো আমার মেজাজটাই গরম করে দিল, রীতিমত ক্লাসে সবার সামনে কিস করে বসলো। আমি তো রেগেমেগে ফায়ার রীতিমত। কিন্তু কিস করেই দে ছুট। আর ক্লাস করলো না। এরপর একমাস ধরে আদনানের পাত্তা নেই। আমি মনে মনে একবার খুশি হচ্ছিলাম যে যাক, কেউ জ্বালাতে আসছে না, কিন্তু পরক্ষনেই মনে হচ্ছিল, কেন কেউ জ্বালাচ্ছে না? কেন এলো না আদনান ক্লাসে? 

এক মাস পর আদনান যখন এলো, জানতে চাইলাম কি ঘটনা, কেন আসেনি এই এক মাস। বলল, ওর বাবার ইলেকশানের জন্য ক্যানভাসিং করতে হয়েছে। আমি ওর খবর নিচ্ছি দেখে খুব খুশি হল আদনান। আর বিরক্ত করলো না সেদিন থেকে। খুব ভাল ব্যবহার করলো। কেন যেন সেদিন মনে হলো আদনান আমার খুব ভালো একটা বন্ধু হতে পারে। সেই থেকে শুরু। ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা দুজন। বাবা চেয়ারম্যান থাকায় ক্লাস টেনে থাকতেই আদনানের কাছে মোবাইল ছিল। নাম্বার নিলাম। আমার যেহেতু মোবাইল ছিল না, বাসার মোবাইল থেকে ওকে কল দিতাম। আদনানও কল দিত মাঝে মাঝে। কথা শেষ করার আগে একদিন আদনান বলল, “আই লাভ ইউ”, ফাজলামি করেই। আমিও বললাম। বলেই দুজনের সে কি হাসি... এরপর ফোনে কথা বললেই আমাদের “আই লাভ ইউ” এর আদান প্রদান চলতো। এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব চলতে থাকলো। আদনান ডানপিটে থাকায় ছাত্র হিসেবে খুব খারাপ ছিল। তাই আমি ওকে প্রায়ই ম্যাথ আর ফিজিক্স বুঝিয়ে দিতাম। আমার বাসায় আসতো পড়া বুঝতে, আম্মুও ওকে প্রচন্ড আদর করতো। 

দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা এলো, শেষও হলো। তারপর এলো রেজাল্টের দিন। রেজাল্ট দেখতে গেলাম। ভাবলাম স্কুলে গিয়েই আদনানের সাথে দেখা হবে। হলো না। রেজাল্ট দেখতে গিয়েই দেখি সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আমি সেই দুই ছাত্রের একজন যারা পুরো স্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। খুশিতে আটখানা হয়ে বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলাম আদনানকে দেখেছে কিনা। যা শুনলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আদনান সেই দুজনের মধ্যে একজন যারা ফেল করেছে। কেন জানি চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আদনানের মোবাইলে কল দিলাম, বন্ধ। অনেকবার চেষ্টা করেও পেলাম না আদনানকে। আমি ওর বাসাও চিনতাম না যে যেয়ে ওর একটা খবর নিয়ে আসবো। প্রতিদিন ওর মোবাইলে কল দেই, পাই না। কয়েকদিন পর মোবাইল খোলা পেলাম। কল দিলাম, কেটে দিল। প্রচন্ড রাগ হলো আমার। আর কল দিলাম না আদনানকে।
এর দুই মাস পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো বাসার ফোনে, আমার ফোন। আম্মুর থেকে ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই শুনতে পেলাম আদনানের কন্ঠস্বর। বললাম, “তোর সাথে আমার কোন কথা নেই। তুই আর আমাকে ফোন করবি না” আদনান বুঝলো আমি প্রচন্ড রেগে আছি, তাই আর কল দিল না এরপর থেকে। 

আমিও হারিয়ে ফেললাম আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুটিকে। কলেজে উঠেও তেমন কারো সাথে বন্ধুত্ব হলো না। খুব মিস করতাম আদনানকে। এটা যে বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু ছিল তা টের পেলাম আরো পরে।
কলেজের গন্ডি পেরিয়ে চলে এলাম ঢাকায়, ভর্তি হলাম নর্থ সাউথে। একদিন হঠাত একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো। ততোদিনে অবশ্য আমার নিজের মোবাইল হয়েছে! ফোন ধরতেই শুনলাম সেই ভারী কন্ঠস্বর,
- হ্যালো রাদিয়ান, চিনতে পেরেছিস? আমি আদনান।
- আদনান? তুই? কই পেলি আমার নাম্বার? কেমন আছিস? কই তুই এখন?
- আমি নাম্বার বদলালেও তুই যে নাম্বার বদলানোর মানুষ না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানতাম। তোর বাসার সেই নাম্বারটায় কল দিয়ে আন্টির থেকে তোর নাম্বারটা পেলাম। শুনলাম তুই নাকি ঢাকায় এসেছিস?
- এসেছি মানে? তুইও কি ঢাকায় নাকি?
- হুম। টোফেল করছি। বাইরে যাবো। আয় একদিন দেখা করি।
- ঠিক আছে, বল। কবে দেখা করবি?
- পরশুদিন

এভাবেই আবার গড়ে উঠতে লাগলো আমাদের ভেঙ্গে যাওয়া বন্ধুত্ব। প্রায়ই এক সাথে আড্ডা দিতাম, ঘুরতে যেতাম। স্মৃতিচারণ করতাম স্কুলের সেইসব দিনগুলির। একদিন ধানমন্ডি লেকে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমি গল্পচ্ছলে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
- আচ্ছা, তোর মনে আছে? আমরা যে ফোনে কথা বলতাম স্কুলে থাকতে? 
- হুম খুব মনে আছে।
- তুই আমাকে আই লাভ ইউ বলতি, মনে পড়ে?
- এহ্‌! খালি আমিই বলতাম, তুই মনে হয় বলতি না?
- হা হা হা! সেসব কথা মনে পড়লে আজো হাসি পায়।
- আসলেই।
- আচ্ছা, সত্যি করে একটা কথা বলবি?
- কি?
- আমাকে কি তুই ভালবেসে আই লাভ ইউ বলতি? নাকি দুষ্টামি করে?
- আজব! ভালবেসে বলতে যাবো কোন দুঃখে? ছেলে ছেলেতে ভালোবাসা হয় নাকি?
- তাই তো! আমিও যে কি সব বলছি!

সেই থেকে বুঝে গেলাম আমি যেটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করে এসেছি এতোটা কাল, সেটা আসলে নিছক বন্ধুত্বের ছলে ফাজলামি ছিল আদনানের।
আস্তে আস্তে মন থেকে মুছে ফেললাম আদনানকে। তারপরই আমার জীবনে এলো Josh. এক রাশ ভালবাসায় সিক্ত করে তুলল আমার সমপ্রেমী জীবন।

• ০৩ 
ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১৪

আজ Josh আর আমার সম্পর্কের তিন বছর পুর্তি। ভালবাসা দিবসটা তাই আমার কাছে ১৪ই নয়, ১৫ই ফেব্রুয়ারী। এইদিনই প্রথম আর শেষবারের মত দেখেছি আমার মনের মানুষটাকে। Josh’র সেই এক কথা, “If you think it’s being difficult to carry on this relationship, just move on!” কিন্তু পারি কই? ওর এত্ত এত্ত ভালবাসা উপেক্ষা করার শক্তি তো আমার নেই। ঐ একটা ভিনদেশি মানুষ যদি আমাকে ভালবেসে এতোটা কাল একা থাকতে পারে, আমি কেন পারবো না? 

আমার জীবনের কাহিনীটা অনেকটাই অপর্না সেনের “জাপানিজ ওয়াইফ” সিনেমাটার মতো। আমি স্নেহময়, আর Josh যেন আমার মিয়াগি। স্নেহময়ের মতো আমার জীবনেও বিধবা চরিত্র “সন্ধ্যা” এসেছে, একবার নয়, অনেকবার। হাতছানি দিয়েছে কামের। কিন্তু স্নেহময়ের অদেখা আর অধরা স্ত্রী মিয়াগির মতো আমারো যে Josh আছে,যে কিনা অদেখা না হলেও এখনো অধরাই রয়ে গেছে আমার কাছে। একদিন হয়তো Josh আসবে এদেশে! নয়তো আমিই যাবো তার কাছে! অথবা আমরা দুজনেই দুজনের দেশ ছেড়ে এক সময় পাড়ি জমাবো নতুন কোন দেশের সন্ধানে! তাই মিলনের এক সম্ভাব্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি আমার অন্তহীন প্রতীক্ষা। 

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?