ছেলে টা ফোন ধরছে না কেন ??
বিকাল থেকে ৫০ বার কল দিলাম, ১০ টা এসএমএস পাঠালাম তারপরও কোন খবর নাই ।। কই আছে কি করছে কে জানে ।। আরও একবার দিয়ে দেখি না ধরলে ওর ফ্রেন্ডকে কল দিব ।। কল এবার রিসিভ করেছে সাগর।
সাগর ঐ পাশ থেকে - হ্যালো
- হ্যালো সোনা পাখী তুমি কই ?
- আমি ফয়সালের বাসায় ।
- ঐ খানে কি কর ? আমার ফোন ধরনা কেন ?
-আমাকে ফোন দাও কেন ? যাও তোমার ঐ ফ্রেন্ডের হাত ধরে হাঁটা হাঁটি কর ।।
- সোনা বাসায় আস তারপর তোমাকে সব কিছু বলব ।
- না, আমি বাসায় আসবনা। আর আমাকে ফোন দিওনা ।
- প্লীজ সোনা এই রকম করেনা বাসায় চলে আস, তুমি না আমার লক্ষি ছেলে, লক্ষি ছেলের মত বাসায় চলে আস।
- না আমি আসবনা, তুমি গিয়ে তোমার ঐ ফ্রেন্ডের সাথে ন্যাকামি কর যাও ।
এই বলে সাগর ফোন রেখে দিল ।। কি করবো এখন ? ওকে গিয়ে আনতে হবে আর কি! এখন ড্রাইভ করতে ভাল লাগতেছেনা। এক কাজ করি পাশের বাসা থেকে আমার ফ্রেন্ড ফয়েসকে নিয়ে যাই ।
ফয়েসকে বলার সাথে সাথে ও রাজী হল । ফয়েস ড্রাইভ করছে আর আমি ওর পাশে বশে আছি । ঠাণ্ডা লাগছে তাই একটু চোখ বন্ধ করলাম । চোখ বন্ধ করতেই সাগরের কথা মনে হল । আমি কেন ভার্সিটিতে ঐ রায়ানের বাচ্চার হাত ধরে হাঁটতে গেছি । আমার বা দোষ ছিল কি রইয়ান জোর করে আমার হাত ধরে ফেলছে তাই ফ্রেন্ডদের সামনে ওরে কিছু বলতে পারিনাই । সাগর এটা দেখে রাগ করছে। বিষয়টা সামান্য হলেও এটা সাগরের কাছে অনেক বড় । আমি ওর জাগাই হলে আরও বেশী কিছু করতাম । ওর আমি ছাড়া কি আছে । ওর সব কিছুতেই আমি । তাই আমার কারো হাত ধরে হাঁটা ওর পছন্দ না। কারো হাতে খাওয়া ওর পছন্দনা এই ২টা কাজ করতে আমাকে সব সময় বারণ করে। আমি সব সময় ওর এই ২টা কথা মনে চলতে চেষ্টা করি তারপরও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাই ।
সাগর আমার থেকে ২ বছরের ছোট হলেও আমার থেকে ভাল বুঝে, আমার অনেক দোষ ও গায়ে নেয়না । আমার অনেক কিছুই ও মেনে নেয় । আমার সব কিছু ভাল ভাবে বুঝে সাগর । আমি আমার নিজেকে যতটুকু বুঝি সাগর আমাকে তার চেয়েও বেশী বুঝে। খুব কঠিন জিনিষকে খুব সহজ করে বুঝে আবার সহজ জিনিষকেও খুব সহজ করে বুঝে ঠিক তেমনি আমাকেও খুব কঠিন জিনিষ গুলা ও খুব সহজ করে বুঝায় । সাগর থাকাই আমার জীবনটা এত সুন্দর। সত্যি আমি সাগর ছাড়া অসম্পূর্ণ । ওর হাঁসি, কান্না , সুখ দুঃখ সব কিছু আমাকে নিয়ে । ওর পৃথিবীতে শুধু আমার রাজত্ব চলে যেখানে অন্য কারো একবিন্দু স্থান নাই । আমাকে নিয়ে ও সীমাবদ্ধ অন্য কারো সাথে তেমন মিসে না, কারো সাথে তেমন কথা বলেনা, আমি ছাড়া তেমন কারো সাথে ঘুরতেও বাহির হয়না । ও ছোট বেলা থেকেই এমন । ও আর ওর ছোট বোন মা বাবা থাকা সত্ত্বেও মা বাবার আদর থেকে বঞ্ছিত। ২জনেই বড় হয়ছে কাজের বুয়ার কাছে । রক্ষণশীল পরিবার, তাই তাদের বাহিরেও তেমন থাকতে দেয়না । আমার কথা চিন্তা করে ওর আদরের ছোট বোনকে একা চিটাগং রেখে আমার জন্য ঢাকা থাকে । যখন থেকে সাগর আমাকে পেয়েছে তখন থেকে ও যেন নতুন এক পৃথিবী পেয়েছে । আমাকে পাওয়ার পর থেকে ও যেন স্বর্গ পেয়েছে । আমিও তাকে সব সময় আমার ভালোবাসা দিয়ে তার অতীত ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি । কোন সময় যাতে ও কষ্ট না পায় সেভাবে কাজ করতে চেষ্টা করি ।
ফয়েসের কথা শুনে চোখ খুললাম, ফয়সালের বাসা চলে এসেছে । বাসায় ঢুকে ফয়সালকে জিজ্ঞাস করলাম সাগর কই? ফয়সাল বলল ওর রুমে সাগর। আমি ফয়সালের রুমে গেলাম। ফয়সাল আর ফয়েস লিভিংরুমে বসে কথা বলছে । রুমে ঢুকে দেখি আমার সোনা পাখীটা চুপ করে বসে আছে । আমি প্রথমে কানে ধরে বললাম সোনা আর হবেনা এখন বাসায় চল। কিন্তু ও রাজী হলনা। পরে ওরে সব কিছু খুলে বললাম কেন হাত ধরে হেটেছি , জানার পর ওর মন একটু নরম হল তারপরও মন খারাপ করে বসে আছে। তাই আমি বললাম,
- সোনা চোখ বন্ধ কর ।
- কেন ??
- করনা করলে বলব ।
সাগর চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে ওর কপালে আর ২গালে ২টা কিস করলাম। এখন রাজী হয়ছে বাসায় যেতে, আমি সাগরের হাত ধরে রুম থেকে বাহির হয়ে ফয়েসকে বললাম ফয়েস চল কাজ হয়ছে। ফয়েস ড্রাইভ করছে, আমি আর আমার সোনা পাখীটা পিছনে বসলাম। ২/৩ বার কথা বলার চেষ্টা করেও বলতে পারিনাই, ও গ্লাস দিয়ে বাহিরের রিমঝিম বৃষ্টি দেখতেছে, আমার দিকে একবারও তাকালনা। ওর যখন মন খারাপ থাকে তখন কার সাথে কথা বলেনা। চুপ চাপ থাকে কিছু সময়। তাই আমি এখন ওরে কথা বলার জন্য জোর করতেছিনা, জোর করলে ওর মন আরও বেশী খারাপ হবে। গভীর মনের মানুষ সাগর । নিজের উপর রাগ হচ্ছে আমি এত ভুল করি কেন? আমার জন্য ছেলে টা কষ্ট পাইতেছে। ওরে কষ্ট দিয়ে পরে আমি নিজেই কষ্ট পাই ।
সাগরের কথা চিন্তা করতে করতে চোখ বন্ধ করলাম । আজকের মত বৃষ্টির এক দিনে সাগরের সাথে প্রথম দেখা । প্রিন্সিপালের সাথে আমার একটু কাজ ছিল, কাজ সেরে বাহির হয়ে দেখি কলেজের সামনে কেউ নাই শুধু একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে ।
কাছে যেয়ে বললাম -hi
-hi
- তুমি কি কার জন্য ওয়েট করছ ??
- ড্রাইভারের জন্য ওয়েট করছি ।
- আজকে তো অনেক বৃষ্টি ড্রাইভার না আসলে কিভাবে বাসায় যাবে ?
-ড্রাইভার আসবে হয়তো কোন কারনে একটু লেট করছে ।
-তুমি কই থাকো ? চল তোমাকে আমি পৌছে দেই ।
- আমি নাসিরাবাদ থাকি, না থ্যাংকস লাগবেনা ।
-আমিও নাসিরাবাদ থাকি চল আমার গাড়িতে উঠ ।
গারিতে উঠার পর সাগর কথা বলছিল না। আমি জোর করে কিছু কথা বাহির করলাম। জানতে পারলাম ও ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আর আমি সেকেন্ড ইয়ারের । ঐ দিন ওকে বাসায় দিয়ে আমি বাসায় চলে যাই। বাসায় আসার পর মনে হল আমি ওর নাম্বার নেই নাই কেন । পরে হঠাৎ করে ফেসবুকে ঢুকে ওর নাম লিখে সার্চ করতেই ওর আইডি পেয়ে গেলাম । আস্তে আস্তে আমাদের ভাল একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। ২জনেই নানা জায়গায় ঘুরতে যেতাম। এই ভাবে ৬ মাস পেরিয়ে যায়। কোন সময় যে আমি সাগরকে ভালোবেসে ফেলি আমি নিজেও জানিনা। কিন্তু আমি বুঝতে পারি আমি সাগরকে ভালবাসি । ঠিক এমনি এক বৃষ্টির রাতে আমি বুঝতে পারি আমি সাগরকে কত ভালবাসি। একদিন ২জনে বিকালে ঘুরতে বের হলাম। রাস্তাই ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছি ২জনে। বাহিরে রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিলো। হটাত সাগর আমাকে ধরে কান্না করে দেয়।
-ভাইয়া এত রাতে বাসায় গেলে আব্বু আম্মু আমাকে বকা দিবে ।
-না তোমাকে বকা দিবেনা আমি বাসায় গিয়ে বলে আসব জ্যামে আটকে ছিলাম আমরা।
এই বলে আমি সাগরের কপালের চুল গুলা সরিয়ে কপালে একটা কিস দিলাম।
বাসায় আসার পর বার বার ওর কথা মনে হচ্ছিলো, ওকে খুব মিস করছিলাম। তখন আমার বুঝতে বাকি নাই আমি সাগরকে কত ভালবাসি। আমাকে জড়িয়ে ধরে সাগরের কান্নার দৃশ্যটা বার বার মনে হতে হচ্ছিলো। ওরে একটা ফোন দিলাম ।
-হ্যালো ভাইয়া ।
- কি করছ সাগর ?
- শুয়ে আছি ঘুম আসতেছেনা। তুমি কি করতেছ ?
- আমি শুয়ে আছি কিন্তু আমারও ঘুম আসতেছেনা । সাগর তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই।
- কি বলবে বলে ফেল ভাইয়া
- সাগর আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি তোমাকে।
সাগর ৫মিনিট চুপ থাকার পর ঐ পাশ থেকে বলল "আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি ভাইয়া কিন্তু কোন সময় বলার সাহস হয় নাই"।
সেদিন দুজনকে দুজনের সব মনের কথা বলে দিলাম। এই ভাবে পেরিয়ে যায় আমাদের সম্পর্কের ৬মাস।
আমার ইন্টার শেষ। আমি ঢাকা এসে পড়াশুনা করতে চাই কিন্তু সাগরকে একা রেখে আসতে মন চাইতেছিলনা । কিন্তু পরে সাগরের আশ্বাসে ঢাকা এসে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হই । সপ্তাহে একবার চিটাগং যেতাম ওর সাথে দেখা করার জন্য । এই ভাবে ওর ইন্টার শেষ হলে ও ঢাকা চলে আসে আমার কাছে। তখন থেকে ২জনে একটা বাসা নিয়ে এক সাথে থাকি । ফয়সের কথাই চোখ খুলে দেখি বাসায় সামনে চলে আসছি। বাসায় যাওয়ার পর ২জনে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে আসলাম, সাগর চুপ চাপ বসে আছে আজকে ও আমার হাত ছাড়া খাবেনা। আমি ওকে আমার হাতে খাইয়ে দিলাম তারপর দুজনেই ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলাম, সাগর অন্য দিকে শুয়ে আছে । আমি ওর মাথাটা আসতে করে আমার বুকের উপর রাখলাম। সাগর আমার বুকের উপর মাথা না রেখে ঘুমাতে পারেনা আবার আমার বুকের ওর মাথা না রাখলে আমার নিজেরও ঘুম আসেনা। যখন চিটাগং ৫/৬ দিনের জন্য যাই তখন ঐ ৫/৬ দিন ২জনের জন্য ১০০ বছরে পরিণত হয় । সাগর কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আমি বলতে না দিয়ে ওর চুলে একটা কিস দিয়ে ঘুমাতে বললাম ।
- এই উঠবেনা ৮টা বেজে গেছে, আমি রেডি হয়ে আছি ।
- না সোনা পাখী আজকে আমার ক্লাস নাই, তুমি যাও ।
- ওকে আমি যাই তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করে নিও, আমি নাস্তা টেবিলের উপরে রাখছি আর তোমার জন্য একটা চিরকুট রাখছি টেবিলে পরে নিও।
- সোনা পাখী তুমি একটা জিনিষ মিস করছ আজকে ।
- কি ?
- আমার কিস নেও নাই ।
সাগর কাছে আসলে আমি ওর কপালে আর ২গালে ২টা কিস দিলাম। সাগর চলে গেছে উঠে দেখি ছেলেটা কি লিখে গেছে। চিরকুটের সাথে একটা লাল গোলাপ আছে।
“জান,
সরি কালকে রাগ করার জন্য। তবে ঐ টা দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ছে তাই রাগ করেছি । তুমি তো জানো তোমাকে আমি কত ভালবাসি। তোমার অনেক কিছুই আমি সহজে মনে নেই। কেননা মানুষ বলতেই ভুল, তাই সবার মত তোমারও মাঝে মাঝে ভুল হয়। অনেক সময় তোমার কিছু খারাপ লাগলে আমি তোমাকে সুন্দর ভাবে বলি যাতে তুমি ভুল না বুঝো। মাঝে মাঝে রাগ করি কেন জানো শুধু তোমাকে মনে করিয়ে দিতে যে আমার এই গুলা ভাল লাগেনা। আমি এই গুলা সহ্য করতে পারিনা । জান তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি। আমার থেকেও অনেক বেশী । আমি কোন সময় তোমাকে হারাতে চাইনা। আমার পৃথিবীতে যেমন শুধু তুমি রাজত্ব কর, ঠিক তেমনি আমিও একা শুধু তোমার পৃথিবীতে রাজত্ব করতে চাই।
এই পৃথিবীতে আর কাউকে দেখলে আমার ভাল লাগেনা।
তুমি আমার পৃথিবীতে রাজত্ব করবে আর আমি তোমার পৃথিবীতে রাজত্ব করবো এটাই তো স্বাভাবিক ...... তাই না ? আর তাই তো আমাদের ভালোবাসার নাম" রাজ্যময় ভালোবাসা"।
বিকাল থেকে ৫০ বার কল দিলাম, ১০ টা এসএমএস পাঠালাম তারপরও কোন খবর নাই ।। কই আছে কি করছে কে জানে ।। আরও একবার দিয়ে দেখি না ধরলে ওর ফ্রেন্ডকে কল দিব ।। কল এবার রিসিভ করেছে সাগর।
সাগর ঐ পাশ থেকে - হ্যালো
- হ্যালো সোনা পাখী তুমি কই ?
- আমি ফয়সালের বাসায় ।
- ঐ খানে কি কর ? আমার ফোন ধরনা কেন ?
-আমাকে ফোন দাও কেন ? যাও তোমার ঐ ফ্রেন্ডের হাত ধরে হাঁটা হাঁটি কর ।।
- সোনা বাসায় আস তারপর তোমাকে সব কিছু বলব ।
- না, আমি বাসায় আসবনা। আর আমাকে ফোন দিওনা ।
- প্লীজ সোনা এই রকম করেনা বাসায় চলে আস, তুমি না আমার লক্ষি ছেলে, লক্ষি ছেলের মত বাসায় চলে আস।
- না আমি আসবনা, তুমি গিয়ে তোমার ঐ ফ্রেন্ডের সাথে ন্যাকামি কর যাও ।
এই বলে সাগর ফোন রেখে দিল ।। কি করবো এখন ? ওকে গিয়ে আনতে হবে আর কি! এখন ড্রাইভ করতে ভাল লাগতেছেনা। এক কাজ করি পাশের বাসা থেকে আমার ফ্রেন্ড ফয়েসকে নিয়ে যাই ।
ফয়েসকে বলার সাথে সাথে ও রাজী হল । ফয়েস ড্রাইভ করছে আর আমি ওর পাশে বশে আছি । ঠাণ্ডা লাগছে তাই একটু চোখ বন্ধ করলাম । চোখ বন্ধ করতেই সাগরের কথা মনে হল । আমি কেন ভার্সিটিতে ঐ রায়ানের বাচ্চার হাত ধরে হাঁটতে গেছি । আমার বা দোষ ছিল কি রইয়ান জোর করে আমার হাত ধরে ফেলছে তাই ফ্রেন্ডদের সামনে ওরে কিছু বলতে পারিনাই । সাগর এটা দেখে রাগ করছে। বিষয়টা সামান্য হলেও এটা সাগরের কাছে অনেক বড় । আমি ওর জাগাই হলে আরও বেশী কিছু করতাম । ওর আমি ছাড়া কি আছে । ওর সব কিছুতেই আমি । তাই আমার কারো হাত ধরে হাঁটা ওর পছন্দ না। কারো হাতে খাওয়া ওর পছন্দনা এই ২টা কাজ করতে আমাকে সব সময় বারণ করে। আমি সব সময় ওর এই ২টা কথা মনে চলতে চেষ্টা করি তারপরও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাই ।
সাগর আমার থেকে ২ বছরের ছোট হলেও আমার থেকে ভাল বুঝে, আমার অনেক দোষ ও গায়ে নেয়না । আমার অনেক কিছুই ও মেনে নেয় । আমার সব কিছু ভাল ভাবে বুঝে সাগর । আমি আমার নিজেকে যতটুকু বুঝি সাগর আমাকে তার চেয়েও বেশী বুঝে। খুব কঠিন জিনিষকে খুব সহজ করে বুঝে আবার সহজ জিনিষকেও খুব সহজ করে বুঝে ঠিক তেমনি আমাকেও খুব কঠিন জিনিষ গুলা ও খুব সহজ করে বুঝায় । সাগর থাকাই আমার জীবনটা এত সুন্দর। সত্যি আমি সাগর ছাড়া অসম্পূর্ণ । ওর হাঁসি, কান্না , সুখ দুঃখ সব কিছু আমাকে নিয়ে । ওর পৃথিবীতে শুধু আমার রাজত্ব চলে যেখানে অন্য কারো একবিন্দু স্থান নাই । আমাকে নিয়ে ও সীমাবদ্ধ অন্য কারো সাথে তেমন মিসে না, কারো সাথে তেমন কথা বলেনা, আমি ছাড়া তেমন কারো সাথে ঘুরতেও বাহির হয়না । ও ছোট বেলা থেকেই এমন । ও আর ওর ছোট বোন মা বাবা থাকা সত্ত্বেও মা বাবার আদর থেকে বঞ্ছিত। ২জনেই বড় হয়ছে কাজের বুয়ার কাছে । রক্ষণশীল পরিবার, তাই তাদের বাহিরেও তেমন থাকতে দেয়না । আমার কথা চিন্তা করে ওর আদরের ছোট বোনকে একা চিটাগং রেখে আমার জন্য ঢাকা থাকে । যখন থেকে সাগর আমাকে পেয়েছে তখন থেকে ও যেন নতুন এক পৃথিবী পেয়েছে । আমাকে পাওয়ার পর থেকে ও যেন স্বর্গ পেয়েছে । আমিও তাকে সব সময় আমার ভালোবাসা দিয়ে তার অতীত ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করি । কোন সময় যাতে ও কষ্ট না পায় সেভাবে কাজ করতে চেষ্টা করি ।
ফয়েসের কথা শুনে চোখ খুললাম, ফয়সালের বাসা চলে এসেছে । বাসায় ঢুকে ফয়সালকে জিজ্ঞাস করলাম সাগর কই? ফয়সাল বলল ওর রুমে সাগর। আমি ফয়সালের রুমে গেলাম। ফয়সাল আর ফয়েস লিভিংরুমে বসে কথা বলছে । রুমে ঢুকে দেখি আমার সোনা পাখীটা চুপ করে বসে আছে । আমি প্রথমে কানে ধরে বললাম সোনা আর হবেনা এখন বাসায় চল। কিন্তু ও রাজী হলনা। পরে ওরে সব কিছু খুলে বললাম কেন হাত ধরে হেটেছি , জানার পর ওর মন একটু নরম হল তারপরও মন খারাপ করে বসে আছে। তাই আমি বললাম,
- সোনা চোখ বন্ধ কর ।
- কেন ??
- করনা করলে বলব ।
সাগর চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে ওর কপালে আর ২গালে ২টা কিস করলাম। এখন রাজী হয়ছে বাসায় যেতে, আমি সাগরের হাত ধরে রুম থেকে বাহির হয়ে ফয়েসকে বললাম ফয়েস চল কাজ হয়ছে। ফয়েস ড্রাইভ করছে, আমি আর আমার সোনা পাখীটা পিছনে বসলাম। ২/৩ বার কথা বলার চেষ্টা করেও বলতে পারিনাই, ও গ্লাস দিয়ে বাহিরের রিমঝিম বৃষ্টি দেখতেছে, আমার দিকে একবারও তাকালনা। ওর যখন মন খারাপ থাকে তখন কার সাথে কথা বলেনা। চুপ চাপ থাকে কিছু সময়। তাই আমি এখন ওরে কথা বলার জন্য জোর করতেছিনা, জোর করলে ওর মন আরও বেশী খারাপ হবে। গভীর মনের মানুষ সাগর । নিজের উপর রাগ হচ্ছে আমি এত ভুল করি কেন? আমার জন্য ছেলে টা কষ্ট পাইতেছে। ওরে কষ্ট দিয়ে পরে আমি নিজেই কষ্ট পাই ।
সাগরের কথা চিন্তা করতে করতে চোখ বন্ধ করলাম । আজকের মত বৃষ্টির এক দিনে সাগরের সাথে প্রথম দেখা । প্রিন্সিপালের সাথে আমার একটু কাজ ছিল, কাজ সেরে বাহির হয়ে দেখি কলেজের সামনে কেউ নাই শুধু একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে ।
কাছে যেয়ে বললাম -hi
-hi
- তুমি কি কার জন্য ওয়েট করছ ??
- ড্রাইভারের জন্য ওয়েট করছি ।
- আজকে তো অনেক বৃষ্টি ড্রাইভার না আসলে কিভাবে বাসায় যাবে ?
-ড্রাইভার আসবে হয়তো কোন কারনে একটু লেট করছে ।
-তুমি কই থাকো ? চল তোমাকে আমি পৌছে দেই ।
- আমি নাসিরাবাদ থাকি, না থ্যাংকস লাগবেনা ।
-আমিও নাসিরাবাদ থাকি চল আমার গাড়িতে উঠ ।
গারিতে উঠার পর সাগর কথা বলছিল না। আমি জোর করে কিছু কথা বাহির করলাম। জানতে পারলাম ও ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট আর আমি সেকেন্ড ইয়ারের । ঐ দিন ওকে বাসায় দিয়ে আমি বাসায় চলে যাই। বাসায় আসার পর মনে হল আমি ওর নাম্বার নেই নাই কেন । পরে হঠাৎ করে ফেসবুকে ঢুকে ওর নাম লিখে সার্চ করতেই ওর আইডি পেয়ে গেলাম । আস্তে আস্তে আমাদের ভাল একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়। ২জনেই নানা জায়গায় ঘুরতে যেতাম। এই ভাবে ৬ মাস পেরিয়ে যায়। কোন সময় যে আমি সাগরকে ভালোবেসে ফেলি আমি নিজেও জানিনা। কিন্তু আমি বুঝতে পারি আমি সাগরকে ভালবাসি । ঠিক এমনি এক বৃষ্টির রাতে আমি বুঝতে পারি আমি সাগরকে কত ভালবাসি। একদিন ২জনে বিকালে ঘুরতে বের হলাম। রাস্তাই ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছি ২জনে। বাহিরে রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছিলো। হটাত সাগর আমাকে ধরে কান্না করে দেয়।
-ভাইয়া এত রাতে বাসায় গেলে আব্বু আম্মু আমাকে বকা দিবে ।
-না তোমাকে বকা দিবেনা আমি বাসায় গিয়ে বলে আসব জ্যামে আটকে ছিলাম আমরা।
এই বলে আমি সাগরের কপালের চুল গুলা সরিয়ে কপালে একটা কিস দিলাম।
বাসায় আসার পর বার বার ওর কথা মনে হচ্ছিলো, ওকে খুব মিস করছিলাম। তখন আমার বুঝতে বাকি নাই আমি সাগরকে কত ভালবাসি। আমাকে জড়িয়ে ধরে সাগরের কান্নার দৃশ্যটা বার বার মনে হতে হচ্ছিলো। ওরে একটা ফোন দিলাম ।
-হ্যালো ভাইয়া ।
- কি করছ সাগর ?
- শুয়ে আছি ঘুম আসতেছেনা। তুমি কি করতেছ ?
- আমি শুয়ে আছি কিন্তু আমারও ঘুম আসতেছেনা । সাগর তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই।
- কি বলবে বলে ফেল ভাইয়া
- সাগর আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক ভালবাসি তোমাকে।
সাগর ৫মিনিট চুপ থাকার পর ঐ পাশ থেকে বলল "আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি ভাইয়া কিন্তু কোন সময় বলার সাহস হয় নাই"।
সেদিন দুজনকে দুজনের সব মনের কথা বলে দিলাম। এই ভাবে পেরিয়ে যায় আমাদের সম্পর্কের ৬মাস।
আমার ইন্টার শেষ। আমি ঢাকা এসে পড়াশুনা করতে চাই কিন্তু সাগরকে একা রেখে আসতে মন চাইতেছিলনা । কিন্তু পরে সাগরের আশ্বাসে ঢাকা এসে একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হই । সপ্তাহে একবার চিটাগং যেতাম ওর সাথে দেখা করার জন্য । এই ভাবে ওর ইন্টার শেষ হলে ও ঢাকা চলে আসে আমার কাছে। তখন থেকে ২জনে একটা বাসা নিয়ে এক সাথে থাকি । ফয়সের কথাই চোখ খুলে দেখি বাসায় সামনে চলে আসছি। বাসায় যাওয়ার পর ২জনে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে আসলাম, সাগর চুপ চাপ বসে আছে আজকে ও আমার হাত ছাড়া খাবেনা। আমি ওকে আমার হাতে খাইয়ে দিলাম তারপর দুজনেই ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলাম, সাগর অন্য দিকে শুয়ে আছে । আমি ওর মাথাটা আসতে করে আমার বুকের উপর রাখলাম। সাগর আমার বুকের উপর মাথা না রেখে ঘুমাতে পারেনা আবার আমার বুকের ওর মাথা না রাখলে আমার নিজেরও ঘুম আসেনা। যখন চিটাগং ৫/৬ দিনের জন্য যাই তখন ঐ ৫/৬ দিন ২জনের জন্য ১০০ বছরে পরিণত হয় । সাগর কিছু বলতে চাইছে কিন্তু আমি বলতে না দিয়ে ওর চুলে একটা কিস দিয়ে ঘুমাতে বললাম ।
- এই উঠবেনা ৮টা বেজে গেছে, আমি রেডি হয়ে আছি ।
- না সোনা পাখী আজকে আমার ক্লাস নাই, তুমি যাও ।
- ওকে আমি যাই তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করে নিও, আমি নাস্তা টেবিলের উপরে রাখছি আর তোমার জন্য একটা চিরকুট রাখছি টেবিলে পরে নিও।
- সোনা পাখী তুমি একটা জিনিষ মিস করছ আজকে ।
- কি ?
- আমার কিস নেও নাই ।
সাগর কাছে আসলে আমি ওর কপালে আর ২গালে ২টা কিস দিলাম। সাগর চলে গেছে উঠে দেখি ছেলেটা কি লিখে গেছে। চিরকুটের সাথে একটা লাল গোলাপ আছে।
“জান,
সরি কালকে রাগ করার জন্য। তবে ঐ টা দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ছে তাই রাগ করেছি । তুমি তো জানো তোমাকে আমি কত ভালবাসি। তোমার অনেক কিছুই আমি সহজে মনে নেই। কেননা মানুষ বলতেই ভুল, তাই সবার মত তোমারও মাঝে মাঝে ভুল হয়। অনেক সময় তোমার কিছু খারাপ লাগলে আমি তোমাকে সুন্দর ভাবে বলি যাতে তুমি ভুল না বুঝো। মাঝে মাঝে রাগ করি কেন জানো শুধু তোমাকে মনে করিয়ে দিতে যে আমার এই গুলা ভাল লাগেনা। আমি এই গুলা সহ্য করতে পারিনা । জান তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি। আমার থেকেও অনেক বেশী । আমি কোন সময় তোমাকে হারাতে চাইনা। আমার পৃথিবীতে যেমন শুধু তুমি রাজত্ব কর, ঠিক তেমনি আমিও একা শুধু তোমার পৃথিবীতে রাজত্ব করতে চাই।
এই পৃথিবীতে আর কাউকে দেখলে আমার ভাল লাগেনা।
তুমি আমার পৃথিবীতে রাজত্ব করবে আর আমি তোমার পৃথিবীতে রাজত্ব করবো এটাই তো স্বাভাবিক ...... তাই না ? আর তাই তো আমাদের ভালোবাসার নাম" রাজ্যময় ভালোবাসা"।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন