আমি অনিক। বাবা মা’র একমাত্র ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই অতি আদরের, তা তো বুঝতেই পারছেন। বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। বড় বোনেরও বিয়ে হয়ে গেছে। অতি আদরের ছেলে বলে হয়তো ঘর থেকে বেশি একটা বের হতে দেয়া হতো না আমাকে। আর তাই বন্ধুও খুব একটা বেশি ছিল না আমার। খেলাধুলাও খুব একটা করতাম না। আর দশটা ছেলের মতো দুরন্তপনা করার সুযোগ পাইনি বলেই ছোটবেলা থেকেই আমি অনেকটাই শান্ত স্বভাবের। পড়ালেখায় খারাপ ছিলাম না। খুলনা শহরের নামকরা স্কুলের প্রথম দিকের ছাত্র ছিলাম। কলেজেও তাই। বড়দের মুখে সব সময়ই শুনে এসেছি যে প্রেম ভালোবাসা করলে লেখাপড়া গোল্লায় যাবে। তাই সব সময় মেয়েদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে এসেছি এতোটা কাল। কিন্তু সেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যে নিজেই এক চরম অনিরাপদ জায়গায় চলে এসেছিলাম সে কথাই বলবো আজ।
এইচ এস সির পর অনার্সে ভর্তি হলাম। বাসা থেকে কলেজটা দূরে। খুলনা শহরে। তাই কলেজের পাশেই ফ্রেন্ডরা মিলে একটা মেস বাসা ভাড়া করি। চার রুমের বাসা। তিনটা রুমের প্রতি রুমে তিনজন করে নয়জন উঠেছে, আর আমার রুমে আমি একা। কারো সাথে বেড শেয়ার করা তো দূরে থাক, রুম শেয়ার করাটাও আমার ধাঁতে সইতো না। আলালের ঘরের দুলাল বলে কথা!
সে যাইহোক, আমার পাশের রুমে থাকতো রায়হান, আনিস আর অরন্য। মেসমেট হিসেবে সবার সাথেই টুকটাক গল্পগুজব করতাম। কিন্তু অরন্য ছেলেটা কেন জানি সব সময়ই চুপচাপ ছিল। আমার মত স্বভাবের দেখেই হয়তো ওর প্রতি আগ্রহটা একটু বেশিই বোধ করতাম। কথাবার্তা আমাদের তেমন হতো না। শুধু দেখা হলে “কেমন আছেন?” “ভাল আছি” টাইপ কথা বার্তা। আর তাছাড়া ও আমার ডিপার্টমেন্টেও পড়তো না। কলেজে যাওয়া আসার পথে মাঝে মাঝে দেখা হলে মুচকি হাসির বিনিময় বা সৌজন্যমূলক কথাবার্তা, ব্যাস ঐটুকই। আমিও আর বেশি ঘাটালাম না। থাক না বেচারা নিজের মতো করে।
একদিন আমার এক ক্লাসমেট কাম মেসমেট সাইফুল বলল অরন্য নাকি আমার কথা জানতে চেয়েছে ওর কাছে। কি জানতে চেয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বলল, অরন্যর নাকি আমার ফটোগ্রাফির ব্যাপারে দারুন আগ্রহ। কোথা থেকে ক্যামেরা কিনেছি, কত নিয়েছে, কোথায় গিয়ে ক্লাস করি ফটোগ্রাফির এই রকম নানা কথা। সাইফুলকে বললাম এতোই যখন আমার ব্যাপারে জানার আগ্রহ, তো নিজ থেকে কথা বলতে আসতে পারে না? সাইফুল বলল, অরন্য নাকি আমাকে ভয় পায়।
শুনে ব্যাপক হাসলাম। আমার মত নিরীহ প্রানীকে যে কেউ ভয় পেতে পারে, সেটা ভেবেই প্রচন্ড হাসি পেল। যা বুঝার বুঝে নিলাম। সাইফুলকে আর কিছু বুঝতে দিলাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলবো অরন্যর সাথে।
যেই ভাবা সেই কাজ। পরদিন ক্লাস থেকে বাসায় ফেরার পথে দেখি অরন্য রিকশা খুঁজছে। এগিয়ে গিয়ে বললাম,
- লিফট পেতে পারি?
- অবশ্যই। কি বলেন ভাইয়া?
- ভাইয়া! তাহলে থাক আমি অন্য রিকশা দেখি। মেসমেট কাম ইয়ারমেটকে যে ভাইয়া ডাকে, তার সাথে আমি আবার একই রিকশায় যাই না।
- সরি ভাই, আর হবে না।
- আবার ভাই! আমার নাম অনিক। আর আমি কোন ভাইলোক না।
- আপনে তো খুব মজার মানুষ, আসেন রিক্সায় ওঠেন।
এভাবেই কথা বলা শুরু হয় অরন্যর সাথে। আমার ফটোগ্রাফির প্রতি তার ছিল ব্যাপক আগ্রহ। দুজনে একসাথে প্রায়ই আড্ডা দিতাম। বিকেলে ঘুরতে যেতাম বাইরে। ও প্রায়ই আমার রুমে আসতো মুভি দেখতে। এভাবে ভালোই চলছিল আমাদের বন্ধুত্ব। একদিন ও আমার রুমে আসলো মুখ ভার করে। বলল,
- অনিক, আমি কাল বাসা ছেড়ে দিচ্ছি, বিদায় নিতে এলাম।
- মানে কি? আগে তো কিছুই বলোনি, কেন বাসা ছেড়ে দিচ্ছ? এখানে কি থাকতে সমস্যা হচ্ছে কোন?
- আসলে তা না। আমার বাসার অবস্থা তো তুমি জানোই। আসলে আমাদের সংসারটা অনেক বড়। বড়ভাইয়ের একার টাকায় সংসার চলে। তার পক্ষে আর বাসা ভাড়া দিয়ে আমাকে শহরে রেখে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাসা ছেড়ে দিচ্ছি। ক্লাস মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে এসে করতে পারলে করবো, তা না হলে শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিব।
শুনে খুব মন খারাপ হয়ে গেল। আর দেখবো না ছেলেটাকে? সারা রাত মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো বিষয়টা। কোনভাবেই কি আমি তার কোন সাহায্য করতে পারি না? কিন্তু আমিও তো ছাত্র মানুষ। কিইবা করতে পারি সে অবস্থায় অরন্যর জন্য? অনেক ভেবে সকালে একটা উপায় বের করলাম।
অরন্যকে ডেকে বললাম,
- তোমার যদি আপত্তি না থাকে একটা কথা বলি?
- হুম অবশ্যই।
- তুমি বাড়ী যেও না। আমি তো একাই থাকি আমার রুমে, তুমি বরং আমার সাথে থেকো।
- সে কিভাবে সম্ভব? তোমার তো একা থাকার অভ্যাস। তোমার কষ্ট হবে।
- আমার কষ্ট নিয়ে তোমাকে এত ভাবতে হবে না। যেটা বলছি করো। এখনি তোমার বেডীং, বইখাতা আর জামা কাপড় নিয়ে আমার রুমে চলে আসো। জলদি। বাইরে বেরুবো নাস্তা করতে।
অরন্যর মুখের সেদিনের অবাক করা হাসিটা আমি আজও ভুলতে পারিনা। ছেলেটা যে কি পরিমান অবাক আর খুশি হয়েছিল! ওকে একটু খুশি করতে পেরে আমার বুকটা আনন্দে ভরে উঠলো, ভুলেই গেলাম যে আমি আমার উনিশ বছরের জীবনে কারো সাথে বেড শেয়ার করা তো দূরের কথা, রুমও শেয়ার করিনি।
সেই থেকে অরন্য আমার সাথে। এক সাথে নাস্তা করা, ক্লাসে যাওয়া, বিকেলে আড্ডা দেয়া, সব কিছুতেই আমি আর অরন্য। সবাই বলতো মানিকজোড়। একদিনের কথা মনে পড়ছে। এক শীতের সন্ধ্যায় কি একটা মুভি দেখছিলাম একসাথে। লম্বা একটা ফ্রেঞ্চ কিস এর সিন ছিলো। দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। হঠাত ওর কপালে আমার কপাল ছোঁয়ালাম, অরন্য বাধা দিল না। এরপর নাকের সাথে নাক, দেখি ওর নিঃশ্বাস ঘনীভূত হচ্ছে। নিজের ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিলাম অরন্যর ঠোঁট। সেই আমার প্রথম চুম্বনের অভিজ্ঞতা।
একসাথেই শুতাম দুজন, কিন্তু দুজনের মধ্যে কিছু হওয়া বলতে ঐ চুমু আর জড়িয়ে ধরে ঘুমানো পর্যন্তই। কেটে গেল কয়েকটি বছর। অরন্যর পক্ষে নিজের খরচ চালানোটা সম্ভব হতো না। আমার বাসা থেকে পাঠাতো ৫,০০০ টাকা। এই টাকায় আমার একার বেশ ভালভাবেই চলে যেত। কিন্তু অরন্য আমার সাথে থাকার পর থেকে দুজনের খরচ চালানো শুরু করলাম এই টাকায়। খুব কষ্ট হতো আমার, কিন্তু অরন্যকে কিছুই বুঝতে দিতাম না। এমনো সময় গেছে নিজে ঈদে জামা না কিনে অরন্যকে কিনে দিয়েছি। আমি তখনো বুঝতে পারিনি কেন এই ছেলেটার জন্য আমি এত ত্যাগ স্বীকার করছি।
যখন বুঝতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অরন্যর একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। তখন আসলে ছেলে ছেলে ভালবাসা হওয়ার বিষয়টা ঠিক বুঝতাম না। তাই কোন রকম জেলাসি কাজ করতো না নিজের ভেতর। যাইহোক মূল ঘটনায় চলে আসি। আকদিন আমি বাসায় ছিলাম না। অরন্য তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসে আমাদের বাসায়। খুলনা শহরটা খুব একটা বড় না। তাই খুব সহজেই জানাজানি হয়ে যায় ব্যাপারটা।
মেয়ের ভাই কয়েকটা মাস্তান টাইপ ছেলে নিয়ে আসে একদিন বাসায়, সেদিন আবার অরন্য বাসায় ছিলো না। বাসার অন্যদের থেকে জানতে পারলো যে আমি অরন্যর রুমমেট। এসে কোন কথা বার্তা ছাড়াই আমাকে চড় থাপ্পড় মারা শুরু করলো। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। তিন চারজন একসাথে চড়াও হলো আমার ওপর। ওরা আমাকে মাটিতে ফেলে লাথি মারছিল আর বলছিল, “হালার পুত, তুই-ই হইলি নাটের গুরু। তুই কইছোছ লতারে এইখানে আনতে, না! *** বাচ্চা, ****** বাচ্চা” এইরকম নানান গালি শুনলাম। এই ধরনের ঘটনার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। নিজের বাসায় এমনকি নিজের রুমে এভাবে কতগুলো ছেলের কাছে বিনা দোষে মার খাওয়ার জন্য খুব অপমানিত হলাম সেদিন।
রাতে অরন্য বাসায় ফিরলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি, ওরা আমাকে “নাটের গুরু” কেন বলছিল। যা শুনলাম, তাতে আমি পুরাই হতবাক। পুরো এক মিনিট স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। অরন্য নাকি ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমার উপরে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। আমিই নাকি অরন্যকে উশকে দিয়েছি লতাকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য, যেহেতু আমার রুম ফাঁকা থাকে। আমি কিছু বলতে পারলাম না। অরন্য অনেকবার সরি বলল, মাফ চাইলো। কিন্তু আমি কোন কথা বললাম না সে রাতে।
পরদিন সকালে সালিস বসলো এলাকায়। আমাদের বাসার সবাইকে ডাকা হলো। প্রথমবার বলে মুরুব্বিরা মাফ চাইয়েই ছেড়ে দিল আমাদের। কিন্তু আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছিল, যদি সত্যিই কোন অপরাধ করতাম, পায়ে ধরে মাফ চাইতেও আমার কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু যেখানে কোন দোষই করলাম না, সেখানে এভাবে মার খাওয়া আর ভরা মজলিশে সবার সামনে মাফ চাওয়াটা ছিল আমার জন্য চরম অপমানের।
অরন্যর ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম, “এখানে কিছু সমস্যা হয়েছে, আপনি ওকে কিছুদিনের জন্য বাড়িতে গিয়ে থেকে আসতে বলেন।” অরন্যর ভাই ওকে ফোনে কি বলল কে জানে! সে বাসায় ফিরে ব্যাগ, বেডিং, বই খাতা সব গোছাতে শুরু করলো। আমি জিজ্ঞেস করতেই বলল, “আমাকে বের করে দিতে চাও, সেটা আমার ভাইকে না বলে আমাকে সরাসরি বললেই পারতে।” আমি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু অরন্য কিছুই শুনতে চাইলো না। এক মনে নিজের কাজ করতে থাকলো। আমার বারবারই মনে হচ্ছিল আমি যেন কিছু একটা হারাতে যাচ্ছি। বুকটা রীতিমত খালি খালি লাগছিল। ওর হাত ধরে ওকে থামানোর চেষ্টা করলাম। এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিল। এরপর যা করলাম, তা ভেবে আজো মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে।
পা জড়িয়ে ধরলাম অরন্যর। ঘটনার আকস্মিকতায় অরন্য যতটা না অবাক হলো, আমি অবাক হলাম তার চেয়ে ঢের বেশি। কি করছি আমি! কিন্তু তখন আর আগ পিছ ভাবার সময় নেই আমার হাতে। যেভাবেই হোক অরন্যকে আটকাতে হবে। অরন্য “কী করো, কী করো” বলে নিজের পা থেকে আমার হাতটা সরিয়ে নিল। কিন্তু থাকলো না আমার সাথে আর। ঠিকই ব্যাগ গুছিয়ে বেডিংপত্র নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। দরজা লাগিয়ে বালিশে মুখ চেপে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলাম।
তিন মাস পর,
অরন্য আবার খুলনা শহরে এলো। আমাদের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা। বাসা নিল আমার বাসার পাশেই। এর মধ্যে যে আমি কতোবার তাকে ফোন দিয়েছি, এস এম এস দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু সে একটা রিপ্লাই ও দেয়নি। প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছিলো এই কয়টা মাস। যখন শুনলাম ও আবার এসেছে, আমি ছুটে গেলাম ওর নতুন মেসে। গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এ কোন বাসায় থাকবে অরন্য! টিনের বাসা, দেয়াল টিন, ছাদ টিন। মে মাসের কাঠ ফাটা রোদেও ঘরে একটা ফ্যান নেই। আমি যেয়েই ওকে বললাম, “চলো এখান থেকে, এখানে তুমি থাকতে পারবে না। আমার সাথে কথা না হয় নাই বলো কিন্তু পরীক্ষার এই একটা মাস আমার সাথে থাক। তোমার ভালোর জন্যই বলছি, প্লিজ। এখানে থাকলে তোমার পরীক্ষা খারাপ হবে।” শুনলো না আমার কথা। আমার উদ্বিগ্নতার জন্য শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে বিদায় করে দিল ওর বাসা থেকে।
খুব কষ্ট লাগছিল। নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটা টেবিল ফ্যান আর বইয়ের র্যাক কিনলাম। পৌঁছে দিলাম ওর বাসায়। বললাম, “এই জিনিস দু’টা না রাখলে খুব কষ্ট পাবো” অরন্য আমাকে আর কষ্ট দিলো না। রেখে দিল ফ্যান আর বইয়ের র্যাক।
পরীক্ষা শেষ হলো ভালোয় ভালোয়। এর মাঝে আসা যাওয়ার পথে কথা হতো টুকটাক, কিন্তু ব্যাস ঐটুকই। অরন্য আর আগের মত মিশলো না আমার সাথে।
কিছু প্রশ্ন করার ছিল অরন্যর কাছে। আসলেই কি অপরাধটা আমার ছিল? আর থাকলেও কি এতোই বেশি ছিল যে ক্ষমা করা যায় নি! অরন্যই আমার জীবনের প্রথম মানুষ যাকে ভালবেসেছি বলা যায়, ওর কাছে যদিও ব্যাপারটা নেহাতই বন্ধুত্ব, যা সহজেই সে দূরে ঠেলে দিতে পেরেছিল, কিন্তু আমার কাছে অরন্য ছিল বন্ধুর চেয়েও অনেক বেশি কিছু।
এরপর এম বি এ করতে ঢাকায় আসি। চেষ্টা করি আস্তে আস্তে অরন্যকে ভুলে যেতে। যান্ত্রিক শহরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে সময় কাটানোর জন্য আশ্রয় নেই ফেইসবুকের। একবার এক ছেলে আমার ছবি দেখে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোএস্ট পাঠায়। কিছুদিন কথা বলার পর জানতে চাইলো আমি ছেলেদের প্রতি ইন্টারেস্টেড কিনা, আমার রোল কি। বুঝলাম না। পরে হাতে কলমে সব শিখিয়ে দিল আমাকে। বলল, অনেকেরই নাকি ফেইসবুকে দুইটা আইডি থাকে। একটা রিয়েলঃ ফ্যামিলি আর ফরমাল ফ্রেন্ডদের জন্য, আরেকটা ফেইক। সেক্স পার্টনার খোঁজার জন্য। আমি তাজ্জব বনে গেলাম। বলে কি এই ছেলে!
অনেকটা জানার আগ্রহ থেকেই আরেকটা আইডি খুললাম। ব্যাস যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে ফ্রেন্ড বাড়তে লাগলো। একদিন একজন দেখা করতে চাইলো। আমিও রাজি। দেখা হলো আমার বাসার সামনের বাস স্ট্যান্ডে। খুব বৃষ্টি শুরু হলো হঠাত করেই। তাকে বললাম আমার বাসায় আসতে। দুপুরে এক সাথে খেলাম, তারপর মুভি দেখলাম কিছুক্ষণ। ও হঠাত করে বলল, “তোমার ঠোঁট দুটো খুব সুন্দর, একটা কিস করি?” না করলাম না। শুধু কিস না, আরো অনেক কিছুই হলো আমাদের মাঝে।
সেই থেকে আমি আর রিজওয়ান এক সাথেই আছি। রিজওয়ান আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। হয়তো আমিও! আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে ও অন্য অনেকের সাথেই অনেক কিছু করেছে, কিন্তু আমার মাঝে যে কি পেলো বুঝলাম না। আর কারো দিকে নজর দিলো না। এখন একটা বাসায় দুজন এক সাথেই থাকি। আমাদের মাঝে বোঝাপড়াটাও দারুন। দুজনই জব করি। রাতে এক সাথে খাই, দু’জন দুজনের হাতে মাথা রেখে ঘুমাই। আমি এখন অনেক সুখি।
কিন্তু মনের একটা কোনে এখনো কেন যেন অরন্য বিরাজ করে আমার। হয়তো প্রথম ভালোবাসাটা ভোলা যায় না বলেই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন