২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভ্যালেন্টাইন'স ট্র্যাজেডি

গল্পের সকালঃ অম্ল-মধুর ফোনালাপ

~ হ্যালো, হ্যা... জানু বলো, এখনি আবার কিহলো ??? (ফোনকল রিসিভ করলো আদনান)

_ না কিছুই হয়নি, তুমি এখন কোঁথায় আছো ??

~ এইতো কিছুক্ষণ আগেই বাসায় আসলাম, এখন সোফায়শুয়ে TV দেখতেছি ।

_ বলো কি ? এরই মধ্যে বাসায়ও পৌঁছাইয়া গেছো, তো বাসায় পৌঁছাইয়া আমাকে একটা কল করবা না ???

~ Oh shit !!! বেমালুম ভুলে গেছিলাম জানু। I am so Sorry, Pls Don’t mind on me .

_ আরে Sorry  বলারকি আছে ?? এইটা আর এমন নতুন কি, তাছাড়া তোমার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত এগুলো শুনতেশুনতে আমি এখন এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

~ উহ !!! শাওন !!! থামো তো ... প্লিজ !!! কিযে বল না তুমি ?? ইদানীং কথার পিঠে কথা প্যাঁচানোটা তোমার একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে,বাদ দাও তো, ভালো লাগে না এইসব।

_ চরম সত্য কথাগুলো তো তোমার কাছে বরাবরইখারাপ লাগে। আচ্ছা যাইহোক, তা আজ যে এতো দ্রুত বাসায় পৌঁছাইয়া গেলা, মাত্র ৪৩ মিনিট আগেইনা আমার বাসা থেকে বের হলে ???

~ হা হা হা ...৪৩ মিনিট !!! ... বাহ দারুন তো... তুমি কি ঘড়ি ধরে আমার বাসায় আসার সময় গুণতে ছিলা নাকি ? যে একেবারেই Exact সময়টাই বলে দিলা? খুব মজা পেলাম কথাটা শুনে হা হা হা ...... আর হ্যাঁ... তোমার বাসা থেকে বেরিয়েইএকটা সি.এন.জি ধরে সোজা বাসায় চলে এলাম তো তাই দেরি হয় নি। তাছাড়া রাস্তাতে তেমন জ্যামও ছিল না তাই...আর কি ...

_ ও আচ্ছা তাই বুঝি এত দ্রুত বাসায় চলে গেছো...আর এতে এতোটা হাঁসির কি হল ??  আসলে মাঝেমাঝে এমন কিছু সময় থাকে যা অন্য সাধারণ কিছু মুহূর্তের চেয়েও অনেক বেশিগুরুত্বপূর্ণ যার মর্ম আসলে সবাই বুঝতে পারে না। যার মূল্য কারো কারো কাছেঅনন্তকাল অপেক্ষাও অনেক বেশি দামী । যেমন এখনকার এই সামান্য ৪৩ মিনিট !!! মুহূর্তটুকুনই তোমার এবং আমার জীবনের জন্য অনেক অনেক বেশি মূল্যবান আর সেজন্যই বোধহয় ঘড়িধরেই আমাকে সময়গুলো গুণতে হলো...

~ উহ.....হঠাৎ কি এমন হল তোমার...বুঝলামনা...?? জ্ঞানীগুণীদের মত কীসব ভাবাবেগ পূর্ণ জটিল কথাবার্তা বলতেছ, কিছুই মাথায়ঢুকতেছে না । জাননা তোমার ওখানে থেকে বাসায় আসার পর থেকেই খুব Tired লাগতেছে, ঘুম ঘুমলাগতাছে। কেমন জানি মাথাটাও হালকা ব্যথা করতাছে । তাছাড়া Tired লাগবেই বা নাকেন ? আজকে আমার উপর দিয়ে যে ধক্কল টাই না গেল... বুঝতেই পারছ । ভাবতাছি ইয়া লম্বাএকটা ঘুম দেবো এখন । আচ্ছা এখন বল ফোন করেছো কেন??? শরীরে কি আবারো কাম-উত্তেজনা জেগে উঠেছে নাকি ?? আমাকে কি এক্ষনি আবার তোমারকাছে ফিরে আসতে হবে ??? কি বল ? আসব নাকি আবার তোমার প্রিয় “Sensation” কনডম আরেক প্যাকেট লইয়া। হা হা হা হা হা ......

_ আরে... ধুর ফাজলামো করো নাতো । তোমার মাথায় সবসময় যতসব আজেবাজে চিন্তা ঘুরপাক খায়। কিছু সিরিয়াস কথা বলারজন্যে ফোন দিয়েছি......

~ আহা... বললাম না । আমি এখন অনেক  Tired, আমার একটু ঘুম দরকার । কথাটা কি এক্ষনি না বললেই নয়। একটু আগেই তো তোমারবাসাতে ছিলাম তখন বল নাই কেন ?? প্লিজ ... জান... পরে বইলো... এখন কোন কথা শুনবারমত Mood নাই।

_ হাতে সময় খুব কম ...এখনই না বললে... পরে এইকথা শোনার সময় তুমি আর পাবে না ... তাছাড়া বাসায় থাকাকালীন তোমার তো কোন কথা শোনারমত সময় ও মন কিছুই থাকে না। আমাকে পেলেই তুমি কেমন জানি হিংস্র পশুর হয়ে ওঠো। মাঝেমাঝে তোমার এমন কাণ্ড দেখে আমি ভীষণ অবাক হই।
~ হা হা হা...কি যে বলনা !! তাছাড়া তোমার মতএমন অস্থির জিনিস পেলে শুধু আমিই কেন, পৃথিবীতে একমাত্র পুরুষত্বহীন ব্যক্তিব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষেই তার নিজের কাম-বাসনাকে উপেক্ষা করা আসলেই অসম্ভবব্যাপার ; বুঝো না জানু... হিংস্রতা কি আর এমনি এমনি আসে। আজকে কিন্তু আমাদের দুইজনেরযৌনলীলা বেশ দারুন জমেছিল, তাই না .......পুরা এক প্যাকেট কনডমই শেষ করেছি .. ??

_ উহ... প্লিজ ... এইবার একটু থামো... এইসবনোংরা কথা শোনার জন্য আমি ফোন করিনি... বললাম না হাতে সময় একদমই কম... এই ক্ষণিকমুহূর্তটাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

~ আরে... এখানে নোংরা কথা কি বললাম ?? ধুর...কি হয়েছে তোমার ?? তোমার মধ্যে আজকে একটুও রোম্যানটিসিজম নাই। আমিতো প্রেমের কথা,রসের কথা, মধুর মধুর কথা বলতাছি...ও আচ্ছা জানু, শোনো না, আজকে কিন্তু তোমার মধুঅন্য দিনের চেয়েও অনেক বেশি মিষ্টি ও মধুময় লাগছিল।

_ তাই বুঝি । আজকের মধুটা সত্যি অনেক বেশিমধুময় লাগলো বোধহয়, তাই না । লাগার কারণও আছে আজকেরটা একটু বিশেষ ধরণের মধুই ছিল,মধুর চেয়েও বেশি কিছু বলতে পারো । তাই তো মনে হয় একদম এক বোতল ভর্তি মধুর পুরামধুটাই আজকে আমার নগ্ন শরীরের উপর দিয়ে চালান করেছো । অনেক মজা পেয়েছ তাই না...একেবারে যেন অমৃতের স্বাদ ???

~ হুম... জটিল ফিলিংস। তুমি তো জানই যে আমি মধু খেতে খুব ভালোবাসি। তোমার গোলাপি সিক্ত ঠোঁটে, মৃদুকোমল বুকে, পদ্ম ফুলাকৃতি নাভিতে আর নিম্নদেশের গভীর উষ্ণ কৃষ্ণগহ্বরে মধু ঢেলে লেহ্যকরার মত সুখ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। তাছাড়া আজকে তোমার নগ্ন শরীরে কামনারআগুনের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র ছিল যে আমি পুরা উন্মাদ ও পাগলের মত হয়ে গেছিলাম। তাইবুঝতেই পারিনাই এত বোতল অমৃত কখন যে কীভাবে নিমিষেই শেষ করে দিলাম।

_  হাহা হা... তুমি ভালোবাসো মধু দিয়ে আমাকে খেতে। আর আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশিভালোবাসি তোমাকে । আমি কি আমার ভালোবাসার মানুষটার জন্য সামান্য এতটুকু মধু সংগ্রহকরতে পারবো না, তাই কি হয়। অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য বিশেষ মধু সংগ্রহ করেছিশুধুমাত্র আজকের দিনটাকে স্মরণীয় ও মধুময় করে রাখার জন্য।

~  উহরে , আমার জানটা আমাকে কত ভালোবাসে রে ....আমার জন্য কত কষ্ট করে রে .. চুম্মা ....জানু ।

_ ভালোবাসা ?? হায়রে ভালোবাসা... আসলেই আমিতোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি । মনে আছে তুমি যেদিন আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাবদিয়েছিলে, আমি তোমাকে কি বলেছিলাম ??

~ এতদিন আগের কথা কি আর মনে থাকে। সব ভুইলা খাইছি...

_ মাত্রই তো একবছর হল এরই মধ্যে সব ভুলেওগেছো... এটা কোন ব্যাপার না, মানুষ ভুলতেই পারে..সেদিন... তোমার দুটি হাত ধরে আমি বলেছিলাম,বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো, মরতে হলেও একসাথেই মরবো ।

~ ও হ্যাঁ... এখন মনে পড়েছে । আমিও তোমাকেঠিক এই কথাই দিয়েছিলাম ।

_ যাক মনে পড়েছে তাহলে !! আজকের তারিখটা কিতোমার মনে আছে ?? আজকে কিন্তু একটা বিশেষ দিন, সেইটাও কি ভুলে গেছো ?

~ নাতো..মনে নাই.... কিসের বিশেষ দিন ?

_ আজ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন’স ডে ।আমাদের ভালোবাসার প্রথম বর্ষপূর্তি আজ। গত বছর ঠিক এই দিনে তুমি আমার জীবনেএসেছিলে। একটা লাল গোলাপ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে লজ্জিত, ভীত ও কাঁপা কাঁপা গলায়ভালোবাসার বানী শুনিয়েছিলে । তোমার অদ্ভুত ভালোবাসার মন্ত্রমুগ্ধ জাদুতে আমাকে সম্মোহিতকরেছিলে। আমাকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারাটিজীবন একই সাথে থাকার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলে। আমার প্রতি তোমার নিজেকে বিশ্বস্তথাকার অঙ্গীকার জ্ঞাপন করেছিলে । সুখে-দুঃখে, ঝড়-তুফানে এই হাতটি ধরে রাখার দৃঢ়প্রত্যয়ের বুলি ঝরিয়েছিলে তোমার ঠোঁট দিয়ে । আমৃত্যু পর্যন্ত আমরা দুইজন দুইজনকে ভালবেসেযাবার মন্ত্র পাঠ করে গভীর আলিঙ্গনে একে অন্যকে বেঁধেছিলাম। কি মনে পড়ে এখন ??

~ ওরে বাব্বা... তোমার দেখি সেইদিনের সমস্তঘটনা হুবহু মুখস্ত হয়ে আছে। বাহ... তোমার স্মৃতি-শক্তি তো দারুন প্রখর। প্রশংসা নাকরে পারলাম না । আর বেচারা আমি একটা গবেট। এত ঘটনা কেমনে সব ভুলে গেলাম। এমনকি আজকের তারিখটা পর্যন্তও মনে রাখতেপারলাম না। এইডা কিছু হইলো... এখন আমার নিজেই নিজেরে মারতে ইচ্ছা করতেছে । সত্তিইতুমি আমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসো। আমি ভীষণ লজ্জিত । প্লিজ... আমাকে ভুল বুঝোনা । I am sorry again.

_ Hey... No Need to Say Sorry. Its Ok... আমাদের ভালোবাসার প্রথম বর্ষপূর্তিতে তোমাকে ঐতিহাসিক উপহার দেবো বলেঠিক করেছি। যা আজ অবধি পৃথিবীর ভালোবাসার ইতিহাসে বিরল।

~ ও আচ্ছা তাই নাকি... ঐতিহাসিক উপহার ? ওয়াও... বেশ মজার নাম তো । কি সেই উপহার ?

_ হ্যাঁ... সত্যি অসাধারণ সেই উপহার । যা এরআগে কখনোই কেউ তার ভালোবাসার মানুষকে দেয় নাই।

~ জলদি বল না, কি সেই উপহার ?? আমার আর তরসইছে না । প্লিজ... বল না ??

_ একটু অপেক্ষা কর বলছি... আচ্ছা !! আদনান !!তার আগে তোমাকে কি একটা প্রশ্ন করতে পারি ?? আশা করি সঠিক ও সত্য উত্তরটাই  দিবা ??

~ হুম ... অবশ্যই সত্য উত্তর দিবো... বল কিজানতে চাও ?

_ আমাকে তোমার কতটুকু সত্যবাদী ও বিশ্বাসীবলে মনে হয় ?? একদম যা সত্য তাই বলবে কিন্তু ??

~ সত্যি বলতে কি ... এখন পর্যন্ত তোমার কোনঅসংগতি অথবা অবিশ্বস্ত কোন কাজ আমার চোখে ধরা পড়েনি । তা সত্ত্বেও সেই প্রথম দিনথেকেই তোমার উপর আমার যতটুকু অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল; সেখান থেকে তুমি চুলপরিমাণও নিজেকে বিচ্যুত করো নাই । আমি তোমাকে পেয়ে আসলেই অনেক গর্বিত ও ধন্য ।

_ ধন্যবাদ । আমার সম্পর্কে এমন সু-মন্তব্যকরার জন্য।  আচ্ছা আমার কাছে তো জানতে চাইলেনা, আমি তোমাকে কতোটা বিশ্বাস করি ???

~ এইটা আবার জানার কি দরকার। আমিতো এমনিতেইবুঝি তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো । একজন মানুষকে বিশ্বাস না করলে, তার উপর আস্থা অর্জিতনা হলে, তাঁকে কি আদৌ এতোটা ভালোবাসা সম্ভব ?

_ হা হা হা ......বাহ দারুন বললে তো, বেশ আনন্দপেলাম। আসলেই আমি তোমাকে একটুবেশিই ভালোবাসি । আর বেশি ভালোবাসি বলেই এখন তোমাকে একটা নিদারুণ সত্য কথা বলবো।

~ এখানে হাঁসির কি হল ?? আচ্ছা বাদ দাও তো।এখন বল কি সেই নিদারুণ সত্য কথা ??

_ তুমি আর কয়েক ঘণ্টার মধেই মারা যাবে। এটাইহচ্ছে সেই আসল ও কষ্টদায়ক সত্য কথা ।

~ হা হা হা... আজকে আমাদের ভালোবাসার প্রথমশুভ জন্মদিন আর তুমি কিনা কীসব ফাজলামো শুরু করেছো সেইযে ফোন করার পর থেকে । আমিহাসতে হাসতে মরলাম গো ও ও ও ... হা হা হা । শোনো আমার খুব ঘুম পাচ্ছে; জলদি কিজন্য ফোন করেছো তাই বল; আর কি যেন ঐতিহাসিক পুরস্কার দেবে সেটাতো বললে না ??

_ হ্যাঁ! আদনান !...একদম ঠিকই ধরেছ। আজকেআমাদের ভালোবাসার প্রথম ও শেষ জন্মদিন । কি আজিব ব্যাপার তাই না ? পৃথিবীতে প্রথমপ্রেম বার্ষিকীতেই মৃত্যুর স্বাদ কয়জন প্রেমী যুগলের ভাগ্যে ঘটেছে ; ইতিহাসঘাঁটলেও খুজে পাওয়া ভীষণ দুষ্কর ।

~ উহ... শাওন !! মেজাজ খারাপ করাইয়ো নাতো ।জলদি বলো, নইলে ফোন রেখে দিলাম কিন্তু ।

_ হ্যাঁ... কথা বলতে বলতে অনেকটা কাল বিলম্বকরে ফেললাম। সময় ধীরে ধীরে একদমই ফুরিয়ে আসতেছে । অলরেডি ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট অতিক্রান্ত হয়েও গেছে । উপহারটার বিষয়ে এখনই না বললেই নয়।

~ শাওন !! প্লিজ ... কি শুরু করেছো এইসব ?একটু আগে বললে, ৪৩ মিনিট এখন আবার ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট আমি কিন্তু বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি; লাইন টা কেটে দিলাম কিন্তু । কিছু বলার থাকলে বলো ?

_ শোনো... তোমার প্যান্টের ডান পাশের পকেটেএকটা চিঠি দিয়েছি । ঐটাই হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দেয়া ভালোবাসার শেষ এবংঐতিহাসিক উপহার।  দয়া করে চিঠিটা এক্ষনিপড়বে; পড়া শেষ করেই আমাকে ফোন দিবে, ঠিক আছে ।

~ হা হা হা।। তোমার পাগলামি দেখে আমারদিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে ইচ্ছা করতেছে । এই যুগে কেউ বুঝি কাউকে চিঠি দেয়, বোকাকোথাকার । আচ্ছা ঠিক আছে; এখন কেন ? আমি তো চিঠিটা পরে পড়লেই পারি; এখন একটু রেস্টনেই , ঘুমাই ; ঘুম থেকে উঠে তারপর পড়বো।

_ মানছি চিঠি দেয় না; কিন্তু আমি দিলাম ।মনের গভীর অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম কিন্তু চিঠিই। প্লিজ আরদেরি করো না, এখনি চিঠিটা পড় । পরে আর সময় হবে না । আমি এখন ফোনরাখছি। তবে চিঠিটা পড়ে আমাকে ফোন করতে ভুলনা কিন্তু। অবশ্য আমি না বললেও তোমাকেআপনাআপনিই ফোন করতে হবে ।

~ এতোটা নাছোড়বান্দা তুমি সেইটা আজই প্রথমউপলব্ধি করলাম । ঠিক আছে ফোনটা রাখতেছি । চিঠিটা পড়ে দেখি; কী এমন আহামরি যে এক্ষনি নাপড়লেই নয় ।

_ অনেক অনেক ধন্যবাদ । Bye For Now.

~ Bye Bye

গল্পের মধ্যাহ্নঃ আনন্দ-বেদনা পরিপূর্ণচিঠিপঠন

প্যান্টের ডান পকেটে হাত দিতেই চিঠিরঅস্তিত্ব টের পেল আদনান। পকেট থেকে চিঠিটা বের করে গাঁঢ় নীল রঙের জরি দেয়া অদ্ভুতসুন্দর একখানা খাম দেখে আদনানের চোখ জুড়ালেও; খামের উপর শাওনের স্বীয় হাঁতেচিত্রায়িত ভালোবাসা আকৃতি মনোগ্রামের অভ্যন্তরে একটা তীক্ষ্ণ সুচালু তীর বিধ্বস্তকরার দৃশ্য অংকিত দেখে আদনানের চোখ-ভ্রু কিছুটা কুঁচকে গেলো । অবচেতন মনেই অজানা ওঅপরিণামদর্শী আশঙ্কার আবির্ভাব অনুধাবন করতে পেরে ভয়ে বুক কিছুটা দুরুদুরু করেউঠলেও সবকিছুকে শাওনের  রহস্য, খামখেয়ালীপনাও তামাশা ভেবে চিঠিটা খুলে হাঁতে নিয়ে পড়া শুরু করলো।

অপ্রিয় বিশ্বাসঘাতক আদনান,

পত্র প্রারম্ভের এহেন ভয়াবহ সম্বোধন চাক্ষুষকরেই বিস্মিত ও ভীত হয়ে গেছো নিশ্চয়ই ? কিছুটা হতবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক । তোমারজায়গায় আমি হলেও তাই হতাম। যাকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসি সেই প্রিয় মানুষটাকেমুহূর্তের মধ্যেই এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুর ভাবে কীভাবে সম্বোধন করলাম। আসলে ইহা হতে অধিকতরভালো আর কোন বিশেষণে তোমাকে সম্বোধন করবো সেইটা অনুসন্ধান করতে না পেরেই এমনঅপ্রিয় কিছু সত্য শব্দগুলোর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হলাম । কবি-সাহিত্যিকদের মতে বেদনার রঙ নীল হবার সুবাদেই চিঠির খামের রঙটাকে নীলরঙ হিসেবে বেছে নেবার পেছনের যৌক্তিকতাটাও মোটামুটি সার্থক । তাছাড়া সম্পূর্ণচিঠিটা পাঠ করলেই খামের উপরের অংকিত চিত্র সম্পর্কিত তোমার ধারনাটাও পুরাপুরিস্পষ্ট হয়ে যাবে ।

এটা তোমার কাছে লিখা আমার জীবনের প্রথম ও শেষচিঠি । চিঠিটা যখন লিখতে বসলাম কীভাবে শুরু করবো আর কীভাবে শেষ করবো কিছুই মাথায়আসতেছিল না । হাতের কলম যেন চলতে চাইছে না, আঙুলের ফাক গলে বারবার পড়ে যাচ্ছে;পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখছি আর ছিঁড়েই চলেছি; কোনভাবেই মন যেন সায় দিচ্ছিল না।তারপরেও শতকষ্ট উপেক্ষা করে অনেকটা বেদনা ও ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে অবশেষে মনেরইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক তোমার উদ্দেশ্যে চিঠিটা লিখতে নিজেকে নিয়োজিত করতেসচেষ্ট হইলাম । লেখার সময় শুধুকল্পনায় ভাসতেছিল বিগত একটা বছর আমাদের সম্পর্কের মিষ্টি-মধুর দিনগুলোর কথা,স্মরণীয় কিছু মুহূর্তের কথা, ক্ষণিকের কিছু ভালোলাগার কথা, মান অভিমানের,আবেগ-অনুরাগের কথা। কীভাবে একে অপরকে জানলাম,কাছে আসলাম, সম্পর্ক কীভাবে শুরু হল, কীভাবেকেটেছে মুহূর্তগুলো, কোথায় কোথায় একান্ত কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছি, আমি তোমার জন্য কিকরলাম, তুমি আমার জন্য কি করলে প্রভৃতি বিস্তর সব চিন্তার ডালি যেন খুলে বসেছিলাম।

কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ শেষে আমি উপলব্ধিকরলাম মিথ্যাবাদী, প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক, ভণ্ড, যৌন পিপাসু, কামলোভী, দুশ্চরিত্র,বিকৃত রুচি সম্পন্ন সহ অন্যান্য যাবতীয় যেকোন খারাপ বিশেষণে ভূষিত করলেও তোমারগুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। তোমার অদ্ভুত সুন্দর চেহারা, সুললিত কণ্ঠের বাচনভঙ্গি, কিছুক্ষণ পরপর চাঁদের মত বাঁকা ঠোঁট নিঃসৃত ভুবন ভুলানো হাঁসি, অপূর্বদেহসৌষ্ঠব, বলিষ্ঠ প্রশস্থ বক্ষ, সুউচ্চ গ্রীবা,কেতাদুরস্ত পোশাকআশাক আরস্মার্টনেস দর্শিত হয়ে আমি পাগল হয়েছিলাম সত্য। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ও মনহরণকরেছিল আমার প্রতি ব্যক্ত তোমার গভীর ভালোবাসার বানী, অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের ইশতেহার,আমার প্রতি প্রেমী ভাবাপন্ন একটা রোম্যান্টিক মায়া ও আবেগ ।

আমি শুধু বলেছিলাম আমি তোমার কাছ থেকে তেমনকিছুই চাই না। আমাকে তোমার ভালো ও বাসতে হবে না; কারণ আমিই তোমাকে এতোটা ভালবাসবোযে তুমি আমাকে ভালোবাসার সময়ই পাবে না। কিন্তু তোমার প্রতি আমার শুধুমাত্র একটাইদাবী ও আবদার ছিল যে তুমি কোনদিনও আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না; আমার কাছে মিথ্যা বাছলনার আশ্রয় নেবে না। কারণ আমি অনেকটা আবেগি,অভিমানী ও একরোখা স্বভাবের একজন মানুষ; আমি যাকেবিশ্বাস করি তাঁকে মন থেকেই করি; কিন্তু সেই ব্যক্তিই যদি আমার সাথে অন্যায়-অবিচারকরে তাহলে সেটা বরদাশত করা আমার জন্য ভীষণ দুরূহ ব্যাপার; এমনকি তাঁকে খুন পর্যন্তকরতেও আমি দ্বিধাবোধ করবোনা। সবকিছু সহ্য করতে পারলেও আমার সাথে কেউ প্রতারণা করলে বা আমার বিশ্বাসনিয়ে ছিনিমিনি খেললে সেইটা আমি গ্রাহ্য করতে পারবো না। আর সেই তুমিই কিনা সবচেয়েবড় ভুলটাই আমার সাথে করেছো। আমার দুর্বল জায়গায় আঘাত করে রীতিমত আমাকে বিধ্বস্তকরেছো। ভেবে খুব অবাক হচ্ছ আমি এইসব জানলাম কীভাবে ? আসলে তুমি তো আমাকে একটুওভালোবাসো নি তাই তুমি আমার বিষয়ে কখনো কোন খোঁজখবর রাখোনি; রাখার চেষ্টাও করিনি;কিন্তু আমিতো তোমাকে সত্যি ভালবেসেছিলাম তাই তো তোমার সবসময়কার খবরাখবর নিতাম।প্রতিটি দিন; প্রতিটি ক্ষণ তুমি কি করতে,কোথায় যেতে, কার সাথে দেখা করতে সব কিছুরপুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আমার কাছে আছে ।

মনে পড়ে ২১শে নভেম্বরের কথা। সেইদিন বন্ধুদেরসাথে আমার জন্মদিনের পার্টি শেষ করে দুজনে একই সাথে উত্তরা থেকে পান্থপথ ফেরার পথেবনানীতে গাড়ি থেকে নেমে যাবার সময় তুমি বলছিলা সামনেই ফুফুর বাসায় একটা জরুরিপ্রয়োজনে তোমাকে যেতে হবে। কিন্তু তুমি সেইদিন মিথ্যা বলেছিলে ফুফুর বাসায় না গিয়েসারারাত রায়হানের বাসায় রাত কাটিয়ে ছিলে। সত্য যে কখনো চাপা পড়ে থাকেনা। কারণ আমিবাসায় আসতে না আসতেই রায়হানের সাবেক বয়ফ্রেন্ড সিহাব যখন আমাকে ফোন করে তোমারসম্পর্কে ঠাট্টা-উপহাসের ছলে বিদ্রুপ করে কথাগুলো আমাকে বলছিল আর বিশ্রীভাবেহাসতেছিল তখন তোমাকে নিয়ে আমার সমস্ত গর্ব-অহংকার-বিশ্বাস যেন ধূলিসাৎ হয়ে গেছিলো।তোমার মনে আছে কিনা জানিনা ঐদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়ের সাথে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিলো; আমিপ্রায় রাত তিনটার দিকে তোমাকে ফোন করলে তুমি আমাকে একটা চুমু খেয়ে বলেছিলে, আজকেরাতের এই এক পশলা বৃষ্টিটা আমাকে নিয়ে ভেজার জন্য তুমি আমার জন্মদিনের উপহারহিসেবে দিলে। তুমি সেইদিন সত্যি আমাকে ভিজিয়ে ছিলে কিন্তু বৃষ্টিতে নয় চোখেরঅশ্রুতে । ঐ রাতে আমি সারারাত কেঁদেছিলাম কিন্তু তুমি অন্যের শয্যায় শয্যাসঙ্গীহয়ে ভালোবাসার বিশ্বাসঘাতকতার লীলাখেলায় উন্মক্ত হয়েছিলে। তোমাকে ঘিরে আমার হৃদয়েরসমস্ত বিশ্বাস-আবেগ ও প্রতিশ্রুতির বলিদান করেছিলে। শুধুই কি তাই এমনকি মাত্রইবিগত কয়েকদিন আগেই নামকরা বাজে চরিত্রের ও সমকামী জগতের অন্যতম দেহপসারিনি হিসেবেখ্যাত ধানমণ্ডির রাজীবের সাথে পর্যন্ত মেলামেশা করতেও নিজেকে এতটুকু ছাড় দাও নাই,রুচিতে বাধে নি। তোমার কুকীর্তির আরো কতগুলা রেকর্ড আমার আছে এবং আমি জানিএইসব গুলাই সত্য, এগুলাকে মিথ্যায় পরিণত করার মত সৎসাহসঅন্ততপক্ষে তোমার নাই।

কিন্তু তবুও আমি তোমাকে এসব বিষয়ে কখনো কোনপ্রশ্নও করিনি,কোনদিন কোন কৈফিয়তও জানতে চাই নি, এমনকি জবাবদিহি পর্যন্ত করিনিশুধুমাত্র এইভেবে যে তুমি হয়ত কোন একদিন নিজেকে শুধরে নেবে ; নিজের ভুলকে উপলব্ধিকরতে পারবে; অনুতপ্ত হবে, অনুশোচিত হবে; আমার সত্য ও পবিত্র ভালোবাসা তোমাকে আমারকাছে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবে। নিজেকে অনেক সহনশীল ও কষ্ট সহিষ্ণু করে সময়ের হাঁতে সঁপেদিয়েছিলাম; তোমার ফিরে আসার জন্য। কিন্তু আমার সমস্ত বিশ্বাস,স্বপ্ন ও আশায় গুঁড়ে বালি হতে মোটেও কাল বিলম্ব হয়নি; তুমি যেন দিন দিনআরো বেশি বেপরোয়া ও দুশ্চরিত্র যৌন-কাম প্রত্যাশী বেহায়া নির্লজ্জ লোকেদের মত যৌনকুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে নিজেকে বাজারের আর ৫/১০ জন যৌন খরিদ্দারদেরসম চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন অমানুষে পরিণত করেছো। আজ এর সাথে; তো কাল ওর সাথেনিজেকে শারীরিকভাবে মিলিয়েছ। আমার কাছে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করেছো, আমাকে ঠকিয়েছ,বিশ্বাসঘাতকতা করেছো; এই জগতের সাধারণ আর কয়েকজন ছেলেদের মত করে আমাকে শারীরিক লালসা-বাসনা-কামনারউপঢৌকনের মত ব্যবহার করেছো।  
                        
তুমি হয়ত জানতে, আমি আর তুমি একই যৌনঅনুভূতির সমপ্রেমি হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র তোমার ভালবাসায় নিজেকে একটু ভাসাতে,তোমার হাত ধরে একইসাথে হাঁটতে নিজের স্বতন্ত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট থেকে বের হয়েওতোমার কাছে নিজেকে ঢেলে দিয়েছিলাম। বিলিয়ে দিয়ে ছিলাম আমার মন প্রাণ দেহ। কিন্তুতুমি আমার কোনকিছুর মূল্য রাখোনি। সমস্ত আবেগ ভালোবাসাকে খেলনার বস্তুতেরূপান্তরিত করেছো। অনুভূতিহীন সম্পর্কে একে অন্যের পারস্পারিক ঘনিষ্ঠতা মানেইযৌনতার প্রাধান্য কিন্তু ভালোবাসার নয়; পক্ষান্তরে অনুভূতিযুক্ত সম্পর্কে গভীরঘনিষ্ঠতাও কখনো কখনো কাউকেই বিন্দুমাত্র যৌনতায় আকৃষ্ট করতে পারে না; যদি তাঁদেরমধ্যে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে সামান্য শ্রদ্ধাবোধ টুকু বজায় থাকে। তোমার কাছে আমাদেরসম্পর্কটা পুরাটাই অনুভূতিহীন শুধুই যৌনতার। তাই যখন যেভাবে পেরেছ আমাকে কামনারখাদ্য বানিয়েছ। তোমার কাছে আমার শরীরের অনেক দাম; মনটা নেহায়েতই তুচ্ছ খড়-কুটোর মতফেলনা জিনিস। প্রেমটা তোমার কাছে বরাবরই ছিল শরীর সর্বস্ব; মন সর্বস্ব নয়। আর একটাশরীর সর্বস্ব হিংস্র প্রেমী মানুষের সাথে অনিশ্চিত একটা বন্ধনে জড়িয়ে আমি আমার জীবনেরকিছু মূল্যবান সময়কে হারিয়েছি; শরীরটাকে কলুষিত করেছি। কিন্তু আর পেরে উঠছি না।তোমাকে একটা বছর সময় দিয়েছি; এমন না যে তুমি বিষয়টা বুঝতে পারো নি। ঠিকই বুঝেও নাবোঝার ভান করেছো; অহর্নিশি অভিনয় করে আমাকে বোকা বানিয়েছ। অবশেষে অনেক ভেবে চিনতেসিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে আমি খুন করবো। বিশ্বাসঘাতকতার চরমশাস্তি দেবো। যদি তোমাকে বাঁচিয়ে রাখি ঠিক একই রকম আচরণ তুমি আমি অন্যদের সাথেওকরবে কারণ এইকয়দিনেই তোমার চরিত্র আমার ভালো মতরপ্ত হয়ে গেছে। আমার এতোটা ভালবাসা-প্রেম যখন তোমাকে ফেরাতে পারেনি তখন অন্য কেউপারবে বলেও মনে হয় না। আমি আর কয়েকজন বোকা-সহজ-সরল ছেলেদের মত নই যে নিজেকেআত্মাহুতি দিয়ে তোমাকে পরিত্রাণ করবো, মুক্ত করবো। আমি এতোটা সহৃদয় সম্পন্ন মানুষ নই। তুমি আমার ভালোবাসার প্রশান্ত-কোমল-আদুরে হৃদয় দেখেছোকিন্তু জিদ-রুক্ষ-কঠোর-নির্দয় রূপ দেখনি। তাই বহুত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেঅবশেষে তোমাকে মেরে ফেলার জন্য আমাদের ভালোবাসার প্রথম জন্মদিনটাকেই মৃত্যুদিনহিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হলাম। আজ ভ্যালেন্টাইন’স ডে। আর আজকের এইদিনেই রচিত হবেভালোবাসার নতুন ট্র্যাজেডি। যেটার নাম দিয়েছি ভ্যালেন্টাইন’ ট্র্যাজেডি।

তুমি মধু খেতে অনেক ভালবাসতে। মধু দিয়ে আমাকেআদর করতে খুব ভালবাসতে। আমিও খুব উপভোগ করতাম মধু দিয়ে আমাকে নিংড়ানো তোমার সেইঅদ্ভুত মধুময় আদরমাখা ভালোবাসা। আর সেই মধুই বেছে নিলাম তোমার সাথে আমার শেষ মধুরমিলনের ক্ষণটিকে। কারণ আজ মধুর সাথে খুবই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় পঞ্চাশটি ঘুমেরওষুধ মিশিয়ে রেখেছিলাম। যা খাওয়ার ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যে তুমি গভীর ঘুমে নিমগ্ন হবে।যেই ঘুম অন্তহীন; যেই ঘুম মৃত্যুঘুম; যে চিরনিদ্রায় কেউ একবার গেলে আর কখনোই ফিরেআসে না। তুমিও ধীরে ধীরে গভীর সেই চিরঘুমে নিমগ্ন হতে চলেছ; সময়ও খুব কম তোমারহাঁতে সেই জন্যই তোমাকে চিঠিটা দ্রুত পড়ে ফেলার জন্য বারবার সময়ের তাগিদদিচ্ছিলাম। কারণ এই সামান্য সময়টুকু যে অনন্তকাল অপেক্ষাও অনেক মূল্যবান। আর এইটাই হল তোমাকেদেওয়া আমার সেই ঐতিহাসিক উপহার। ভ্যালেন্টাইন’স ডে অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসেভালোবাসার প্রথম জন্মদিনেই শেষ জন্মদিন উপহার। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কি হতেপারে বল। ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র ইতিহাসে তোমার আর আমার প্রেম উপাখ্যান তাইভ্যালেন্টাইন’স ট্র্যাজেডি হয়েই থাকবে।

খুবই অবাক ও বিস্মিত হচ্ছ তাই না; এতো প্রিয়মানুষটি কীভাবে বিরতিহীন ভাবে অপ্রিয় সত্য কথাগুলো লিখে গেলো ? হ্যাঁ, পারলাম ।অনেক কষ্ট বেদনা সহ্য করে হলেও পারলাম। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আদনান। এখনোভালোবাসি; আজো ভালোবাসি; মৃত্যুর পরে যদি কোন জীবন থাকে সেইখানেও তোমাকে প্রানেরচেয়েও বেশিই ভালোবাসবো। কিন্তু আমার আবেগ আর ভালোবাসার মূল্য যার কাছে নাই, তারকাছ থেকে প্রত্যহ এমন অমানবিক অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছি না। কোনদিন তোমাকে কোনপ্রশ্ন করিনি, তবে আজ তোমার বিবেকের নিকট কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে চিঠির ইতি টানবো-কেন আমাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে ? ভালোই যখন বাসতে পারবে না তখন বললেইপারতে; আমি তো তোমাকে কোনপ্রকার জোর-যবরদস্ত করিনি তাহলে কেন আমারজীবন,বিশ্বাস,আস্থা,শরীর,মন নিয়ে খেলা করলে?? প্রতারিত কেন করলে ? কেন আমাকেনিয়মিত তোমার দেহের নিচে পিষ্ট করলে ? জানি এসবের কোন উত্তর তোমার জানা নাই। তবেশেষে একটা কথাই বলবো আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি আর ভালোবাসার মানুষই নাকি সবচেয়েবেশি কষ্ট দেয়। আমি তোমাকে সেই অন্তিম কষ্টটাই দিলাম। মৃত্যু উপহার দিলাম।

ইতি
খুনি শাওন



গল্পের অপরাহ্ণঃ করুণ পরিণতিতে মিষ্টিপরিণয়ের সূচনা

_ হ্যালো.. কি ? চিঠিটা পড়া শেষ হল ? খুব ভয়লাগতেছে তাই, না ? (ফোনকল রিসিভ করলো শাওন )

~  না,কোন ভয় লাগতেছে না। আমার জন্য যা প্রাপ্য হয়ত সেটাই পেতে চলেছি। তোমাকে অনেকধন্যবাদ শাওন। অন্তত আমাকে আমার মৃত্যু উপহার দিয়ে হলেও তুমি আমাকে সঠিক পথেফেরাতে পেরেছ। জীবনের সমস্ত কৃত ভুলগুলোর একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিসমাপ্তি হওয়াঅবধারিত ছিল। আমিও তো তোমার মত রক্ত মাংসেরই একজন মানুষ সুতরাং কিছুটা উপলব্ধিকরার জ্ঞান তো আমার মধ্যেও আছে...

_ এটা ছাড়া আমার হাঁতে যে আর কোন উপায় ছিলনা! আদনান! নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি। নিজেকে অনেক বোঝানোরচেষ্টা কিন্তু সামলাতে পারিনি। চরম বাস্তবতাই আমাকেঠেলে দিয়েছে কঠিন সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে... আর আমি এরজন্য তোমার কাছে কোন Sorry ও বলবো না, ক্ষমাও চাইবো না; কারণ আমার মনে হয়েছে আমি সঠিক কাজটাই করেছি ।

~ হ্যাঁ... তুমি একদমই উপযুক্ত কাজই করেছো।আমিও তোমাকে কোনরূপ দোষারোপ করবো না; কোন মিথ্যা অজুহাত দাড় করিয়ে শেষবেলাতেঅন্ততপক্ষে আর প্রতারণা করতে চাই না; তোমার ভালোবাসার প্রশংসা করেও তোমাকে ছোটকরার মত দুঃসাহস দেখাতে চাই না। বিশ্বাসঘাতকতার এমন নজির হওয়াটাই উচিৎ... যা আজআমি জীবন দিয়ে স্থাপন করতে চাই। তুমি অনেক অনেক ভালো থেকো... আর পারলে এইলম্পট-যৌনপিপাসু পশুটাকে মন থেকেই চিরতরে মুছে ফেলো।

_ হা হা হা হা ...... জীবনের শেষ বেলাতে এসেআজ খুব গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে হাসতে ইচ্ছা করতেছে। তোমার বোধোদয়ের করুণ বাণীগুলোশুনে; মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে হলেও নিজের ভুলকে ভুল হিসেবে ধরতে পারার জন্য আবারোতোমার প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করতেছে । ভালোবাসার অনন্ত ফল্গুধারায় নিজেকে ভাসাতে ইচ্ছাকরতেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীকে চিৎকার করে জানাই আদনান আমি তোমাকে অনেক অনেকভালোবাসি। তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার ঠোঁটে মিষ্টি করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছা করতেছে।কিন্তু আমার সময়ও বড়ই কম... কেন যে জীবনটাকে এভাবে নিয়তির হাঁতে ছেড়ে দিলাম। কেনযে আরেকটু সময় অপেক্ষা করলাম না।

~ মানে। এইসব তুমি কি বলছ শাওন ?? তোমার আবারকি হল, তুমিও কি... ?

_ তোমাকে কথা দিয়েছিলাম বাঁচতে হলে একসাথেইবাঁচবো; মরতে হলেও একসাথে মরবো । কিন্তু তুমি কীভাবে ভাবলে তোমাকে মেরে আমি বেঁচে থাকবো।সেটাতো আসলে সম্ভব নয়। তোমাকে যতগুলা ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি,ঠিক তার চেয়েও দিগুণ পরিমাণ ঘুমের বড়ি আমি খেয়েছি; যাতে আমি তোমার চেয়েওকিছুটা বেশি কষ্ট পেয়েই মরি। তোমাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসি আরসেই আমিই কি এতোটা নির্মম হতে পারি যে অন্তত বিদায়বেলাতেও তোমাকে সামান্য একটুভালবাসতে পারবো না ।

~ এভাবে আর বইলো না শাওন... আমি আর শুনতেপারছি না... আমার মত একটা পাষণ্ড নরপশু বোধহয় এই পৃথিবীতে একটিও নেই আর কোনদিনআসবেও না; যে তোমার মত এমন একজন মানুষকে জীবনে পেয়েও হেলায় হারালো। আমার মত একজনকীটপতঙ্গের জন্য কেউ তার জীবনকে শেষ করতে পারে। আমি যে কি মূল্যবান রত্ন কাছেপেয়েও খুজে নিতে পারিনি; যার খেসারত আমাকে এভাবে দিতে হচ্ছে। শোন... আমার কেমনজানি গভীর ঘুম পাচ্ছে; আমি কি তোমাকে শেষ একটা সত্য কথা বলতে পারি; অবশ্যই বিশ্বাসঅবিশ্বাস সমস্ত তোমার হাঁতে।

_ হুম ... একটু জলদি বল... আমারও চিরতন্দ্রাবুঝি খুবই সন্নিকটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়বো। বল। কি বলবা ?

~ আজই প্রথমবার তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালবাসতেইচ্ছা করতেছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে জীবনটা যদি শেষ না হত তবে সত্যি তোমার বুকেমাথা রেখে আজীবন কাটিয়ে দিতাম।  I Love u so much শাওন। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর এইটুকুই হবে আমার জীবনের শেষসান্ত্বনা প্রাপ্তি।

_ আমারও তাই ইচ্ছা করছে ! আদনান ; কিন্তু কিআর করা বল। সময় তো একদমই নাই। তবে হয়ত পরের জীবনে আবার আমাদের দেখা হবে। সমস্তঅতীত গ্লানি ভুলে আবারো আমরা একে অন্যকে গভীরভাবে ভালবাসতে পারবো, বুকে জড়িয়েকপালে চুমু খেতে পারবো। আবারো ঘুরবো, একান্ত সময় কাটাবো,ভালোবেসে দুইজন দুইজনকেসিক্ত করবো। যেই ভালবাসায় তৃতীয় কোন পরাশক্তি থাকবে না। শুধুই তুমি আর আমি; আমি আরতুমিই হবে আমাদের সেই অনাগত নতুন পৃথিবী।

~ তাই ই যেন হয়; মহান আল্লাহ্‌ যেন আমাদেরঅন্তত সেই সুযোগটুকু দেন। ভালোবাসার আরেকটা সুযোগ যেন পাই।

_ একদম ঠিক ! আর সেটাই হোক আমাদের শেষ চাওয়া।অবশ্যই আল্লাহ্‌ অনেক মহান । আশা করি তিনি আমাদের সেই সুযোগ দিবেন।

~ আমিন !

_ আমিন !

গল্পের গোধূলিঃ মর্মকথা

হ্যাঁ... এটাই ছিল আদনান আর শাওনের শেষফোনালাপ । ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র দিনে দুটি প্রানের ট্র্যাজিক নিঃশেষ হবার মাধ্যমেইসমাপ্তি ঘটেছিল শাওন আর আদনানের ভালোবাসার ভিন্ন এক অধ্যায়। রচিত হয়েছিল কাল“ভ্যালেন্টাইন’স ট্র্যাজেডি”। যে ভালোবাসাতে ছিল তীব্র অপূর্ণতা, কঠিনটানাপড়েন,ভয়াবহ মানসিক দন্দ,অতিরিক্ত যৌনতা। একপক্ষের অধিক ভালোবাসাওআরেক পক্ষকে ফেরাতে পারেনি অবৈধ যৌনতার করাল গ্রাস থেকে। ঘৃণা, প্রতারণা,মিথ্যাচার,অবিশ্বাসে কোণঠাসা হয়ে পড়া ভালোবাসা অবশেষে ভয়াবহ করুণমৃত্যুতে রূপ নিয়ে অনাবিল প্রশান্তিময় ভালোবাসাকে ট্র্যাজেডিতে রূপান্তরিত করলো।পরিশেষে বলাই বাহুল্য, যে ফুলগুলো আপনাআপনিই আপনার পায়ের কাছে গড়িয়ে আসে তাহলেবুঝতে হবে সেই ফুলের সুবাস আগেই কেউ শুঁখে নিয়েছে নতুবা সেইফুলে কিট-পতঙ্গ রয়েছে;পক্ষান্তরে যেই ফুলের সৌন্দর্য দর্শন করতে হলে কাঁটার আঘাত সইতে হয়; সুঘ্রাণ পেতেচাইলে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয় বুঝতে হবে সেই ফুলটাই আপনার জন্য উপযুক্ত।

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?