২৫ আগস্ট, ২০১৪

আমার জিকু - অনামা

১.
ঘুম থেকে জেগে দেখি জিকু এখনো ঘুমোচ্ছে। সকালের স্নিগ্ধ আলো ওর মায়াবী মুখটাকে আরও মায়াবী করে তুলেছ। আমি ওকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছি। ওকে ছাড়তে মন চাইছে না। তাই ওকে জরিয়ে ধরেই ঘুমের ভান করে পরে রইলাম। কিছুক্ষণ পর জিকু আমার হাতটা সরিয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আমি ওকে আরও বেশি করে জরিয়ে ধরলাম। তখন জিকু বুঝতে পারল যে আমি জেগে আছি। আমাকে উদ্দেশ্য করে জিকু বলল-
_উঠতে দাও। ব্রেকফাস্ট এর জন্য কিছু তৈরি করতে হবে।
আমি জিকুর কানের সামনে মুখ নিয়ে বললাম-
-আজ ব্রেকফাস্ট বাহিরে করব। এখন আমি আমার বাবুটাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকব।
_আহ, ঢং কর না তো। ওঠ, আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে আর তোমাকে অফিসে।
_ভার্সিটিতে যাবে মানে! তোমার তো ভার্সিটি বন্ধ, চলো না কোথাও থেকে ঘুের আসি।
_বন্ধ কে বললো? আন্দোলন চলছে।
_বন্ধ আর আআন্দোলন চলা একই কথা। ক্লাস তো আর হয় না।
_ তাতে কি! আন্দোলন করতে হবে না? শিক্ষার উপরে ভ্যাট আরোপ করবে সরকার, আর আমি আন্দোলন করবো না? এমন যুগান্তকারী একটা আন্দোলন রেখে যাবো তোমার সাথে ঘুরতে! না, আমি পারবো না।
_আন্দোলন করার জন্যতো অনেকেই আছে। তুমি না থাকলেও চলবে। চলো না প্লিজ, প্লিজ,প্লিজ। আমাদের এই ঘুরতে যাওয়াটাও একটা যুগান্তকারী ঘটনা হবে।
(মুখটাতে করুন ভঙ্গি এনে তাকালাম জিকুর দিকে)
_হা হা হা, তুমি পারও বটে।
_হাসির কি হলো?
_তোমার মুখের যা অবস্থা করেছো, তা দেখে আবার না হেসে থাকা যায়?
_শুধু হাসলে হবে না।
_তাহলে কি করতে হবে?
_যাবে কিনা তা কিন্তু এখনো বলোনি।
_আচ্ছা বাবা যাব। কিন্তু তোমার অফিস?
_ছুটি নেব। আমার বাবুটার সাথে ঘুরতে যাওয়ার থেকে কি অফিসটা বড় নাকি!
-যাবে কোথায়?
_ঢাকার বাইরে। অনেক দূরে। যেখানে শুধু আমরা দুই জন থাকব।
_এখানে কি আমরা দুই জন ছাড়া আর কেউ থাকে?
_হুম
_কে সে?
_ব্যস্ততা, তোমার আমার ব্যস্ততা।
_ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে চাচ্ছ?
_হুম, ব্যাস্ততাকে ছুটি দিয়ে চলে যাব দূরে, বহু দূরে। এই শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব। না থাকবে ব্যাস্ততা, না থাকবে কোলাহল। সারাদিন ঘুরে বেড়াবো। কেউ থাকবে না বাধা দেয়ার মত।
_হুম, বুঝলাম কিন্তু যাচ্ছটা কোথায়?
_হুম্মম, চলো কুয়াকাটা থেকে ঘুরে আসি। খুব সুন্দর জায়গা, জানইতো। আমার খালা থাকে ঐখানে । খালা আমাকে খুব আদর করে। আমাকে যেতে বলে কিন্তু যাওয়া হয় না। গেলে আমাদের বেড়ানোর পাশাপাশি খালার সাথেও দেখা হবে।
_তুমি কি যেয়ে তোমার খালার বাড়ী থাকবে নাকি?
_আরে পাগল হলে নাকি! আমি আমার বাবুটাকে নিয়ে একান্ত কিছু সময় কাটাতে চাই। এর মধ্যে কাওকে ভাগ বসাতে দেবো না। শুধু খালার সাথে দেখা করেই চলে আসব।
_ ওকে, লঞ্চে করে যেতে হবে?
_হুম, লঞ্চে যেতে তোমার কোন আপত্তি আছে?
_আরে নাহ।
_তাহলে?
_তাহলে যাওয়া যায়। আমি আগে কখনো লঞ্চে করে কোথাও যাইনি। খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে লঞ্চে করে কোথাও ঘুরতে যাবো। মনে হয় এইবার ইচ্ছেটা পুরন হয়েই গেলো। তবে রাতে যেতে হবে। তোমায় নিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করবো। খুব
মজা হবে। থ্যাংকস নিলয়। এমন একটা যুগান্তকারী ভ্রমনের অফার দেয়ার জন্য।
_বাহ, প্রথমে তো রাজিই হচ্ছিলে না। আর এখন তো তোমার আগ্রহ দেখে আমার ই যেতে ইচ্ছে করছে না।
_তা কি করলে জনাবের যেতে ইচ্ছে, করবে?
_ক্যাডবারির ঐ এডটা দেখছ না, যেইটায় ছেলেটা মেয়েটাকে বেলুন দেয়।
"_হুম, তো?
_অই এড এ ব্যাকগ্রাউন্ড এ একটা মিউজিক বাজে না, ঐটা গাও।
_ওকে,
(সুর দিয়ে গাইতে শুরু করল জিকু)
Kiss me, close your eyes.
and miss me...
আর গাইতে পারলো না জিকু। তার আগেই জিকুর ঠোটে ঠোট রাখলাম আমি।
জিকুও জরিয়ে ধরলো আমাকে।
২.
ওয়াশ রুম থেকে বের হলো জিকু। নাভিমূলের নীচ থেকে হাটু পর্যন্ত একটা টাওয়াল জরিয়ে রেখেছে। চুল থেকে এখনো দু-এক ফোটা জল নিংড়ে পড়ছে ওর কোমল গালে। পরক্ষণেই তা গরিয়ে আছড়ে পরছে শরীরের বিভিন্ন অংগে, তবুও জলের বিন্দু দেখা যাচ্ছে চিবুকের উপর। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। চোখ ফেরাতে পারছি না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। ওর দিকে তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে আর ভাবছি কিছুক্ষণ আগের কথা- এইতো কিছুক্ষন আগেও আমার রাজকুমার আমার বাহুডোরে আবদ্ধ ছিল। মেতে উঠেছিলাম শরীরের খেলায়। চষে বেড়িয়েছি দুজন দুজনের শরীরের অলি-গলি। আমাদের এই খেলা শেষ হলো ভালোলাগার শেষ মূহুর্তে এসে, যখন আমরা দুজন-ই ক্লান্ত। ভাবতে ভাবতে মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো- " ভালবাসি তোমায়, নিজের থেকেও বেশী "
ধ্যান ভাংল আমার জিকুর স্পর্শে।
_ কি হলো? কি ভাবছ এত?
_ কিছু না।
_ আর কি যেন বলছিলে আনমনে?
_কৈ, নাতো।
_আচ্ছা ঠিক আছে, এখন ওয়াশরুমে যাও। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। বিহিরে ব্রেকফাস্ট করার কথা ছিলো, ভূলে গেলে নাকি?
আমি বেড থেকে নেমে জিকুর সামনে দাড়ালাম। আমার দু-হাত ওর দু-গালে রাখলাম। মুছে দিলাম ওর চিবুকে জমে থাকা জল। আলতো করে ওর লিপে একটা কিস করে ওকে পাছ করে ওয়াশরুমের দিকে যাবো এমন সময় ও আমার ডান হাতটা চেপে ধরলো। আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমার দু-গালে ওর দু-হাত রাখলো। আলতো করে আমার ঠোটে চুমু খেলো। যেন আমারি কপি করল ও। কিন্তু আমার মাথায় এতোক্ষণে দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসেছে। দিলাম ওর টাওয়াল ধরে টান। ও এখন সম্পুর্ণ উলঙ্গ। এক সেকেন্ডের জন্য যেন ও স্ট্যাচু হয়ে গেলো। তারপর যখন আমার হাতে ওর টাওয়ালটা ওর নজরে পরল তখন দিল এক দৌড়। পাশের রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। আমি ওর দৌড় দেখে হেসে উঠলাম হো হো করে। তারপর ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।
৩.
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি জিকু বসে আছে রকিং চেয়ারে। দেখেতো আমার চোখ ছানা-বড়া হয়ে গেল। ওর গায়ে একটা সুতাও নেই। দেখলাম মুখ ভার করে বসে আছে। বুঝলাম, রাগ করেছে। আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। ওর মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। বললাম-
_ সরি বাবু, আর এমন করবো না। আচ্ছা, তোমারটা দেখেছি তাই রাগ করেছ, না? আমারটা তোমাকে দেখিয়ে দিলেই তো সমান সমান হয়ে গেলো।
বলেই আমার টাওয়াল খুলে ফেললাম। ও আমাকে রাগ্বত স্বরে বলল-
_তোমারটা খুলতে বলিনি। আমারটা পড়িয়ে দাও।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি ওয়াশ রুমে যাওয়ার সময় ওর টাওয়ালটা যেখানে রেখে গিয়েছিলাম সেখানেই আছে। টাওয়ালটা উঠিয়ে এনে ওকে পড়িয়ে দিলাম। এবার ও হাসতে লাগলো। বলল-
_এবার তোমারটা পড়ো।
_তুমি পড়িয়ে দাও।
_কেন? আমি কি তোমারটা খুলেছি নাকি?দ্র নিজে খুলেছ এবার নিজেই পড়।
_ ওকে, আমার তো আর কেউ নেই যে আমাকে টাওয়াল পড়িয়ে দেবে।
আমি টাওয়ালটা হাতে নিলাম এমন সময় ও আমার হাত থেকে টাওয়ালটা নিয়ে আমাকে পড়াতে শুরু করল।
কি যেন ভেবে বলল-
_তুমি কি আমাকে ভয় পাও?
_হুম
_কেন?
_কারন, তোমাকে আমি ভালবাসি।
_ভালবাসলে কি ভয় পেতে হয়?
_জানিনা, তবে তোমাকে আমি হারাতে চাই না জিকু।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরল আর বলল-
_ আমিও তোমাকে হারাতে চাইনা নিলয়।
আমার কাধে শীতলতা অনুভব করলাম। বুঝলাম, আমার রাজকুমারটা কাঁদছে।

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

Ball

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?