২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

নিঃসঙ্গ পাইন

একা একা দিনের পর দিন কাটাতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়, যেনো দম বন্ধ হয়ে আসে। অথচ গোটা জীবন আমাকে একাই কাটাতে হবে। আমি জানি, চল্লিশ তো দূর, তিরিশ পার হবার সাথে সাথে আমাকে ভীষণ একা হয়ে যেতে হবে। সমবয়সী সব মানুষজন, বন্ধু-বান্ধবীরা যখন পুতুলের মতো সুন্দর, মায়াকাড়া বাচ্চা নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত, ক্লান্ত দিন কাটাবে; আমাকে তখন ভয়ানক নিঃসঙ্গতার সাথে বিষন্ন হয়ে লড়ে যেতে হবে। প্রতিটি মূহুর্তেই নিজেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়ে যেতে হবে। হ্যাঁ, শুধুই বেঁচে থাকার। লোকে বাঁচে সন্তানের জন্য, সংসারের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য; আমাকে বাঁচতে হবে অকারণে, শুধুই নিজের জন্য। 



এমন কিছু প্রতিভাবানও আমি নই, যে বেঁচে থেকে সমাজের খুব উপকার করে ফেলবো, এমন কিছু সাহসীও নই যে ভীষণ বিপ্লব ঘটিয়ে দেবো। আমি বেঁচে না থাকলেও কারোই কিছু এসে যাবে না। অথচ, প্রতিটি ক্ষণেই নিজেকে বুঝিয়ে যেতে হবে আমার বেঁচে থাকা কতটা জরুরী। শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দিতে পারবো না বলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যেতে পারবো না বলেই কি আমার জীবন ব্যার্থ? আমার সমস্ত শিক্ষা, সমস্ত যোগ্যতা সবই কি ব্যার্থ জননাঙ্গের কাছে? শুধুমাত্র প্রজননই বুঝি আমার সমস্ত সাফল্যের মাপকাঠি? এসবের কিছুই আমি বিশ্বাস করি না হয়তো, শুধুমাত্র জনক হওয়াই জীবনের স্বার্থকতা নয় তাও আমি খুব ভালোমতোই বুঝি। কিন্তু এও তো সত্যি, যৌনতার বাঁধনে, সন্তানের বাঁধনে কাউকে বাঁধতে না পারলে একলা জীবন কাটানো ছাড়া অন্য কোন উপায়ই নেই। বন্ধু? খুব ঘন ঘন বন্ধু পাল্টানোর স্বভাব আমার। বেশিদিন কারো সাথেই আমার খাতির টেকে না। 


প্রচন্ড স্বার্থপর আমি? হয়তো বা। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় সমস্যা হলো আমার অভিমান। এমন প্রচন্ড অভিমান আমার, যে নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটির সামান্য অবহেলাতেও একেবারে বহুদূরের মানুষ হয়ে যাই কিছু দিনের ব্যাবধানে। সেই আমার নিঃসঙ্গ থাকা ছাড়া উপায় কি? মাঝে মাঝে ভাবি, যদি যথেষ্ঠ পুরুষালী হতাম, তবে কি আমার এমন তীব্র অভিমান থাকতো না? মেয়েলী হওয়াটাই কি আবেগের এমন তীব্রতার একটা কারণ? অথচ সবসময়, এমনকি যখন একা একা ভীড়ের পথে হেঁটে বেড়াই, তখনও মনে হতে থাকে, “যদি কেউ পাশে থাকতো!!”  অথচ এই আমার কখনোই খুব বেশি বন্ধু ছিলো না, এই আমি বরাবরই একা। এতদিনেও নিঃসঙ্গতায় অভ্যস্ত হতে পারি না কেন? যদি আমি বিষমকামী হতাম, যদি আমার সঙ্গিনী থাকতো, তবে কি কখনো কোনদিন আমি নিসঃঙ্গতায় ভুগতাম না? অথবা যদি এখনই কখনো আমার কোন সঙ্গী, ধরি জীবনসাথী জুটে যায়, সে পারবে আমার নিঃসঙ্গতা পুরোপুরি দূর করে দিতে? কোন মানুষের পক্ষেই কি তা সম্ভব? বেশিক্ষণ অনেক মানুষের সাথে থাকলে, একা হওয়ার সুযোগ না পেলে আমি হাঁপিয়ে উঠি। অথচ এই আমার প্রচন্ড ভয় হয়, ভবিষ্যতের নিঃসঙ্গ জীবনের কথা ভেবে। না, শুধুমাত্র যৌনতার অভাববোধ আমাকে কক্ষনো কাবু করতে পারে না। কিন্তু শুন্য বাড়িতে একা একা মরে পড়ে থাকার ভয় আমাকে ভীষণ দুর্বল করে দেয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?