২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গন বাট নট ফরগটেন

ভালোবাসার এক কমপ্লিকেটেড কাহিনীর উৎকৃষ্ট উদাহরন গন বাট নট ফরগটেনমুভিটি। এই কমপ্লিকেসি বাইরের নয়, ভিতরের। যা অন্যকে বোঝানো অসম্ভব আর নিজেই এর সমাধান বের করা দুঃসাধ্য।

ড্রু (আরন অর) একজন ফরেস্ট রেনজার যে মার্ক (মেথিউ মনটেগোমারি) কে খুঁজে পায় এক ঝরনার পাশে যেখন সে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে পিছলে পড়ে। ড্রু তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং তার সেবা সুশ্রষা করতে থাকে। জ্ঞান ফিরে পেতেই দেখা যায় মার্ক তার সব পুরনো স্মৃতি ভুলে বসে আছে। ড্রু মার্ককে পছন্দ করে খুব তাই তার যত
œ নিতে থাকে, তাকে সময় দিতে থাকে এবং তার সময়গুলো উপভোগ্য করে তোলার জন্য যা যা করার দরকার তার সবটুকুই করে। ড্রু মার্কের আরো কাছে আসতে চায় এবং এই ব্যাপারে সে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। 

ডাক্তার তাকে জানায় মার্কের এখন যে অবস্থা তাতে তার শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। এখন তার হাসপাতালে থাকা আর না থাকা সমান কথা। মার্কের এখন যা দরকার তা হলো একটা পারিবারিক পরিবেশে সময় কাটানো। পরিবারের সদস্যদের রেগুলার জীবন আচরনে তার স্মৃতি দ্রুত ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ড্রু তার বাসায় এই কথা আলোচনা করলে তার ভাবী তাকে বোঝায় যে মার্কের কাছ থেকে সেই জিনিস আসা করা কখনই ঠিক হবেনা যা মার্ক নয়। তুমি একজন সমকামী বলে মার্কও সমকামী হবে তা যুক্তিহীন। তুমি কষ্ট পাবে। ড্রু প্রচন্ড মন খারাপ করলে তারা রাজী হয়।
 

পরদিন ড্রু মার্ককে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে নিয়ে আসে এবং আসতে আসতে বন বাদাড় ঘুরিয়ে আনে। যেখানে সে মার্ককে বলে এই বনের এক প্রথা আছে যে প্রথা অনুযায়ী পাহাড় থেকে পড়ে বেঁচে যাওয়া ব্যাক্তিকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নিজ হাতে একটা চারা রোপন করতে হয়। মার্ক নিজের পরিশ্রমে একটা চারা রোপন করে প্রকৃতিকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য। বাসায় এসেও গোছালো ড্রু মার্ককে যথেষ্ট হোমলি সময় উপহার দিতে থাকে। মার্ক অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার পুরনো স্মৃতি দুঃস্বপ্নের মত তার প্রতিটা রাতের ঘুম নষ্ট করতে লাগলো। সেদিনও তাই হলো, ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর মার্ক সিড়ি ভেঙে নিচে এসে দেখে ড্রু ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। কিছুটা আস্বস্ত হয় সে এবং ড্রুর কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। দুজন পাশাপাশি বসে গল্প করতে থাকে এবং একটা দুর্বল মুহুর্তে দুজন কাছাকাছি, খুব কাছাকাছি আসে, কিস করে। কিন্তু হঠাৎ মার্ক উঠে চলে যায়, ধীরে ধীরে ধীর পায়ে তার রুমের দিকে। পিছনে হতবাক উৎসুক চোখে তাকিয়ে ড্রু।
 

সকাল হতেই ড্রু অফিসের কাছে বের হয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় মার্কের জন্য সমস্ত ইন্সট্রাকশন একটা চিরকুটে লিখে রেখে যায়। ফিরে এসে মার্ক এমন আচরন করতে থাকে যেন রাতে কিছুই হয়নি, মার্কও তাই। দুজনই সহজ এবং স্বাভাবিক। ড্রু তাকে লেকে বেড়ানোর জন্য বললে মার্ক হাসতে হাসতে রাজি হয়ে যায়। দুজন মিলে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ায়া সারাদিন।
 

ড্রু মার্ককে তার বাবা মায়ের ক্যাফে সপ দেখাতে নিয়ে আসে। ড্রু জানায় তার বাবা মা দুজনেই তাদের মানুষ করতে এত সময় ব্যায় করতো যে নিজেদের জন্য সময়ই বের করতে পারতো না, তাই একদিন সে দুজনকে একটা বোট ড্রাইভে লেকে পাঠায় কিন্তু একটা এক্সিডেন্টে তারা আর ফিরে আসেনি। সেখানে কোন উদ্ধার কর্মী ছিলোনা যা তার বাবা মায়ের মৃত্যুর অন্যতম কারন। তাই তারা দুই ভাই সে আর পল ফরেস্ট রেঞ্জারের জব নিয়ে আজ এখানে, যেন আর কারো জীবন কখনো বিপন্ন না হয়। ড্রু তার বাবা মায়ের এই ক্যাফে আবারো চালু করতে চায়। জড়িয়ে রাখতে চায় বাবা মায়ের স্মৃতি জীবন্ত করে সবসময় নিজের সাথে।
 

বাসায় ফিরে দুজন এক সাথে রান্না করে, খেয়ে দেয়ে ফায়ারপ্লেসের সামনে কথা বলার সময় মার্ক জানায় যে তার জীবনে ড্রু এর উপস্থিতিতে সে অনেক হ্যাপি। দুজন দুজনের অনেক কাছে চলে আসে এবং দীর্ঘ সময়ের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের পর প্রথমবারের মত একজন স্ট্রেইট এবং একজন সমকামী পুরুষ খেলায় মত্ত হয়। এরপর যেই সকাল তাদের জীবনে আসে তা এক নতুন রূপ নেয়। দুজন দুজনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ডাক্তারের সাথে রেগুলার চেকাপের দরুন মার্ক জানতে পারে ড্রু একজন সমকামী। ডাক্তার তাকে আরও বলে দেখ মার্ক ড্রু সম্বন্ধে আমি তোমার ফিলিংস বুঝতে পারছি কিন্তু তোমার একটা অতীত আছে যেখানে তোমাকে ফিরে যেতে হবে, তুমি কি সেই জার্নির জন্য নিজেকে তৈরী করছো?
 

মার্ক ড্রু এর সাথে অগনিত অন্তরঙ্গ মুহুর্ত কাটাতে থাকে। একদিন সকালে পল মার্কের এক্সিডেন্ট স্পটের পাশে একটা প্রাইভেট কার বিদ্ধস্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং সেই সূত্র ধরে তার পরিবারকে মার্কের ব্যাপারে অবহিত করে। তারা এসে মার্ককে নিয়ে যায়। ড্রু মার্কের সাথে অভিমান করে আউট অফ দ্যা নেটওয়ার্ক থাকাতে পল মার্কের এই চলে যাওয়া ড্রুকে জানাতে পারেনা। মার্ক তার পুরনো লাইফে ফিরে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে জানতে পারে যে সে একজন সমকামী ছিলো। তার শুধুমাত্র এনগেজমেন্ট হয়েছিলো ক্যাথরিন এর সাথে। যখন ক্যাথরিন জানতে পারে সে একজন সমকামী তখন সে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মার্ক তার সমকামী লাইফের প্রতি সকলের ঘৃণার জবাবে আত্মহত্যা করতে পাহাড়ে চড়ে যেখানে ড্রু তার জীবন বাঁচায়। ড্রু কখনই একজন স্ট্রেইটের জন্য এত কিছু করতো না, তবে কেন সে মার্কের জন্য এত কিছু করেছে কারন মার্ক তাকে কিস করেছিলো এবং সমকামী জানতে পেরেই ড্রু মার্কের কাছে আসার চেষ্টা করেছে। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর মার্ক ক্যাথরিন কে বলে আমি যা ছিলাম এখনও তাই আছি, আমি আমাকে বদলাতে পারবোনা। আমি মার্ককে ভালোবাসি এবং তার সাথেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

ঘরের সামনে নতুন একটা চারা দেখে মার্ক বুঝতে পারে বাড়িতে কেউ এসেছে কিন্তু সে যে মার্কই হবে তা সে কখনো চিন্তা করেনি। মার্ককে ছাড়া তার এক একটা দিন কি পরিমান একাকিত্ব আর কষ্টে কেটেছে তা সে ছাড়া আর কেউই জানেনা। মার্ক ড্রু এর কাছে ক্ষমা চায় তাকে না বলে বিদায় নেয়ার জন্য। তার অতীত জানার তাগিদ তাকে দ্রুত এই জায়গা ছাড়তে প্ররোচিত করেছে। দুজন দুজনকে আদরে এবং পরম বিশ্বস্ততায় আপন করে নেয়।
 



মার্ক জানতে পারে ড্রু ফরেস্ট রেঞ্জারের জব ছেড়ে দিয়েছে এবং তার বাবা মায়ের রেস্টুরেন্ট ওপেন করেছে পুনরায়। মার্ক বলে কিন্তু তুমি রাধতে জানোনা, ড্রু বলে আমি জানি আমি রাধতে পারিনা, কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমার জীবনের সবচাইতে সুস্বাদু খাবারের স্বাদ আমি শুধু তোমার হাতের রান্নাতেই পেয়েছি। আর আমি এও জানি তুমি অনেক বড় একজন কুক। তাহলে আর চিন্তা কিসের, দুজনে মিলে চালাবো আমাদের স্বপ্নের এই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট এবং গড়ব সেই জীবন যার স্বপ্ন এতদিন শুধু ঘুমন্ত দুটি চোখের পাতাতেই ছিলো।

ঊন্ধুরা তোমরা যারা যারা এই মুভিটা দেখনি তারা চরম মিস করেছো। তাই এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনি দেখে নাও গন বাট নট ফরগোটেননামক চরম রোমান্টিক এবং সেনসেশাস এই মুভিটি। 

মুভিটির পরিচালাক- মাইকেল ডি.আকরস
প্রধান চরিত্রে আছেন- ম্যাথিউ মন্টগোমেরি, আরন অর
মুভিটি মুক্তির সাল- ২০০৩
মুভিটির দৈর্ঘ্য-৯৩ মিনিট
ভাষা- ইংলিশ
আই.এম.ডি.বি তে রেটিং- ৫.৮/১০

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?