২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

লাইফ উইদাউট লাভ – ১৩

আমাদের বাড়ির নিচের ব্যাড়ের নিচ থেকে শুরু হইছে বিল। আমাদের এলাকায় ফসলের মাঠকে বলা হয় বিল। ব্যাড়ের নিচের বিলে নাড়া গাদা করে রাখা হয়েছে। আটি বেঁধে রাখা নাড়ার উপর আমি বসেছি। আমার পাশের নাড়ার আটির উপর বসেছে দ্বীপ্ত ভাইয়া। আমাদের মাথার উপর বিকেলের মিঠে রোদ। দ্বীপ্ত ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকিয়ে আছি দক্ষিণের বিলের দিকে। এই বিল ধরে হেঁটে গেলে পাথর খালির খাল পড়বে। সেই খাল পেরিয়ে কিলোমিটার খানের পরে ওয়াপদার রাস্তা। তার পরে বড় গাঙ। সেই গাঙের অন্য পারে সুন্দরবন। আমাদের ভাষায় বাঁদা। দ্বীপ্ত ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকলেন, 
দ্বীপ্তঃ শুভ্র
আমিঃ জ্বি, বলেন।
 
আমার দিকে তাকাবে।
 
আমিঃ তাকালাম। বলেন।
 
দ্বীপ্তঃ কি হয়েছে তোমার?
আমিঃ কিছু হয় নাই। আপনি তুই থেকে তুমিতে উঠে গেছেন কেন?
 
দ্বীপ্তঃ তুমিও তুমি থেকে আপনি তে উঠে গেছো।
 
আমিঃ তুমি বললেই কি আর আপনি বললেই বা কি!
দ্বীপ্তঃ সত্যি করে বলবে কি হয়েছে তোমার?
আমিঃ কিছুই হয় নাই।
 
দ্বীপ্তঃ আমি গত রাতের ঘটনার জন্য মাফ চাইছি তোমার কাছে।
 
আমিঃ মাফ চাচ্ছেন কেন?
দ্বীপ্তঃ দেখ, যা ঘটেছে কেন ঘটেছে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি নিজে থেকে এসব চাইনি
আমিঃ তাহলে করলেন কেন?
দ্বীপ্তঃ সেজন্যই মাফ চাচ্ছি।
 
আমিঃ চুমু খাওয়ার জন্য কেউ মাফ চায়! আমি তো এটাতে কোন অপরাধ দেখি না।
 
দ্বীপ্তঃ তোমার বয়স অল্প। তুমি কি বুঝবে সব কিছু।
আমিঃ বুঝিয়ে বললেই বুঝবো। মাথা খারাপ না আমার। প্রতিবার ফার্স্ট হই।
 
দ্বীপ্তঃ এটাকে সমকামিতা বলে। এটা ধর্মে নিষিদ্ধ। ইসলামে নিষিদ্ধ পৃথিবীর সব ধর্মে নিষিদ্ধ।
 
আমিঃ জানি।
দ্বীপ্তঃ জানো?
আমিঃ হ্যাঁ।
 
দ্বীপ্তঃ তোমার ভেতর পাপবোধ কাজ করছে না।
আমিঃ না।
 
দ্বীপ্তঃ কেন না?
 
আমিঃ কারণ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
দ্বীপ্তঃ এত দ্রুত কিভাবে আমাকে ভালোবেসে ফেলবে তুমি?
আমিঃ আমি জানিনা।
 
দ্বীপ্তঃ এটাকে ভালোবাসা বলে না শুভ্র। এটা মোহ। মোহ কেটে গেলে তখন তোমার মনে হবে আমি পৃথিবীর সবথেকে খারাপ একটি মানুষ। আমি তোমাকে পাপের পথে টেনে এনেছি।
 
আমিঃ মনে হবে না।
 
এটা তো কথার কথা।
 
আমিঃ আপনি পাপবোধে ভুগছেন?
দ্বীপ্তঃ হ্যাঁ।
আমিঃ জাহান্নামের আগুনে পোড়ার ভয় পাচ্ছেন?
দ্বীপ্তঃ সমকামীদের জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে এই কথা আল কোরআনের কোথাও লেখা নেই। কোরআনে বলা হয়েছে তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হোক।
 
আমিঃ তাহলে কিসের পাপবোধ?
দ্বীপ্তঃ তুমি আমার বন্ধুর ছোট ভাই। প্রিয় বন্ধুর ছোট ভাই। তোমাকে আমি কখনো কোন ভূল পথে টেনে নিয়ে যেতে পারিনা।
 
আমিঃ আপনি কোথাও আমাকে টেনে নিচ্ছেন না। আমি নিজেই নামতে চাচ্ছি।
 
দ্বীপ্তঃ আচ্ছা তুমি কি কখনো প্রেম করেছ আগে?
আমিঃ না।
 
দ্বীপ্তঃ মেয়েদের প্রতি আকর্ষন বোধ করো?
আমিঃ কিরকম আকর্ষন?
দ্বীপ্তঃ এই সেক্সুয়াল ফিলিংস!
আমিঃ হুম।
দ্বীপ্তঃ ছেলেদের প্রতি?
আমিঃ আগে করতাম না। এখন করি। আপনাকে দেখার পর থেকে।
দ্বীপ্তঃ কিন্তু কেন?
আমিঃ আমি জানি না।
 
দ্বীপ্তঃ তুমি আমাকে সমকামিতার জগতে টেনে নামাতে চাও?
আমিঃ না। একতরফা কিছুই হয় না। গতরাতে আমরা দুজনেই চুমু খেয়েছি। কেউ বাঁধা দেয়নি। আমাদের দুজনের সায় ছিলো।
 
দ্বীপ্তঃ তুমি তো বেশ কথা বলতে পারো।
আমিঃ বোবা ছাড়া সবাই কথা বলতে পারে।
 
দ্বীপ্তঃ আমি গুছিয়ে কথা বলার কথা বলছি।
 
আমিঃ কথা কিভাবে গোছায়?
দ্বীপ্তঃ বাপস! আমি তোমার সাথে কথায় পারবো না। যাও তোমার জিত।
 
আমিঃ হার জিত দিয়ে আমি কি করবো।
 
দ্বীপ্তঃ তুমি কি আমার উপর ক্ষেপে আছো?





আমিঃ না।
 
দ্বীপ্তঃ রেগে আছো?
আমিঃ না।
দ্বীপ্তঃ কষ্ট পেয়েছ?
আমিঃ না।
 
দ্বীপ্তঃ কাল সারা রাত ঘুমাও নি কেন?
আমিঃ ঘুম আসে নি তাই।
কাঁদছিলে কেন?
আমিঃ কে বললো?
দ্বীপ্তঃ রহিম বলেছে।
 
আমিঃ মিথ্যা বলার কি দরকার। তুমিও তাহলে সারারাত জেগে ছিলে।
 
দ্বীপ্তঃ হুম।
 
আমিঃ এরকমটি কেন করলে?
 
দ্বীপ্তঃ আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
 
আমিঃ এখন বুঝেছ?
দ্বীপ্তঃ জানিনা। তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
আমিঃ নিজেকেই জিজ্ঞেস করো। এবার বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা।
 

দ্বীপ্ত ভাইয়া উত্তর দেয়ার আগেই ব্যাড় থেকে ফুফুর গলা ভেসে এলো, ছোট খোকা বাড়ি আয় তো। মজিদ সরদারের বাড়ি যাতি হবে। ধাক্কুরি (জলদি) আয়। আমার মন এখন ভালো। আমি ছুটে গেলাম। পেছন ফিরে একবারো তাকালাম না। কিন্তু আমি জানি, একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক চোখে। যে চোখে আমি ভালোবাসা দেখেছিলাম। 

কোন মন্তব্য নেই:

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?